Advertisement
E-Paper

নির্মাণ শিল্পের ছন্দে ফেরায় নেই কলকাতা

গত বছরের খরা কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে দেশের নির্মাণ শিল্প। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে বাড়ছে অফিস তৈরির জায়গার চাহিদা। ব্যতিক্রম শুধু কলকাতা। চাহিদা বাড়া দূর অস্ত্।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:২৬

গত বছরের খরা কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে দেশের নির্মাণ শিল্প। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে বাড়ছে অফিস তৈরির জায়গার চাহিদা। ব্যতিক্রম শুধু কলকাতা। চাহিদা বাড়া দূর অস্ত্। উল্টে তা সটান কমেছে ৩২%। এই ছবি ধরা পড়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা কোলিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষায়।

শিল্পমহলের ব্যাখ্যা, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়লে, তবেই অফিস তৈরির চাহিদা বাড়ে। ফলে এই পরিসংখ্যান পশ্চিমবঙ্গের ‘নেই-শিল্পে’র ছবিকেই ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বলে মত তাদের।

নির্মাণ সংস্থা, লগ্নিকারী, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থাকে নিয়ে চালানো বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষাও দেখাচ্ছে, তিলোত্তমার একই রকম মলিন ছবি। তা ফুটে উঠেছে তাদের বাজারের ‘সেন্টিমেন্ট’ বা মনোভাব সূচকে (রিয়েল এস্টেট সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স)। যার মাপকাঠি সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি, নতুন প্রকল্প ঘোষণা, বিক্রির পরিমাণ, দাম বাড়া, পুঁজি পাওয়ার সুবিধা ইত্যাদি।

সমীক্ষায় প্রকাশ, কলকাতার বাজার নিয়ে নির্মাণ সংস্থা ও লগ্নিকারীদের মনে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনাটাই দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে পুরো পরিবেশ হয়ে উঠছে আরও নেতিবাচক। ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে যে ‘সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স’ ছিল ৬২ পয়েন্টে, তা-ই চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ পয়েন্টে। দেশের সমস্ত বড় শহরের মধ্যে সব থেকে কম। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, বেঙ্গালুর ইত্যাদি শহরে ওই সূচক কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী। ইঙ্গিত, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠার।

শিল্পমহলের বক্তব্য, হয়তো এটা হওয়ারই ছিল। কারণ, যত দিন যাচ্ছে রাজ্যের প্রায় শূন্য শিল্পের ভাঁড়ার ঘিরে আরও গাঢ় হয়ে জমাট বাঁধছে অন্ধকার। ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো সংস্থার লগ্নি আটকে। লগ্নি করতে আসছে না নতুন কোনও বড় সংস্থাই।

তাদের অভিযোগ, রাজ্যের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) বিরোধী অবস্থান, একলপ্তে বেশি জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে না-পারা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, লগ্নি টানা ও তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে মলিন ভাবমূর্তি— এই সমস্ত কিছুরই খেসারত দিয়ে চলার তালিকা ক্রমাগত লম্বা হচ্ছে। বহু দিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই তো বটেই, লগ্নি টানার দৌড়ে এখন হামেশাই কলকাতাকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে এত দিন তুলনায় পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন শহরও।

অনেকের মতে, এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অফিসের জায়গার চাহিদা কমে যাওয়ায়। একই ছবি ফুটে উঠছে অন্য সমীক্ষা অনুযায়ী এখানে ব্যবসার মানসিকতা হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেও।

কোলিয়ার্সের সমীক্ষা জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ১ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গফুট অফিসের জায়গা নিতে পেরেছে কলকাতা। ফাঁকা পড়ে ৩৮ লক্ষ বর্গফুট। যেখানে বেঙ্গালুরু নিয়েছে প্রায় ২১ লক্ষ বর্গফুট অফিসের জায়গা। দিল্লি সাড়ে দশ লক্ষ বর্গফুট। এমনকী হায়দরাবাদ এবং পুণেও দশ লক্ষের বেশি।

চাহিদার এই অভাব দেখে নতুন প্রকল্প গড়তে আর ভরসা পাচ্ছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি। পরিস্থিতি এতটাই বেহাল যে, নির্মীয়মান প্রকল্পে কাজের গতি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প শেষের সময়সীমাও। তাদের প্রশ্ন, শহরে দফতর তৈরির যে জায়গা ফাঁকা পড়ে, তারই খদ্দের মিলছে না। নতুন প্রকল্প বিপণনের সুযোগ কোথায়?

আর চাহিদা ও জোগানের এই তলানিতে ঠেকার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন ও শিল্প পরিস্থিতির বেহাল অবস্থা। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার দাবি, আর্থিক উন্নয়নের অভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে টান পড়েছে। নতুন ক্রেতাও তৈরি হচ্ছে না। অফিসের জায়গার বাজার রয়ে যাচ্ছে সেই তিমিরেই।

Construction industry demad flat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy