Advertisement
০২ মে ২০২৪
পড়ল সূচক • নজির ভাঙা শেয়ার বিক্রি বিদেশি লগ্নি সংস্থার • টাকা ২০ মাসের তলানিতে

অবশেষে ম্যাট নিয়ে কমিটি জেটলির

বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারত থেকে কি পাততাড়ি গুটোচ্ছে? ভারতের শেয়ার বাজারে ওই সব সংস্থার টানা বিক্রির বহর দেখে শেয়ার বাজার মহলে এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর, এই পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের আস্থা ফিরে পেতে ন্যূনতম বিকল্প কর বা ম্যাট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ার কথা বৃহস্পতিবার জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারত থেকে কি পাততাড়ি গুটোচ্ছে? ভারতের শেয়ার বাজারে ওই সব সংস্থার টানা বিক্রির বহর দেখে শেয়ার বাজার মহলে এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর, এই পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের আস্থা ফিরে পেতে ন্যূনতম বিকল্প কর বা ম্যাট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ার কথা বৃহস্পতিবার জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ দিন রাজ্যসভায় তিনি বলেন, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ পি শাহের নেতৃত্বে গড়া এই কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট দেবে। এ দিকে গত চার দিনে ভারতের বাজারে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। তার মধ্যে শুধু বুধবারই তারা বিক্রি করেছে ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৮০০ কোটি টাকার শেয়ার, যা গত দেড় বছরে একদিনের বিক্রি হিসেবে সবচেয়ে বেশি।

প্রসঙ্গত, শেয়ার বাজারে লগ্নিকারী বিদেশি সংস্থার বকেয়া মূলধনী লাভের উপর ২০ শতাংশ হারে ম্যাট বসানো নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। গত ৩ বছর তারা এই খাতে কর দেয়নি। সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছ থেকে ম্যাট জমা দেওয়ার নির্দেশ পায় তারা। এর জেরেই ক্ষুব্ধ বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি টানা শেয়ার বিক্রি করে চলেছে ভারতের বাজারে। আতঙ্কিত লগ্নিকারীদের ক্ষোভ মেটাতেই গত সপ্তাহে চলতি অর্থবর্ষ থেকে ম্যাটে রেহাই দেন জেটলি। কিন্তু বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা পুরনো বকেয়া কর মেটানোর দায় থেকে রেহাই দেননি তাদের, যে কারণেই এই বাঁধ ভাঙা বিক্রি। ভারতের শেয়ার বাজারের মূল চালিকাশক্তি বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির আতঙ্ক কাটাতেই এ দিন কমিটি গড়ার কথা জানালেন জেটলি।

বৃহস্পতিবারও এই সব সংস্থার শেয়ার বিক্রির জেরে পড়েছে বাজার। আগের দিন ৭২৩ পয়েন্ট পড়ার পর এই দিন ফের সেনসেক্সের পতন হয়েছে ১১৮.২৬ পয়েন্ট। এই নিয়ে মাত্র তিন দিনের লেনদেনেই সূচক পড়ল ৮৯১.৪৮ পয়েন্ট। এই দিন বাজার বন্ধের সময়ে তা এসে থিতু হয় ২৬,৫৯৯.১১ অঙ্কে।

বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির শেয়ার বেচে ভারতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হিড়িকেই এ দিন ডলারে টাকার দামও নেমে এসেছে গত ২০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। বাজার বন্ধের সময়ে ৬৯ পয়সা পড়ে যায় টাকা, ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৪.২৩ টাকা। আমদানিকারী ও ব্যাঙ্কগুলির বাড়তি ডলারের চাহিদাও টাকার দাম পড়ার অন্যতম কারণ।

ভারতের শেয়ার বাজারের রমরমা এসেছিল বিদেশি লগ্নি সংস্থার বিনিয়োগের দৌলতেই। ওই সব বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থা বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এনে ভারতের বাজারে লগ্নি করে। ভারত বিশ্বায়নের পথে হাঁটার পর থেকেই তারা এ দেশের বাজারকে লগ্নির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেয়। ভারতকে পছন্দ করার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধি, যা এক সময়ে বার্ষিক ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।

বছর আটেক আগে বিশ্ব জোড়া মন্দার সময়েও কিন্তু বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থারা ভারতের বাজার ছাড়েনি। হালে তাদের শেয়ার বিক্রির বহর দেখে যে-প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তা হল, ওই সব সংস্থা কি ভারত থেকে লগ্নি তুলে নিচ্ছে? তবে তাদের শেয়ার বিক্রি বাড়লেও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এখনও মনে করেন না যে, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভরতে থেকে বিনিয়োগ গুটিয়ে নিতে চলেছে। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘সব বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার চরিত্র কিন্তু এক নয়। কিছু কিছু সংস্থা আছে, যাদের নীতিই হল স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করা। বিশেষ করে ‘হেজ ফান্ডগুলি’ এই শ্রেণিতে পড়ে। তারা লগ্নির থেকে ফাটকাতেই বেশি বিশ্বাসী। কিন্তু আরও কিছু বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থা রয়েছে, যাদের নীতি হল দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা। তারা কিন্তু এই বাজারেও শেয়ার বেচেনি। সুতরাং বিদশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারত থেকে লগ্নি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করি না।’’

অজিতবাবুর মতো একই মত পোষণ করেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির বহর দেখে। এখনও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি বিশ্বের অন্য যে-কোনও দেশের থেকে বেশি। তার উপর হালে চিনের আর্থিক বৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস, ওই সব সংস্থা লগ্নি করার জন্য ভারতের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। যারা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে, তারা ভারতের বাজারে খুব শীঘ্রই ফের লগ্নি শুরু করবে বলে আমার মনে হয়।’’

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ কমালে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে ওই দেশে লগ্নি করতে পারে, এই মতেও বিশ্বাসী নন অজিতবাবু বা কমলবাবুর মতো প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ। অজিতবাবু বলেন, ‘‘আমেরিকায় সুদের হার এক আধ শতাংশ কমল কি না, সেটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। তার উপর ভিত্তি করে বিদেশি সংস্থাগুলি লগ্নির ক্ষেত্র পরিবর্তন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’’

এই দিন টাকার দাম আরও পড়ে যাওয়ার ফলে শেয়ার বাজারে যে-আশঙ্কা অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে তা হল, অবস্থা এই রকম চলতে থাকলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার না-ও কমাতে পারে। আগামী মাসেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি পর্যালোচনায় বসছে। তবে ম্যাট কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার পথে এগোবে। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে এ দিন জেটলি আশ্বাস দিয়েছেন। এই নতুন পরিস্থিতিতে বিদেশি লগ্নিকারীরা আজ কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানান, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে শেয়ার বাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE