পড়ে থাকা অ্যাকাউন্ট চালু
দীর্ঘ দিন ধরে সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন না হলে তাকে ‘ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্ট’ হিসাবে চিহ্নিত করে ব্যাঙ্ক। অ্যাকাউন্ট কত দিন বিনা লেনদেনে পড়ে থাকলে তাকে ডরম্যান্টের তকমা দেওয়া হবে, সেটা ব্যাঙ্ক বিশেষে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ফের চালু করতে হলে আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত করতে হবে। পূরণ করতে হবে কেওয়াইসি প্রক্রিয়া। আবেদন মঞ্জুর হলে, তখনই ওই অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা দিতে হবে বা কিছু টাকা সেখান থেকে তুলতে হবে। তার পরেই অ্যাকাউন্ট ফের চালু হয়ে যাবে।
ওম্বাডসম্যান
ব্যাঙ্কের সঙ্গে গ্রাহকের কোনও ব্যাপারে বিরোধ বাধলে, তার সুরাহার জন্য গ্রাহক ওম্বাডসম্যানের দফতরে আবেদন করতে পারেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে অবশ্যই অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। তাঁরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেটা যদি না-হয় বা তাঁরা যদি সমস্যা না-মেটাতে পারেন, তখন ওম্বাডসম্যানের দফতরে আবেদন করা যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরেই অবস্থিত ব্যাঙ্কিং ওম্বাডসম্যানের দফতর। যোগাযোগ করতে হয় সেখানেই।
নোট বদলের নিয়ম
টাকা খুব ময়লা হয়ে গেলে কিংবা ছিঁড়ে গেলে, আমজনতা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ওই পুরনো নোট পরিবর্তন করে নতুন নোট পেতে পারেন। ময়লা নোট বা সামান্য ছেঁড়া (কিন্তু পুরোটাই রয়েছে) নোট সরাসরি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বদল করা যায়।
কিন্তু নোটের কোনও অংশ যদি খোয়া যায়, তা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘নোট রিফান্ড রুল’-এর সাহায্য নিতে পারেন গ্রাহক। নোট রিফান্ড রুল মোতাবেক তা পাল্টানোর সময় নোটের অবস্থা অনুযায়ী কতটা মূ্ল্য ফেরত পাওয়া যাবে, তা নির্ধারিত হয়। সেই হিসেবে নোটের পুরো মূল্য বা অর্ধেক মূল্য ফেরত পাওয়া যেতে পারে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে আদৌ কোনও মূল্য না-ও ফেরত পেতে পারেন গ্রাহক।
কোন ক্ষেত্রে কতটা মূল্য ফেরত পাওয়া যেতে পারে, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভাল—
• যদি নোটের ৬৫% অথবা তার বেশি অংশ অবশিষ্ট থাকে, তা হলে পুরো মূল্যের নতুন নোটই পেয়ে যাবেন গ্রাহক।
• যদি ৪০% থেকে ৬৫ শতাংশের কম অবশিষ্ট থাকে তাহলে অর্ধেক মূল্য ফেরত পাবেন।
• ৪০ শতাংশের কম অবশিষ্ট থাকলে কোনও মূল্যই ফেরত পাওয়া যাবে না।
মনে রাখবেন, নোটের যে অংশটা আপনার হাতে রয়েছে, তাতে নম্বর প্যানেল বা সিকিউরিটি চিহ্নগুলি না থাকলেও, নোটের মূল্য ফেরত পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
নালিশ জানাতে
ব্যাঙ্কের কোনও পরিষেবা নিয়ে হয়রানির শিকার হলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য অভিযোগ জানানোর অনেক জায়গা রয়েছে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সেখানে পৌঁছনো তেমন কঠিন কিছুও নয়। জেনে রাখুন—
• প্রথমে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা দফতরে।
• সেখনে সুরাহা না হলে রিজার্ভ ব্যঙ্কের কাছ যেতে পারেন।
• সাধারণ ভাবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের দু’টি বিভাগ গ্রাহকদের অভিযোগ শুনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করে। এক, কাস্টমার এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন কমিশন। দুই, ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক গ্রিভান্স।
• ওই দুই বিভাগের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানানো যায়।
• পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ফল না-পেলে, ব্যাঙ্কিং অম্বুডসম্যানের দ্বারস্থ হতে পারেন।
• ওম্বুডসম্যানের দফতর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরে অবস্থিত। গ্রাহক সরাসরি লিখিত ভাবে সেখানে অভিযোগ জানাতে পারেন।
• অভিযোগ জানানো যেতে পারে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর গ্রাহক গ্রিভান্স সেলেও।
• কোথাও প্রতিকার না-পেলে গ্রাহক শেষে আদালতে যেতে পারেন
• তবে মনে রাখবেন, সমস্যা যা-ই হোক, সবার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা বিভাগে লিখিত ভাবে নালিশ জানাতেই হবে। না হলে কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা ওম্বাডসম্যান, কেউই অভিযোগ গ্রহণ করবে না।
পাঠকের প্রশ্ন
প্রঃ ছোট ওষুধের দোকানের ই- ভেষজ পোর্টাল কি জিএসটি-র আওতায় নথিভুক্ত করতে হবে? ব্যবসার অঙ্ক ২০ লক্ষ টাকার নীচে।
সুদীপ্ত সেন
হ্যাঁ, জিএসটি-র আওতায় নথিভুক্ত হতে হবে ওই পোর্টালটিকে। কারণ ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য কোনও ছাড় নেই নতুন এই কর ব্যবস্থায়। তবে ওষুধের ছোট দোকানটি যদি ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত না হয় এবং সেটির ব্যবসা বছরে ২০ লক্ষ টাকার নীচে থাকে, তা হলে নথিভুক্ত না-হলেও চলবে।
পরামর্শদাতা: তিমির বরণ চট্টোপাধ্যায়
প্রঃ লিকুইড ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
শুভজিৎ কাপরি
লিকুইড ফান্ডের বৈশিষ্ট্য—
• খুব কম মেয়াদের জন্য টাকা জমানোর পক্ষে আদর্শ।
• তহবিল লগ্নি করা হয় স্বল্প মেয়াদের ঋণপত্রে।
• সে ক্ষেত্রে সিকিউরিটির মেয়াদ হতে পারে ৯১ দিন পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ ফান্ড ম্যানেজারই বাজারের ঝুঁকি ও ঝামেলা এড়াতে লিকুইড ফান্ডের মেয়াদ রাখেন ৬০ দিনের মধ্যে।
• চাইলেই খুব কম সময়ের মধ্যে ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়া যায়। যেমন, সকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন জানালে সেই দিনই টাকা ফেরতের সুযোগ দেয় বেশ কিছু সংস্থা। তার পরে আর্জি জানালে টাকা আসে পরের দিন।
• যেহেতু মেয়াদ হয় খুব কম দিন, তাই সুদের হেরফেরের খুব বেশি প্রভাব এই ফান্ডে পড়ে না। যে কারণে সব ধরনের ফান্ডের মধ্যে এদের ঝুঁকি সবচেয়ে কম। ফলে খুব কম সময়ের (৭ দিন থেকে ২ মাস) জন্য টাকা রাখতে চাইলে, এই ফান্ড আদর্শ।
• বাড়তি টাকা বাড়িতে নগদে বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে না-রেখে এতে জমানো তুলনায় লাভজনক।
• আবার ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের তুলনায় কিছুটা বেশি রিটার্ন মেলে।
• বাজারের উপর নির্ভরশীল বলে ঝুঁকি থাকেই। রিটার্ন নিয়ে কখনওই গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।
ব্যবসায়ীরা টাকা জমার রাখার জন্য লিকুইড ফান্ড ব্যবহার করে থাকেন খুব বেশি। কারণ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট জমা থাকা টাকার উপর কোনও সুদ পাওয়া যায় না। আবার তাঁদের এমন জায়গায় টাকা রাখতে হয়, যেখান থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য প্রয়োজন পড়লেই তোলা খুব সহজ হয়। কিছুটা আয় ও সহজে তোলা, লিকুইড ফান্ডে দুই সুবিধাই পান তাঁরা।
• সময়ের আগে ফান্ড ভাঙালে সাধারণত এগ্জিট লোড লাগে না।
প্রঃ আমি গত ২০০৬ সাল থেকে এসআইপি মারফত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করে আসছি। মোট আটটি প্রকল্পে টাকা জমাই এখন। কোনওটায় ২,০০০, কোনওটায় ১,০০০ টাকা করে। ভাল রিটার্নও পাচ্ছি। আমার প্রশ্ন হল—
লগ্নির নিরাপত্তার খাতিরে আমার কি ফান্ডের সংখ্যা আরও কমানো উচিত? কারণ আমার মনে হয় স্মল ক্যাপ ফান্ড খুব বেশি কিনে ফেলেছি।
পার্থ সেন, দুর্গাপুর
আপনার ৮টি এসআইপি-ই যে ভাল রিটার্ন দিচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আমার মনে হয় একই রকমের অনেকগুলি ফান্ড কিনে ফেলেছেন আপনি। যেটা সঞ্চয় আরও বেশি বাড়ার পথে হয়তো কিছুটা বাধা হয়ে উঠছে। ফলে পোর্টফোলিও একটু মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য দেখুন ফান্ডগুলোর মধ্যে কোন দু’টো সব থেকে কম রিটার্ন দিচ্ছে। সেই দু’টো বন্ধ করে দিন। ফান্ডের দুনিয়াতেও এক একটি প্রকল্পে এক এক রকম ভাবে রিটার্ন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সব চেয়ে বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে টাকা খাটানোর চেষ্টা করা ভাল।
পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে
পরামর্শের জন্য লিখুন:
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।
ই-মেল: bishoy@abp.in
ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না