Advertisement
০২ মে ২০২৪
WBSEDCL

অস্বাভাবিক বিল, চিন্তায় রাজ্য বণ্টন সংস্থার গ্রাহক

বিদ্যুতের ব্যবহারের সঙ্গে তার বিল সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে আগেও কয়েক বার রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫১
Share: Save:

টোম্যাটো, লঙ্কা-সহ আনাজের দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার হাজার টাকার উপরে। তেলের দাম বাড়ায় যাতায়াতের খরচ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। লাফিয়ে দাম বাড়ছে ওষুধ এবং বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসেরও। সংসার চালাতে গিয়ে নাজেহাল নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত মানুষ। এরই মধ্যে একাংশ নতুন করে ধাক্কা খেলেন বিদ্যুতের বিল দেখে।

বিদ্যুতের ব্যবহারের সঙ্গে তার বিল সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে আগেও কয়েক বার রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার অগস্টের বিল (মে-জুন-জুলাইয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য) দেখে ফের তাজ্জব বহু গৃহস্থ গ্রাহক। তাঁদের দাবি, ওই তিন মাসে বেশ কিছুটা সময় জুড়ে তাপপ্রবাহ চলেছিল ঠিকই। পাখা, এসি বেশি চলার কারণে বিদ্যুতের বাড়তি ব্যবহারও হয়েছে। তবু বিলে যে টাকা দেখাচ্ছে তা অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বেশি বলে অভিযোগ। এমনকি এসি নেই, এমন বহু বাড়িও রয়েছে তার মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি চুপিসারে মাসুল বাড়ানো হয়েছে? বণ্টন সংস্থার সূত্র মানছে, বিল ‘সামান্য’ বেশি এসেছে। কারণ, গত মার্চে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্থায়ী (ফিক্সড) চার্জ অল্প বেড়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলে যে ন্যূনতম চার্জ নেওয়া হত, কিছুটা বেড়েছে সেই খরচও। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্রতি কিলোওয়াট আওয়ারে (কেডব্লিউএইচ) যে টাকা নেওয়া হয়, তা দীর্ঘ দিন ধরে স্থির। গ্রাহকের বিলের অঙ্ক বেশি আসার প্রধান কারণ এ বছরের প্রখর গরমে তার চাহিদা বৃদ্ধি।

এ বার গ্রীষ্মে কলকাতা-সহ রাজ্যের বহু জায়গায় প্রায় নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ ওঠে। তার পরেও বিলের অঙ্ক দেখে মাথায় হাত একাংশের। তিন মাসে ৩০০০-৩৫০০ টাকা মেটান এমন অনেকের তা ৯০০০ টাকা ছাড়িয়েছে। সর্বাধিক ১৫০০ টাকা মেটাতে অভ্যস্ত কারও কারও এসেছে ৩০০০-৪০০০ টাকা।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অবশ্য দাবি, দীর্ঘ দিন মাসুল হার না বাড়ায় বেহাল আর্থিক দশা তাদের। অদূর ভবিষ্যতে মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জ্বালানি খাতে খরচ বাড়লেও (রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম বা অন্য উৎপাদন সংস্থা যেহেতু সেই অর্থ আদায় করছে), তা গ্রাহকের মাসুলে যোগ করার ব্যাপারে এখনও রাজ্য বা কমিশনের সম্মতি মেলেনি। বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, আগে গ্রামীণ বা শহরের গৃহস্থ গ্রাহকের থেকে মাসে প্রতি কেভিএ (অর্থাৎ লোড বা বিদ্যুৎ সংযোগের পরিমাণ) বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য স্থায়ী খরচের খাতে নেওয়া হত ১৫ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। এ ছাড়া, সংযোগ থাকলেও বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহার যদি খুব কম হয় তা হলে যে ন্যূনতম চার্জ বিলে ধরা হত, তা-ও মাসে ৫০ টাকা থেকে কিছুটা বেড়েছে। কারণ নতুন নির্দেশের প্রেক্ষিতে সেটিকে লোডের সঙ্গে তুলনা করে জোড়া হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে প্রতি কেভিও লোডের ক্ষেত্রে তা হবে ৭৫ টাকা। অনেকেই বাড়িতে না থাকলেও বা খুব কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও যে পরিমাণে সংযোগ নেন (বিশেষ করে এসি বা ফ্রিজ়ের বন্দোবস্ত রাখলে) সে জন্য সংস্থাকে কেব্‌ল পাতা ও ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যেমন খরচ করতে হয়, তেমনই সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণেও খরচ হয়। তাই সেই চার্জ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এমনিতে গ্রাহকের বিলে এই খাতে সামান্য হলেও কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা। আর কেউ যদি এসি-র জন্য লোড বাড়ান, তা হলেও তা কিছুটা বাড়বে। সংস্থার আরও দাবি, এনার্জি চার্জের যে ছ’টি স্ল্যাব রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র একটিতেই (দ্বিতীয় ধাপে) তা সামান্য বেড়েছে। সর্বোচ্চ স্তরে চার্জ একই রয়েছে। বাকি চারটি স্তরেই তা কিছুটা কমেছে। তবে এই সব কিছুর জন্য গ্রাহকের অস্বাভাবিক অঙ্কের বিল পাওয়ার কথা নয়।

গ্রাহকদের একাংশের দাবি, বণ্টন সংস্থার এলাকায় তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়া হয়। সিইএসসি এলাকার মতো প্রতি মাসে বিল দেওয়া হোক। কতটা ইউনিট খরচ হচ্ছে স্পষ্ট বোঝা যাবে। কোনও মাসে বেশি টাকা আসলে পরের মাসে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে। সব মিলিয়ে সহজ ও স্বচ্ছ হবে বিদ্যুতের বিল। যদিও বণ্টন সংস্থার সূত্রের দাবি, তাদের এলাকা সিইএসসি-র চেয়ে অনেক বড়। মাসে বিল দেওয়া কঠিন। আর স্ল্যাব মাসের হিসাবেই তিন মাস একসঙ্গে ধরে বিল হয়। তবে এত জটিলতায় যেতে নারাজ গ্রাহকদের চিন্তা এই চড়া বিল থেকে কী করে মুক্তি পাবেন, তা নিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WBSEDCL Electricity Bills West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE