Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
চাষিদের ভোট পেতে কল্পতরু কেন্দ্র

শুরুতে টাকা, চাই শুধু জুতসই নাম 

বেশ জম্পেশ একখানা নামের খোঁজ চলছে। যে নাম শুনলে বোঝা যাবে, নরেন্দ্র মোদী সরকার চাষিদের পরম বন্ধু। আবার ওই নামের মধ্যেই ফুটে উঠবে, বীজ বোনার সময় চাষিদের হাতে নগদ টাকা গুঁজে দিতে আনা হয়েছে এই প্রকল্প।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

বেশ জম্পেশ একখানা নামের খোঁজ চলছে। যে নাম শুনলে বোঝা যাবে, নরেন্দ্র মোদী সরকার চাষিদের পরম বন্ধু। আবার ওই নামের মধ্যেই ফুটে উঠবে, বীজ বোনার সময় চাষিদের হাতে নগদ টাকা গুঁজে দিতে আনা হয়েছে এই প্রকল্প।

নাম দেওয়া হবে। ঘোষণাও হবে। লোকসভা ভোটের আগে চাষিদের মন জিততে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবে মোদী সরকার। তাই তেলঙ্গানার ‘রায়তু বন্ধু’ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কৃষকবন্ধু’-র ধাঁচেই চাষিদের জন্য নতুন প্রকল্প আনার এই মরিয়া তোড়জোড়। কিন্তু এখনই তার কোনও আর্থিক দায় নেবে না মোদী সরকার। সরকারের অন্দরমহলে চলা ভাবনাচিন্তা অনুযায়ী, কৃষকের ক্ষতে মলম লাগানোর লক্ষ্যে প্রকল্পটি আগামী ১ এপ্রিল, অর্থাৎ নতুন আর্থিক বছর থেকেই চালুর ঘোষণা হবে। ফলে পুরো আর্থিক দায়টাই ঠেলে দেওয়া যাবে নতুন সরকারের ঘাড়ে। সরকারি সূত্রের দাবি, মূলত ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের দিকেই নজর থাকবে এই প্রকল্পের।

দেশ জুড়ে কৃষক বিক্ষোভ এখন মোদী সরকারের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। নাগাড়ে এ নিয়ে বিঁধে চলেছেন বিরোধীরা। চাষিদের সেই ক্ষোভ শান্ত করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সরকারের অলিন্দে আলোচনা চলছে জোর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। সরকারি সূত্রের খবর, ঋণ মকুব নয়, বরং চাষের মরসুমের শুরুতেই চাষিদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। যাতে তাঁদের ব্যাঙ্ক বা মহাজনের কাছ থেকে ধার করতেই না হয়। বন্দোবস্ত হয় চাষিদের জন্য ন্যূনতম আয়েরও।

তেলঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ‘রায়তু বন্ধু’ প্রকল্পে চাষের মরসুমের শুরুতে একর প্রতি ৪,০০০ টাকা করে সরাসরি চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেন। এই রায়তু বন্ধুতে ভর করেই দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফিরেছেন রাও। নতুন বছরের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের চাষিদের জন্যও ঠিক একই ধাঁচের একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ‘কৃষকবন্ধু’ নামের ওই প্রকল্পে প্রতি বছর দু’দফায় প্রতি একর জমিতে ৫,০০০ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তেলঙ্গানায় অবশ্য বছরে খরিফ, রবি মরসুম মিলিয়ে এক একজন কৃষক একর প্রতি ৮ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

সরকারি সূত্রের খবর, অর্থ মন্ত্রক, কৃষি মন্ত্রক ও নীতি আয়োগের কর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে ফের বৈঠক হয়েছে। সেখানে ‘রায়তু বন্ধু’-র চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ক্ষেতমজুর ও যে সব চাষিদের হাতে জমির পাট্টা নেই, তাঁরা ওই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। সে জন্যই মোদী সরকারের প্রকল্প ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।

সরকারি সূত্রের খবর, আপাতত এই প্রকল্পের জন্য আর্থিক দায় না নিলেও, আগামী ১ ফেব্রুয়ারির ‘ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট’ বা আগাম বাজেটে এই খাতে নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন অরুণ জেটলি। তারপর মোদী সরকার ফের ক্ষমতায় ফিরলে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের সময় বাকি চিন্তাভাবনা হবে। আর সেটা না হলে, দায় নেবে নতুন সরকার। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ বলছে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় যে সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তার সবগুলিরই নাম বেশ নতুন ধরনের। তা সে স্বচ্ছ ভারতই হোক বা আয়ুষ্মান ভারত। আবার কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রে নামের ইংরেজি শব্দগুলির আদ্যক্ষর জুড়ে এমন একটি শব্দ তৈরি হয়েছে, যা নতুন এক অর্থ বহন করছে। যেমন মুদ্রা (মাইক্রো ফিনান্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফিনান্স এজেন্সি) বা উদয় (উজ্জ্বল ডিসকম অ্যাশিওরেন্স যোজনা)। সরকারি সূত্রের দাবি, চাষিদের জন্য নগদ ভর্তুকি প্রকল্পেরও তেমনই এক চমকপ্রদ নামের খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subsidy Name Farmers Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE