Advertisement
E-Paper

পিএফের অনেক অ্যাকাউন্ট রাখবেন না

বেতন ভাল। অথচ লগ্নি এলোমেলো। খোঁজ নেই পিএফ অ্যাকাউন্টেরও। কী ভাবে সব সাজাবেন? জানাচ্ছেন শৈবাল বিশ্বাসনজরকাড়া কেরিয়ার, ভাল বেতন, সচ্ছল জীবনের টানে বারবার সংস্থা বদল আজকাল খুব সাধারণ ব্যাপার। খারাপ তো নয়ই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভাল সিদ্ধান্ত।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:২০

পরিচিতি: শঙ্কর (২৯)

কী করেন: কাজ করেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। থাকেন ভিন্‌ রাজ্যে

লক্ষ্য: কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা। এক বছরে বিয়ে। অবসর জীবনের তহবিল

একটি চাকরিতেই সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার জমানা আর নেই। নজরকাড়া কেরিয়ার, ভাল বেতন, সচ্ছল জীবনের টানে বারবার সংস্থা বদল আজকাল খুব সাধারণ ব্যাপার। খারাপ তো নয়ই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু চাকরি বদলালে, তার সঙ্গে যুক্ত লগ্নি পরিকল্পনাতেও কিছু পরিবর্তন আসে। সমস্যা হল, সেটাই অনেকে মাথায় রাখেন না।

তাই অনেক সময় দেখি, এক জনের একাধিক পিএফ অ্যাকাউন্ট। কারণ সংস্থা পাল্টেছেন, কিন্তু আগের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করেননি। সেগুলিতে হয়তো পড়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। অথচ এখন কম্পিউটারে বসেই সব অ্যাকাউন্ট একসঙ্গে মেশানো যায়। কিন্তু কিছুটা আলসেমি, আর কিছুটা অনভিজ্ঞতার কারণে তা করা হয়ে ওঠে না অনেকেরই।

কেন এ কথা?

এই কথা বলে লেখা শুরুর কারণ শঙ্করের প্রোফাইল। তিনি কাজ করেন ভিন্‌ রাজ্যে। পরিবার থাকে কলকাতায়। বাবা পেনশন পান। মা-ও কাজ করেন রাজ্য সরকারি সংস্থায়, অবসরের চার বছর বাকি। ভাই পড়ুয়া। পরিবারের দায়িত্ব সে ভাবে নিতে হয় না শঙ্করে। দেখতে গেলে তাঁর বেতন অনেকটাই বেশি। সঙ্গে রয়েছে বছরে উৎসাহ ভাতা এবং নিজের সংস্থা থেকে পাওয়া শেয়ারও। যার হিসেব হবে ডলারে এবং তিনি চাইলেই তা বিক্রি করতে পারেন। সব দিক থেকে দেখতে গেলে তাঁকে সচ্ছল বলা চলে।

অথচ শঙ্করের লগ্নির ধরন খুব এলোমেলো। অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু তাতে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। একাধিক পিএফ অ্যাকাউন্ট তাঁর। সেগুলি মেশানো তো দূর অস্ত্, কোনটাতে কত টাকা রয়েছে তা-ও জানেন না। অর্থাৎ, সেই টাকা থেকেও লাভ হচ্ছে না। তাই পিএফের অ্যাকাউন্ট নিয়েই আজকের পরামর্শ দেওয়া শুরু করব শঙ্করকে।

এক ছাতার তলায়

যাঁরা নিয়মিত চাকরি বদলান, তাঁদের জন্য কেন্দ্র চালু করেছে ‘ওয়ান এমপ্লয়ি-ওয়ান ইপিএফ অ্যাকাউন্ট’ প্রকল্প। এর মাধ্যমে ১০টি পুরনো পিএফ অ্যাকাউন্টকে একটি ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বরের (ইউএএন) আওতায় আনা যায়। শঙ্করকে প্রথমেই বলব তাঁর অ্যাকাউন্টের জন্য এর সুবিধা নিতে। তাঁর আধারের সঙ্গে ইউএএন নম্বর যুক্ত না থাকলে, সেই কাজটা সবার আগে সেরে ফেলা জরুরি। এ জন্য নেটেই আবেদন করা যায়। ঘুরতে হয় না পিএফ অফিসে। সব অ্যাকাউন্ট যুক্ত হলে বুঝতে পারবেন পিএফে তাঁর কত টাকা জমেছে। এর পরে সেই অনুসারে লগ্নি সাজানো যাবে।

বদলান বিমা

• শঙ্করের এনডাওমেন্ট পলিসিতে বছরে ৪৩ হাজার খরচ হয়। পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। আমি বলব, বিমা পেড-আপ করুন। বিয়ের পরে নিন বড় অঙ্কের টার্ম পলিসি। সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট ও ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার।

• বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য বিমায় বছরে ৩০ হাজার টাকা দেন শঙ্কর। কিন্তু অফিসের ৩ লক্ষের বাইরে তাঁর নিজের নেই। এটা জরুরি। শুরু করুন ৫ লক্ষ টাকার বিমা দিয়ে। পরে বাড়ান।

সুরক্ষিত লগ্নি

শঙ্করের বেশির ভাগ লগ্নিই রয়েছে তুলনায় বেশি সুরক্ষার প্রকল্পে। এবং সেগুলি বেশ ছড়ানো। আমার মতে—

• কর বাঁচাতে এখনও পিপিএফের জুড়ি নেই। তা চালিয়ে যান। তবে ক্রমাগত সুদ কমছে। ফলে আগামী দিনে এই খাতে কম টাকা রাখুন। বরং তা অন্যান্য জায়গায় ছড়ান।

• এ জন্য চাইলে বেছে নিতে পারেন এনপিএস। এখানে ৮০সি ধারার বাইরেও বছরে ৫০,০০০ টাকা লগ্নির উপরে কর ছাড় পাওয়া যায়।

• কর বাঁচানোর জন্য ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ইএলএসএস) বেশ ভাল। এতে এসআইপি চালু করুন।

ফ্ল্যাট ও বিয়ে

সেভিংস অ্যাকাউন্টে শঙ্করের ২০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। এটা অর্থহীন। বড়জোড় ছ’মাসের বেতন সেভিংসে রাখুন। বাদবাকিটা বিয়ে ও ফ্ল্যাট কিনতে কাজে লাগাতে হবে। কারণ, এক-দু’বছরের মধ্যে সেই দুই লক্ষ্যই পূরণ করতে চান তিনি।

তিনি ৪০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট কিনতে চান। ফলে ডাউনপেমেন্টের পরেও ঋণ নিতে হবে। সে জন্য মাসিক কিস্তিও ধরতে হবে হিসেবে। চাইলে এই এক দু’বছরে ডেট ফান্ডে লগ্নি করে ডাউনপেমেন্টের টাকা বাড়াতে পারেন। এতে ঋণ কম নিতে হবে।

বিয়ের পরে অন্তত ছ’মাসের বেতন সেভিংসে থাকার ব্যবস্থা জরুরি।

এসআইপি করুন

শঙ্করের আরও একটি সমস্যা হল বেশির ভাগ লগ্নির ক্ষেত্রেই এককালীন টাকা দিলে চলে। যেমন পিপিএফ, শেয়ার, জীবন বিমা। প্রতি মাসে নিয়মিত লগ্নির ব্যবস্থা তাঁর নেই। ফলে সঞ্চয়ের অভ্যাসও তৈরি হয়নি। যে কারণে তাঁর সেভিংসে এত টাকা।

শঙ্করের বয়স কম, এটাই ঝুঁকি নিয়ে ফান্ডে টাকা রাখার সেরা সময়। তাই আমার পরামর্শ, প্রতি মাসে নিয়মিত এসআইপি করুন। যা ভবিষ্যতে সন্তানের শিক্ষা, বিয়ে এবং তাঁর অবসরের তহবিল তৈরির কাজে লাগবে। এ জন্য ইকুইটি এবং ডেট ফান্ডে মিলিয়ে-মিশিয়ে টাকা রাখুন।

কোথায় কতটা রাখবেন তা বুঝতে, ১০০ থেকে নিজের বয়স বাদ দিতে হবে। যা থাকবে, তা ইকুইটি ফান্ড বা শেয়ারে রাখতে হবে। বাকিটা ডেট বা ঋণপত্রে। বয়স যত বাড়বে, ততই ডেট ফান্ডে লগ্নির অঙ্ক বাড়বে।

অন্যান্য

শেয়ার বাজারে এখন দোলাচল। তাই কিছু পরামর্শ দিয়ে রাখতে চাই—

• মনে রাখবেন বাজার অস্থির মানে এই নয় যে শেয়ারে লগ্নি বন্ধ করে দিতে হবে। বরং নিয়মিত ভাল শেয়ার কিনতে থাকুন। সে জন্য বাজার সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে নিলে ভাল হয়। শুধু সংস্থার ইতিহাসই নয়, বরং আগামী দিনে তা কেমন করতে পারে, তা দেখে টাকা ঢালতে হবে।

• বাজার পড়লেই ভয় পেয়ে শেয়ার বা ফান্ড বিক্রি করবেন না। বাজারে ওঠা-পড়া থাকবেই। ধৈর্য ধরুন।

• স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য শেয়ার বা ফান্ডে ভরসা করবেন না।

• দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও অন্তত ছ’মাস পর পর লগ্নি খতিয়ে দেখুন। তার পরে সিদ্ধান্ত নিন সেই শেয়ার বা ফান্ড রাখবেন কি না।

• আমরা অনেকেই শেয়ারে চটজলদি লাভ করতে গিয়ে ডুবি। আর তার পরে শেয়ারে পা-ই রাখি না। কিন্তু এটা কাজের কথা নয়। প্রথমে শেয়ারে পা রেখেই লেনদেন করতে যাবেন না। কারণ যাঁরা নিয়মিত লেনদেন করেন, তাঁরা হয় অনেক বেশি টাকা নিয়ে এখানে পা রাখেন। অথবা অনেক দিন ধরে বাজারকে ভাল রকম চেনেন। বরং আমি বলব, বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে ধরে নিয়েই টাকা ঢালুন।

আশা করব এই পরামর্শ তাঁকে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। তবে বিয়ের পরে তাঁর পারিবারিক অবস্থা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে লগ্নির সিদ্ধান্ত বদলাতে হতে পারে।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পাঠকের প্রশ্ন?

প্রঃ নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট বুক করেছিলাম জিএসটি চালুর আগেই, গত ৩১ মার্চ। তখন আমাদের সুপার বিল্ট এরিয়ার দাম দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রেফার্ড লোকেশন চার্জ, ইউটিলিটি চার্জ, অ্যানসিলারি চার্জ, মেন্টেন্যান্স চার্জ, মিউনিসিপ্যাল ডিপোজিট এবং প্রতিটি বিভাগের সার্ভিস চার্জ আলাদা করে দিতে হয়েছে। অথচ জিএসটির জমানায় ফ্ল্যাটের কার্পেট এরিয়ার দাম লাগছে। প্রশ্ন হল—

• রেজিস্ট্রির সময় কি আগের নিয়মে ফ্ল্যাটের দামের ৭.৮% লাগবে? না কি ১২% জিএসটি দিতে হবে?

• যদি ১২% জিএসটি দিতে হয়, তা হলে কি ফ্ল্যাটের সুপার বিল্টের দাম থেকে কার্পেট এরিয়ার দাম বাদ দিয়ে যা থাকবে, সেই টাকা ফেরত পাব? কারণ, আমি তো সুপার বিল্টের দামই দিয়েছি, যেখানে জিএসটি জমানায় ফ্ল্যাটের কার্পেট এরিয়ার দাম লাগছে। বুকিং আর রেজিস্ট্রির নিয়ম একই সময়ের হওয়া উচিত।

• যদি বুকিং সুপার বিল্টের দাম দিয়ে করেও ১২% জিএসটি দিতে হয়, তা হলে এই অন্যায়ের হাত থেকে কী ভাবে নিজেকে বাঁচাতে পারি?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নদিয়া

আমার মনে হচ্ছে, স্ট্যাম্প ডিউটি ও সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন মূল্যের সঙ্গে জিএসটিকে গুলিয়ে ফেলেছেন আপনি। মাথায় রাখবেন, এগুলি কিন্তু আলাদা আলাদা কর। স্ট্যাম্প ডিউটি এবং সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের মূল্য আগের মতো একই আছে এখনও। জিএসটি চালুর পরে এগুলির কোনও পরিবর্তন হয়নি। কারণ নতুন এই পরোক্ষ করের সঙ্গে এগুলির কোনও সম্পর্কই নেই।

এখন আবাসন তৈরির কাজ পুরো শেষ হওয়ার আগে ফ্ল্যাট কিনলে ১২% হারে জিএসটি দিতে হয়। তবে আবাসন তৈরি হওয়ার পরে কিনলে তা বসে না। আপনি যদি বিল্ডার সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, অর্থাৎ সুপার বিল্ট এরিয়ার মোট দামের উপর জিএসটি মেটান, তা হলে এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই। কারণ আপনার প্রতি বর্গফুট কার্পেট এরিয়ার দাম সব সময়েই প্রতি বর্গফুট সুপার বিল্ট এরিয়ার দামের থেকে বেশি হবে। কাজেই সম্পত্তির সার্বিক মূল্য একই হবে। কাজেই এ ক্ষেত্রে কোনও বাড়তি জিএসটি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে না।

পরামর্শদাতা:
তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

PF accounts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy