— ফাইল ছবি
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের হাতে টোকেন ধরিয়ে শুক্রবার বলেছিলেন, ‘‘কাল আসুন। টাকা পাবেন।’’ ফলে শনিবার ব্যাঙ্কের দরজা খুলতে না-খুলতেই ওই গ্রাহকেরা হাজির হন। তবে এ দিনও ফিরতে হল একরাশ ক্ষোভ আর হতাশা নিয়েই। ইয়েস ব্যাঙ্কের ওই শাখা থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, ‘‘আজ নয়। সোমবার আসুন।’’ এই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন দিল্লিতে ইয়েস ব্যাঙ্কের কিছু শাখার গ্রাহেকরা। তবে দেশ জুড়েও দেখা গিয়েছে শুক্রবারেরই ছবি। এটিএমের সামনে সেই লম্বা লাইন। বহু মেশিনে টাকা না-থাকায় গ্রাহকের সেই উদভ্রান্ত মুখে ঘরে ফেরা। ব্যাঙ্কে শাখাগুলিতে সেই ভিড়, উত্তেজনা, হা-হুতাশ। এর মধ্যে কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে, গ্রাহকদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের অঞ্চলে ইয়েস ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে চেক মারফত ৫০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
গ্রাহকদের পাশাপাশি এ দিন ইয়েস ব্যাঙ্কের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলিও। কর্মীদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিইএ) এবং অফিসারদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন (আইবক) বেসরকারি ব্যাঙ্কটিকে বাঁচাতে সরকারি ব্যাঙ্ক এসবিআইয়ের টাকা ঢালার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রশ্ন তুলেছে, কেন্দ্র লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচছে আর লোকসানে চলা বেসরকারি সংস্থাকে চাঙ্গা করতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার টাকা ব্যবহার করছে কেন? সরকারকে বিঁধে দাবি করেছে, ইয়েস ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতে সরকারি ব্যাঙ্কের টাকাই যদি খরচ করতে হয়, তা হলে বরং সেটিকে অধিগ্রহণ করুক কেন্দ্র। এই সমস্যার জন্য দায়ী অফিসারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবিও জানিয়েছে তারা।
আইবকের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘এটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মুনাফার বেসরকারিকরণ ও বেসরকারি সংস্থার লোকসানের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ। এ রকম আরও নজির রয়েছে।’’ এআইআবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর এবং সাধারণ সম্পাদক সিএইচ বেঙ্কটাচলমের অভিযোগ, ‘‘ইয়েস ব্যাঙ্কে কার্যত টাকা লুট হয়েছে। অনিয়ম বিপুল। যেমন টাকা সরানো, তথ্য গোপন। ফলে অনুৎপাদক সম্পদ বেড়েছে, মূলধন বেরিয়ে গিয়েছে। সব হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নাকের ডগায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই লুট হওয়া টাকার গুণাগার দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক।’’
রাজেনবাবু বলেন, কেন্দ্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সমালোচনা করে সব সময়েই বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলা হয়েছে, ১ টাকা ঢাললে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লোকসান নাকি ২৩ টাকা। আর বেসরকারি ব্যাঙ্কে লাভ ৯.৬ টাকা। অথচ বেসরকারি ব্যাঙ্ককে সঙ্কট থেকে উদ্ধারে হাতিয়ার সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই।
তবে ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্কট মেটানো নিয়ে এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন টাটা স্টিলের এমডি টি ভি নরেন্দ্রন ও হিরো এন্টারপ্রাইজ়ের চেয়ারম্যান সুনীলকান্ত মুঞ্জল। শনিবার সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার বার্ষিক সভার ফাঁকে সুনীল বলেন, তাদের দ্রুত পদক্ষেপে ব্যাঙ্কটি শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াবে। নরেন্দ্রনের মতে, আরবিআই ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্কটি চাঙ্গা করতে পরিকল্পনা তৈরির কথা বলেছে। যা জরুরি ভিত্তিতে সমস্যার মেটাতে সদিচ্ছার প্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy