Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ফেড রেট বাড়লেও ধাক্কা সামলে নেবে বাজার

অবশেষে আমরা প্রবেশ করেছি ‘ফেড সপ্তাহে’। সুদের হার বাড়ানো হবে কি না, সে ব্যাপারে এই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। বেশ কয়েক মাস টালবাহানার পরে এ বার যে সুদ বাড়ানো হতে পারে, সে ব্যাপারে এক রকম স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেড কর্ণধার জ্যানেট ইয়েলেন।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

অবশেষে আমরা প্রবেশ করেছি ‘ফেড সপ্তাহে’। সুদের হার বাড়ানো হবে কি না, সে ব্যাপারে এই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। বেশ কয়েক মাস টালবাহানার পরে এ বার যে সুদ বাড়ানো হতে পারে, সে ব্যাপারে এক রকম স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেড কর্ণধার জ্যানেট ইয়েলেন। মার্কিন মুলুকে এখন সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি। যদি বাড়ানো হয়, তবে তা হবে ২০০৬ সালের পরে এই প্রথম।

সুদ বাড়লে তার প্রভাব পড়বে বিশ্ব জুড়ে। বেশ কয়েক মাস হল ভারতীয় অর্থনীতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে ফেড জুজু। ব্যাপারটি সামাল দেওয়ার জন্য ভারত যে-সব পদক্ষেপ করেছে, তাতে বর্ধিত ফেড রেট ঘাড় মটকাতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার রঘুরাম রাজন। তবে ফেড রেট বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় ভারতীয় শেয়ার সূচকের বেলুনে একটি মাঝারি মাপের ফুটো অবশ্যই হয়েছে, যা দিয়ে গত ১০ দিনে সেনসেক্স ও নিফ্‌টির হাওয়া অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছে। ২৪ হাজারে নেমে গিয়েও কোনওক্রমে সেনসেক্স শুক্রবার আবার ২৫ হাজারে ফিরে এসেছে। এই বছরের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সেনসেক্স এখন ৫,০০০ পয়েন্ট নীচে। শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ১৭ শতাংশ।

সামনের ১৫/১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গল/বুধবার) নাগাদ জানা যাবে ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ সপ্তাহটা গোটা বিশ্বের লগ্নিকারীদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক ভারত এই ব্যাপারে কতটা আঘাত পেতে পারে।

প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ এত বছর পরে মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়ার প্রশ্ন উঠল কেন?

বেশ কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দার পরে মার্কিন অর্থনীতি ঝিমিয়ে ছিল। এই সময়ে শিল্প-বাণিজ্যকে নানা ভাবে উৎসাহ দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে। অর্থনীতির হাল খারাপ থাকায় সুদ বাড়ানোর প্রশ্ন ছিল না। তবে গত কয়েক মাস হল মার্কিন অর্থনীতিতে উন্নতির হাওয়া লেগেছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান বাড়লে মানুষের হাতে বেশি টাকা আসবে এবং তার ফলে আশঙ্কা থাকবে মূল্যবৃদ্ধির। সুদের হার বাড়ালে বাজারে ডলারের জোগান এবং পণ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অল্প মাত্রায় সুদ বাড়লে তার প্রভাব মার্কিন শিল্প-বাণিজ্যের পক্ষেও কষ্টকর হবে না।

তবে ও দেশে সুদ বাড়লে যে-সব সংস্থা ঋণ করে ভারতের মতো উন্নয়নশীল বিশ্বে লগ্নি করেছে, তাদের অনেকে লগ্নি গুটিয়ে, ঋণ শোধে ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। নিজের দেশে সুদ বাড়লে এবং লগ্নির পরিবেশ উন্নত হলে বিদেশ থেকে লগ্নি গুটিয়ে স্বদেশে পুঁজি ঢালার কথাও ভাববে বহু সংস্থা। ফলে আশঙ্কা, ভারতের মতো দেশ থেকে লগ্নি তথা ডলার প্রস্থান করতে পারে। ফেড রেট বাড়তে পারে এই আশঙ্কাতেই গত দু’সপ্তাহে এক নাগাড়ে শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। এর ফলে এক দিকে শেয়ার সূচক পড়েছে, অন্য দিকে বেড়েছে টাকায় ডলারের দাম। ডলারের দাম পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৬৭ টাকায়। এতে বাড়বে আমদানির বিল। অবশ্য বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমতে থাকায় তা সাহায্য করবে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে।

জল্পনা চলছে সুদ কতটা বাড়াতে পারে ফেডারেল রিজার্ভ, তাই নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, সুদ বাড়বে কিস্তিতে, অল্প অল্প করে। হয়তো প্রথম দফায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট। তা যদি হয়, তবে ভারতের বড় কোনও চিন্তার কারণ থাকবে না। কারণগুলি বিশদে উল্লেখ করা হল সঙ্গের সারণিতে।

প্রসঙ্গত, ভারতের অর্থনীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও শনিবারই জানিয়েছেন, এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছুঁতেই পারে। শিল্পোৎপাদন এক লাফে অনেকটা বাড়ার পাশাপাশি নভেম্বরে গাড়ি বিক্রিও বেড়েছে ১০.৩৯ শতাংশ।

অর্থাৎ লগ্নির গন্তব্য হিসেবে ভারত এখন অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা। এত উর্বর জমি ছেড়ে সবাই চলে যাবে, তা কখনওই সম্ভব নয়। আশা, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ভারতীয় অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজার আবার এগিয়ে যাবে। দেখা যাক সপ্তাহের দ্বিতীয় ভাগটা কেমন যায়। অন্য দিকে এই ধাক্কায় ফেড রেট যদি না-বাড়ে, তবে সেনসেক্স যে এক ঝটকায় হাজার পয়েন্ট বাড়বে তা ধরেই নেওয়া যায়।

ফেড রেট বাড়ার আশঙ্কায় শেয়ার বাজার যখন ঝিমিয়ে, তখন রমরমা অবস্থা নতুন ইস্যুর বাজারে। গত সপ্তাহে বাজারে আসা দুই নতুন ইস্যু অ্যালকেম এবং ডা.লাল প্যাথল্যাবস ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে যথাক্রমে ৪৪ এবং ৩৩ গুণ। অর্থাৎ বাজারে নথিবদ্ধ হলে ভালই প্রিমিয়াম পাবেন এই দুই ইস্যুর লগ্নিকারীরা। আগামী দিনে যে-সব সংস্থাকে আইপিও-র বাজারে দেখতে পাওয়া যাবে, তাদের মধ্যে থাকবে ইনফিবিম, টিমলিজ, কুইক হিল, ম্যাট্রিক্স সেলুলার, ম্যাট্রিমনি ডট কম ইত্যাদি।

চলতি সপ্তাহে এক অতিকায় করমুক্ত বন্ড ইস্যু নিয়ে বাজারে হাজির হবে জনপ্রিয় ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি (এনএইচএআই)। ইস্যুর আকার ১০,০০০ কোটি টাকা। ১৫ বছর মেয়াদে ছোট লগ্নিকারীরা এই ইস্যুতে সুদ পাবেন ৭.৬০ শতাংশ হারে। আগের দুটো ইস্যু থেকে একটু হলেও বেশি। ১০ বছর মেয়াদে সুদ পাওয়া যাবে ৭.৩৯ শতাংশ। এই ইস্যুতে ৪,০০০ কোটি টাকার বন্ড সংরক্ষিত থাকবে খুচরো লগ্নিকারীদের (১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আবেদন) জন্য। অর্থাৎ আবেদন করে পুরোটা পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে এই ইস্যুতে। ইস্যু খুলছে ১৭ ডিসেম্বর। আবেদনের কোনও অংশ ফেরত দেওয়া হলে তার উপর সুদ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ হারে।

২০ এবং ৩০% করের আওতায় পড়েন এমন ব্যক্তিরা এই বন্ডে লগ্নি করে করমুক্ত আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। ট্রিপল-এ যুক্ত এই ইস্যু সুরক্ষার দিক থেকে খুব ভাল। ন্যূনতম আবেদনের অঙ্ক ৫,০০০ টাকা। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহে বেশ সজাগ এবং সক্রিয় থাকতে হবে লগ্নিকারীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE