E-Paper

হিট স্ট্রোকের শিকার পাখিরাও, প্রয়োজন আরও পরিকাঠামোর

এ বার কলকাতার রেকর্ড গরমে অসুস্থ হচ্ছে পাখিরাও। জলশূন্যতা, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বা প্যারালিসিস হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে তাদের।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ০৫:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

তাকে এক ঝলক দেখতে এবং ফ্রেমবন্দি করতে কিছু দিন ধরেই রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে ভিড় জমাচ্ছিলেন পাখি দেখিয়ে এবং চিত্রগ্রাহকেরা। পরিযায়ী বর্ণালী পাখির (ইন্ডিয়ান পিট্টা) এ হেন জনপ্রিয়তা তাকে রাতারাতি তারকার মর্যাদা দিয়েছিল। সম্প্রতি সরোবর চত্বরে সেই তারকা-অতিথির একটিকেই মৃত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অনেকেরই আশঙ্কা, কলকাতায় প্রবল তাপপ্রবাহের কারণেই অসুস্থ হয়ে হয়তো মৃত্যু হল পাখিটির।

এ বার কলকাতার রেকর্ড গরমে অসুস্থ হচ্ছে পাখিরাও। জলশূন্যতা, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বা প্যারালিসিস হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে তাদের। চিল-ঈগল থেকে টিয়া, পায়রা, পেঁচা— তাপপ্রবাহের আঁচ থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউই। পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের মতো পাখিদের শরীরে কোনও ঘর্মগ্রন্থি থাকে না। তাই গরমে ওদের শরীরের তাপমাত্রা কমানোর তেমন কোনও উপায় নেই। পাখিদের শরীরের গড় তাপমাত্রা (১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মানুষের তুলনায় বেশি। তাই সেই তাপমাত্রা আরও বাড়লে সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু নগরায়ণ এবং নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ঠেলায় পাখিদের স্বাভাবিক বাসস্থান (হ্যাবিট্যাট) নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। আশপাশে জলের জোগান থাকলেও তা গরম হয়ে যাওয়ায় পানযোগ্য থাকে না অনেক সময়ে। ফলে, প্রবল গরমে পক্ষীকুলের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, হতে পারে প্যারালিসিস। উড়তে উড়তে অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েও মৃত্যু হয় অনেকের।

পাখির ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনো এবং বাচ্চার বড় হওয়ার ক্ষেত্রেও বড় বাধা এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা। সদ্যোজাত ছানাদের ক্ষেত্রে খাবারের মাধ্যমেই শরীরে জলের জোগান যায়। তাই আশপাশে জল না থাকলে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও কমে।

দিল্লির গুরুগ্রামে চ্যারিটি বার্ড হাসপাতাল সূত্রের খবর, মার্চ থেকেই সেখানে বেড়েছে অসুস্থ পাখি আসার সংখ্যা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রাজু জৈন বলেন, ‘‘গত এক মাসে ২০০-২৫০টি অসুস্থ পাখি এসেছে। প্রতিদিনই ১০-১৫টি করে অসুস্থ পাখি আসছে। হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে জল, ওআরএস, প্রয়োজনে অক্সি-লিকুইড ওষুধ দেওয়া হয়। তবে তীব্র গরমে হাসপাতালের পথেই মারা যাচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পাখি।’’

এ শহরে অসুস্থ পাখিদের আনা হয় বেলগাছিয়া পশু হাসপাতাল, সল্টলেকের এফডি ডিয়ার পার্কে। শহরতলির ছোট ছোট চিড়িয়াখানায় বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির উদ্যোগে পক্ষী-চিকিৎসার বন্দোবস্ত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামসুন্দর দানার কথায়, ‘‘অসুস্থ পাখির হিট স্ট্রেস কমাতে স্নান করিয়ে দিতে হবে, ওআরএস খাওয়াতে হবে। এর পরে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসুন।’’ পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল জানাচ্ছেন, হিট স্ট্রোক হলে পাখিকে ঠান্ডা জলে (মাথা বাদে) স্নান করালে বিপদ অনেকটা কেটে যায়। এর পরে প্যারাসিটামল, ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে।

পেশায় চিকিৎসক এবং পাখি দেখিয়ে কণাদ বৈদ্য বলছেন, ‘‘বাঁচার তাগিদে দুর্গা টুনটুনি, বুলবুলির মতো অনেক পাখি আজ মানুষের কাছাকাছি থাকছে। তাদের জন্য বারান্দায়, ছাদে, জানলায় জলের ব্যবস্থা করছেন অনেকে। তবে রাজ্যে আরও সরকারি ও বেসরকারি পশু হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে অসুস্থ পশু-পাখি উদ্ধার করলেও তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন না। তাই এ নিয়ে টোল-ফ্রি নম্বর চালু হলে ভাল। জেলায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। পাখি বাঁচাতে আরও দক্ষ কর্মী প্রয়োজন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heatstroke Birds Summer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy