• স্বাস্থ্য বিমা লগ্নি নয়। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে আকর্ষণীয় রিটার্ন আশা করবেন না।
• কর-মরসুম বন্ধ হওয়ার সময় এগিয়ে এলেই তাড়াহুড়ো পড়ে যায় কোনও রকমে একটি প্রকল্প কেনার। কারণ এতে কর ছাড় মেলে। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। অথচ বিমাকে কখনওই শুধু কর বাঁচানোর রাস্তা ভাবা ঠিক নয়। তা হলে সেটা নিজের ও পরিবারের বিপদ সামলানোর ঢাল হয়ে উঠবে না।
• চাকরি করলে অনেক সময় সংস্থা কর্পোরেট বিমা প্রকল্পের সুবিধা দেয়। সংস্থা যখন দিচ্ছে তখন নিজের পকেট থেকে খরচ করব না, এই ভাবনা ডোবাতে পারে। ভেবে দেখেছেন, ভবিষ্যতে চাকরি বদলালে কী হবে? ফের নতুন করে শুরু করতে হবে তো। যত বেশি বয়সে বিমা শুরু করবেন, প্রিমিয়াম হবে তত বেশি। তা ছাড়া, কর্পোরেট বিমায় আপনার বরাদ্দ নির্দিষ্ট। চিকিৎসার খরচ তার বেশি হলে বাড়তি গুনতে হবে নিজেকেই।
কাজে লাগে যেন
কোনও হিসেব-নিকেশ ছাড়া খুব কম টাকার স্বাস্থ্য বিমা করলে প্রয়োজনের সময় বিপদে পড়তে পারেন। কারণ, একে তো চিকিৎসার খরচ প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। তার উপর জটিল রোগভোগ বা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে তা আরও অনেক বেশি হয়। শুরুতেই এই কথাটা মাথায় রাখা জরুরি।
চাহিদা মেপে
কোন ধরনের প্রকল্প কিনবেন বা কত টাকার বিমা করবেন, তা নির্ভর করবে পুরো পরিবারের প্রয়োজনের উপরে। যেমন, শুধু নিজের জন্য হলে এক রকম। স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে ফ্লোটার প্রকল্প কিনলে আর এক রকম। আবার পরিবারে স্বামী/স্ত্রী, সন্তানের পাশাপাশি যদি বাবা-মায়ের মতো বয়স্ক মানুষ থাকেন, তা হলে পরিকল্পনা হবে অন্য রকম। কারণ—
• মা, বাবা সমেত সকলকে একটি ফ্লোটার স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের আওতাভুক্ত করতে চাইলে প্রিমিয়াম দিতে হবে অনেক বেশি। যেহেতু ফ্লোটারে সব থেকে বেশি বয়সের যে মানুষটি থাকেন, তাঁর উপর ভিত্তি করেই প্রিমিয়ামের অঙ্ক ঠিক হয়।
• তা ছাড়া, বয়স্কদের রোগে ভোগার আশঙ্কাও থাকে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে বারবার বিমার টাকা দাবি করতে হতে পারে শুধু তাঁদের জন্যই। ফলে ওই বিমার আওতায় পরিবারের বাকি যাঁরা থাকবেন, তাঁদের চিকিৎসার খরচ চালানোর সুযোগ ক্রমশ ছোট হতে থাকবে।
• ফলে বিমার সুযোগ যদি সত্যিই কাজে লাগাতে হয়, তবে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও নিজের জন্য একটি ফ্লোটার প্রকল্প ও বাবা-মায়ের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প কিনলে সুবিধা হবে।
কোথায় কতটা বাদ
বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে কিন্তু অনেক কিছু বাদও থাকে। তাই কোথায় কোনটা পাবেন না, সেটা জেনে রাখা দরকার। যাতে আগে থেকে তৈরি হয়ে থাকা যায়। ফলে প্রকল্প বাছার সময় মাথায় রাখতে হবে—
• সব ধরনের রোগ-আঘাত স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের আওতায় পড়ে না। যেমন, যুদ্ধজনিত আঘাত, এইচআইভি ইত্যাদি।
• অনেক প্রকল্পে সাব-লিমিট থাকে। যেখানে ডাক্তার, হাসপাতালের ঘর বা বেড ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতো বিভিন্ন খাতে কিংবা নানা রকম রোগের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকে। যেমন ধরুন, কিডনির পাথর অপারেশন করে বার করতে হয়তো ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের রোগের জন্য আপনার পলিসিতে সর্বোচ্চ ৪০,০০০ টাকার সাব-লিমিট। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে বাকি ৬০,০০০ বিমা থেকে পাবেন না। নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে।
এই সব ক্ষেত্রে কোথায় কত বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, তা বিচার করার জন্য তুলনা করতে হবে বিভিন্ন সংস্থার বাজারে চালু প্রকল্পগুলির মধ্যে।
নগদহীনের সুবিধা
স্বাস্থ্য বিমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নগদহীন চিকিৎসার (ক্যাশলেস) সুযোগ। গ্রাহককে এই সুবিধা দিতে প্রতিটি বিমা সংস্থারই বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকে। যে সংস্থার প্রকল্প কিনবেন, তার সঙ্গে জোট বাঁধা হাসপাতালগুলি থেকে চিকিৎসা শেষে ছাড়া পাওয়ার সময় রোগীকে কোনও টাকা মেটাতে হয় না। সে ক্ষেত্রে বিল সরাসরি মিটিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাটিই। আপনাকে শুধু রোগ, চিকিৎসা, হাসাপাতালে ভর্তি ইত্যাদির নথি জমা দিতে হবে। কাজেই পলিসি কেনার আগে দেখে নেওয়া জরুরি, সংস্থার হাসপাতালের তালিকায় আপনার পছন্দেরটি আছে কি না।
পুরনো রোগের জের
হতে পারে পলিসি করানোর আগেই আপনার দু’তিনটি রোগ মাথাচাড়া দিয়েছে। যাকে বিমার পরিভাষায় বলে প্রি-এগজিস্টিং ডিজিজ। বিমার টাকা পাওয়া নিয়ে যে সব সমস্যা হয়, তার একটা বড় অংশ এই পুরনো রোগ-ভোগ ঘিরেই। কারণ—
• পলিসি কেনার আগে থেকে জাঁকিয়ে বসা কিছু কিছু রোগ বিমার আওতায় না-ও আসতে পারে। এটা নির্ভর করবে প্রকল্পের উপরে। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি ওই সব রোগ গোপন করে বিমা করেন, তা হলে পরে চিকিৎসা খরচের দাবি আটকে যেতে পারে। কারণ সেগুলির ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা দাবি মেটাতে বাধ্য নয়। ফলে টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• কিছু কিছু রোগ আবার পলিসি কেনার দুই থেকে চার বছরের মধ্যে বিমার সুবিধা পায় না।
• কী ধরনের প্রকল্প, কাদের জন্য কেনা হচ্ছে, কত বয়সে বা কত দিনের জন্য, এই সব শর্ত জড়িয়ে থাকে পুরনো রোগ সংক্রান্ত বিধির ক্ষেত্রে।
সুতরাং বিমা কেনার পরে সংস্থা কোনও চিকিৎসার টাকা দেবে না বলে বেঁকে বসলে, অথৈ জলে পড়তে পারেন আপনি। এই পরিস্থিতি এড়াতে, সংশ্লিষ্ট নথিতে পড়ে নিন প্রি-এগজিস্টিং ডিজিজের পুরো শর্ত।