Advertisement
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
Tax

ঝোঁক নতুন কর কাঠামোয়, সঞ্চয়ে ধাক্কার আশঙ্কা

নতুন কর কাঠামোয় নাম লেখালে বেশিরভাগ ছাড় থেকে বঞ্চিত হবেন মানুষ। এর আওতায় ৮০সি ধারায় বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর করছাড় মিলবে না।

An image of Tax

—প্রতীকী চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৭:০৮
Share: Save:

প্রায় পাঁচ মাস হল নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয়েছে। এই বছরে বড় বদল এসেছে
ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে। আগের বারের মতো এ বারও দু’টি কর কাঠামো। তবে আগের বছর যেটি বিকল্প ছিল, চলতি অর্থবর্ষে তাকে দেওয়া হয়েছে প্রধান হওয়ার মর্যাদা। তার উপর সেটিতে ভাল রকম ‘মিষ্টির’ প্রলেপ লাগানো হয়েছে। ফলে নতুন এবং প্রধান ওই কর ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে বেশ আকর্ষণীয়। আয়ের স্তর ও করের হারের বিচারে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বহু রোজগেরের কাছে তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হতে পারে। বেশিরভাগ করদাতাই যেহেতু এই আয়ের সীমার মধ্যে পড়েন, তাই তাঁদের অনেকে এটি বেছে নিতে পারেন। সত্যিই তা হলে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে লগ্নিতে।

নতুন কর কাঠামোয় নাম লেখালে বেশিরভাগ ছাড় থেকে বঞ্চিত হবেন মানুষ। এর আওতায় ৮০সি ধারায় বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর করছাড় মিলবে না। ছাড় থাকবে না এনপিএস অ্যাকাউন্টে আরও ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জমায়। ৮০ডি ধারায় স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে, ৮০ জি ধারা অনুযায়ী দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানে, এমনকি গৃহঋণের সুদেও করছাড় নেই। একটি হিসাব বলেছে নানা সূত্রে প্রাপ্য ছাড়ের অঙ্ক কম-বেশি ৪ লক্ষ টাকা হলে, তবেই পুরনো কর কাঠামোয় থাকা লাভজনক হতে পারে। যেহেতু বেশিরভাগই এতটা ছাড়ের যোগ্য হন না, তাই তাঁরা চলে যেতে পারেন নতুন ও প্রধানটিতে। যাঁদের আয় ৭.২৭ লক্ষ পর্যন্ত, তাঁদের রিবেট ধরে এতেও কর দিতে হবে না। ১৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ের করদাতাদের চোকাতে হবে অনেকটাই কম। অর্থাৎ লাভ বিচার করে তাঁরা বেছে নেবেন কে কোন কাঠামোয় থাকবেন। এই বাছাইয়ের কাজটা দ্রুত সেরে নিয়ে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবর্ষের কর-পরিকল্পনা করতে হবে।

চিন্তার বিষয় হল, করদাতাদের অধিকাংশ নতুন কাঠামোয় গেলে ধাক্কা খেতে পারে লগ্নি ও সঞ্চয়ের দুনিয়া। ৮০সি ধারায় লগ্নির প্রকল্পগুলি প্রায় শুকিয়ে যাবে। মিউচুয়াল ফান্ডের করসাশ্রয়কারী ইএলএসএস সাধারণ করদাতার পুঁজি তেমন টানবে না। জমা কমতে পারে পিপিএফ, এনপিএস, এনএসসি-র মতো প্রকল্পেও। প্রিমিয়াম জমায় ৮০সি এবং ৮০ডি ধারায় ছাড় না থাকায় আকর্ষণ কমতে পারে জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার। কারণ, দেশে এখনও বহু মানুষ বিমা করেন করে ছাড় পেতে, জীবন বা স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা রক্ষার খাতিরে নয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে নতুন কর কাঠামোয় সঞ্চয়ের তো বটেই, বিমার অভ্যাসও কমার আশঙ্কা। যা ক্ষতিকর। এতে তাঁদের বড় মেয়াদে সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ কমবে। বিমা অবহেলিত হলে সুরক্ষাও বিঘ্নিত হবে।

নতুন কর কাঠামোয় কর বাঁচানোর জন্য তেমন লগ্নি করতে হবে না। আবার অনেকের টাকা বাঁচতে পারে কর বাবদ দায় কমায়। ফলে তাঁদের হাতে থাকবে বাড়তি নগদ। ভোগ্যপণ্য কিনতে তা খরচ করলে সম্পদ সৃষ্টি হবে না। তাই কর বাঁচানোর তাগিদ না থাকলেও, তা বড় মেয়াদে বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাতে তৈরি হবে আর্থিক সুরক্ষা। যাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁরা সঞ্চয় চালাতে পারেন পিপিএফে। সুরক্ষিত এই প্রকল্পে সুদ ৭.১%। তাতে কর বসে না। যাঁরা ঝুঁকি নিতে পিছপা নন, তাঁরা ফান্ডে এসআইপি করতে পারেন। সঙ্গে স্বাস্থ্য ও জীবন বিমাও চালাতে হবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE