Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ভয় ইন্সপেক্টর-রাজ ফেরার

পুরনো লেনদেনে করের আশঙ্কায় কাঁটা শিল্পমহল

লগ্নির অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনে কর না-বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী-সরকার। ভোডাফোন সমেত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ নিয়ে কেন্দ্র বনাম শিল্পমহলের তিক্ততা এক সময় যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা মাথায় রেখে বলা হয়েছিল আয়কর অফিসারদের চোখরাঙানি বন্ধ করার কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩২
Share: Save:

লগ্নির অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনে কর না-বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী-সরকার। ভোডাফোন সমেত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ নিয়ে কেন্দ্র বনাম শিল্পমহলের তিক্ততা এক সময় যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা মাথায় রেখে বলা হয়েছিল আয়কর অফিসারদের চোখরাঙানি বন্ধ করার কথা। কিন্তু এ বারের বাজেট নথি খুঁটিয়ে দেখে শিল্পমহলের আশঙ্কা, সেই হয়রানির দিন হয়তো ফিরতে চলেছে। ফের চালু হতে চলেছে ইন্সপেক্টর-রাজ।

আয়কর দফতরকে মূলত চারটি ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে শিল্পমহল ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। সেগুলি হল—

(১) কর বাকি খুঁজতে প্রয়োজনে অফিসাররা ৫৫ বছরের পুরনো লেনদেনও ঘেঁটে দেখতে পারেন। অর্থাৎ, ১৯৬২ সাল থেকে যে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে কর-তদন্তে নামতে পারেন তাঁরা (২) কারও বাড়িতে বা অফিসে ইচ্ছেমতো হানা দিয়ে তল্লাশি চালানো যাবে। কী সন্দেহে তল্লাশি, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই (৩) তল্লাশির সময়েই সন্দেহভাজন ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে (৪) নিচুতলার অফিসাররাও তথ্য চাইতে পারবেন। উচ্চপদস্থ অফিসারের সায় লাগবে না।

এই চারটি ‘নিদান’ দেখেই শিল্পমহলের মনে পড়ছে ২০১২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেটের কথা আর সেই সূত্রে ভোডাফোন-হাচিসন চুক্তিতে কর বিতর্কের সূত্রপাত। তখন পুরনো লেনদেনে ও ভাবে কর বসানোয় আতঙ্কিত হয়েছিলেন দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীরা। সমালোচনা করেছিল বিজেপি। অর্থমন্ত্রী হয়ে অরুণ জেটলি বলেছিলেন, পুরনো লেনদেনে কর বসাবেন না। কিন্তু এখন তাঁর বাজেটেই উল্টো বিধান দেখে কথা না রাখার অভিযোগ তুলছে শিল্পমহল।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বেশ কিছু মামলায় আইনি জটিলতা কাটাতেই এই আয়কর আইন সংশোধন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ৫৫ বছরের পুরনো লেনদেনে সরকার এখন কর চাইবে। তবে এর দৌলতে আইনি জটিলতায় ঝুলে থাকা প্রাপ্য কর আদায় সহজ হবে। প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের চেয়ারম্যান সুশীল চন্দ্রের আশ্বাস, ‘‘সৎ করদাতাদের হেনস্থা করা হবে না।’’

সরকার যা-ই বলুক, বাজেটের এই সব নিদান নিয়ে সংসদে তাদের নিশানা করতে চাইছেন বিরোধীরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘নানা ফাঁকফোকর ঢাকতে আয়কর আইন সংশোধনের কাজ কোনও দিন শেষ হবে না। তাই উচিত প্রত্যক্ষ কর বিধি চালু।’’

শিল্পের অভিযোগ, এতদিন তল্লাশি চালালে, কীসের সন্দেহে তা করা হচ্ছে, সেটি জানাতে হত। সেই বাধ্যবাধকতাও থাকছে না। ফলে হেনস্থার ভয় থাকছেই। অফিসারদের যদিও বক্তব্য, সব তল্লাশির ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল চিফ কমিশনার বা ডিরেক্টর জেনারেল-ইনকাম ট্যাক্সের সায় নিতে হয়।

মুকেশ বুটানির মতো বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, তল্লাশির সময়েই কেন সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ক্ষমতা দেওয়া হবে? চন্দ্রর জবাব, তদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে ৪-৫ মাস লাগে। ওই সময়ে কেউ কর ফাঁকির সম্পত্তি বেচার চেষ্টা করতে পারেন। তাই ছ’মাসের জন্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পরে কর ফাঁকি প্রমাণ হলে, অনাদায়ী কর মেটালেই তা ফেরানো হবে।

এতদিন তদন্তের তথ্য তলবের ক্ষমতা ছিল প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর, ডিরেক্টর, প্রিন্সিপাল কমিশনার বা কমিশনারদের হাতে। এখন তা দেওয়া হচ্ছে জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরদেরও। শিল্পের ভয়, এতে হেনস্থা বাড়বে। রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া বলেন, ৩০০ অফিসার বাড়তি ক্ষমতা পেয়েছেন। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘হেনস্থার চেষ্টা করলে অর্থমন্ত্রী বা আমাকে জানান। ভয় দেখিয়ে টাকা চাইলে ধরিয়ে দিন সিবিআইকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Income Tax Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE