Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বুল-দৌড় থামাতে পারে অশান্ত সীমান্ত

জিএসটি-র প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন হবে, তা নিয়ে এখনও বিশ্লেষণ চলছে। নিরন্তর মাপজোক চলছে শিল্প-বাণিজ্যে। এ পর্যন্ত শেয়ার বাজারের উপর জিএসটি-র প্রভাব ভালই বলতে হবে। গত সপ্তাহে তো সেনসেক্স গড়েছিল সর্বকালীন রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তা বন্ধ হয় ৩১,৩৬৯ অঙ্কে।

অমিতাভ গুহ সরকার শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

দশম দিনে পড়ল জিএসটি জমানা। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে পণ্য, পরিষেবার উত্তাল বাজার। যে-কোনও নতুন আইন বা পদ্ধতি চালু হলে প্রথম দিকে কম-বেশি অসুবিধা হয়। পুরনো ছেড়ে নতুনকে গ্রহণ করতে তৈরি হয় মানসিক বাধাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ব্যবস্থা যত সড়গড় হয়, ততই তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট যখন প্রথম চালু হয়েছিল, তখন একই ভাবে চিন্তায় পড়েছিলেন লগ্নিকারীরাও। এখন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট ছাড়া শেয়ারে লগ্নির কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। জিএসটি বা পণ্য-পরিষেবা করও আগামী এক-দু’মাসে গা-সওয়া হয়ে যাবে।

জিএসটি-র প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন হবে, তা নিয়ে এখনও বিশ্লেষণ চলছে। নিরন্তর মাপজোক চলছে শিল্প-বাণিজ্যে। এ পর্যন্ত শেয়ার বাজারের উপর জিএসটি-র প্রভাব ভালই বলতে হবে। গত সপ্তাহে তো সেনসেক্স গড়েছিল সর্বকালীন রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তা বন্ধ হয় ৩১,৩৬৯ অঙ্কে। নিফ্‌টিও প্রথম বারের জন্য স্পর্শ করেছিল ৯,৭০০-এর মাত্রা। অর্থাৎ ১০ হাজার ছুঁতে আর বাকি মাত্র ৩০০ পয়েন্ট। আশাবাদীরা মনে করছেন, তা হতে আর খুব দেরি হবে না। জিএসটি চালু হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে বড় কোনও বিপত্তি না-হওয়ায় ‘বুল’-রা বাজার পাকাপাকি ভাবে দখলে রাখতে চাইছে। এখনও পর্যন্ত বর্ষা আশা মতো হওয়ায় তা-ও ‘বুল’-দের মদত জোগাচ্ছে। সীমান্তে অশান্তি ছাড়া বাকি সবই এখন সদর্থক।

তবে আশার পাশাপাশি বাজারের নিয়ম অনুযায়ী সংশোধনের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সূচক একটু বে‌শি উচ্চতায় উঠলে বিক্রির চাপ বাড়ে। তখন অবশ্য সুযোগ আসে অপেক্ষাকৃত কম দামে শেয়ার কেনার। শিল্প-বাণিজ্যের উপর জিএসটি-র প্রভাব কেমন হল, তার আঁচ পাওয়া যাবে এপ্রিল-জুন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফলে। আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে গত তিন মাসের ফলাফল প্রকাশের পালা। জিএসটি চালু হওয়ার কারণে ছোট এবং মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ব্যবসা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক নতুন কাজ তৈরি হবে হিসাব-রক্ষক এবং কর- পরামর্শদাতাদের জন্য।

নোট বাতিলের জের এবং কর আদায়ের কড়াকড়িতে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ছে বেশ সন্তোষজনক ভাবে। জুনে অগ্রিম কর জমা বেড়েছে ৪০ শতাংশ। সরকারের আশা, চলতি বছরে মোট করদাতার সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। জুন পর্যন্ত আয়করের রিটার্ন দাখিল বেড়েছে ১৫ শতাংশ। জিএসটি চালু হওয়ার কারণে আরও বহু মানুষ সরাসরি করের আওতায় আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কর ব্যবস্থা যে-দিকে এগোচ্ছে, তা অর্থনীতির জন্য ভাল বলেই মনে করা হচ্ছে।

জিএসটি চালু হওয়ায় কিছু পণ্য ও পরিষেবার যেমন দাম বেড়েছে, তেমনই দাম কমতেও শুরু করেছে কোনও কোনও পণ্যের। গাড়ি এবং বাইকের দাম কমানোর কথা ঘোষণা করেছে বেশির ভাগ সংস্থা। মজুত মালপত্র বিক্রি হলে এবং নতুন পণ্য বাজারে আসতে শুরু করলে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের (এফএমসিজি) দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকে বিশেষ ভাবে আঘাত করবে নতুন পরিষেবা কর। যে-সব অত্যাবশ্যক পণ্যের উপর জিএসটি-র হার একটু উপরের দিকে (১৮ থেকে ২৮ শতাংশ), সেগুলির ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারীদের কিছু কিছু সংগঠন সরকারের কাছে কর কমানোর দরবার করার পথে এগোচ্ছে। জিএসটি কাউন্সিল এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা-ই এখন দেখার।

এ বার নজর ঘোরানো যাক মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে। ব্যাঙ্ক-সুদ নামতে থাকায় কমছে বন্ডের ইল্ড। বাড়ছে বন্ডের বাজার দর। ফলে ব্যাঙ্ক ছেড়ে অনেকেই ঝুঁকছেন ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ডের প্রতি। অন্য দিকে বেশ কিছু দিন ধরে শেয়ার বাজার তেজী থাকায় দ্রুত লগ্নি বাড়ছে ইকুইটি ফান্ডেও। সব মিলিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের এখন রমরমা অবস্থা। চাহিদা ভাল রকম লগ্নি বাড়ছে দ্বিতীয় স্তরের শহরগুলি থেকে। গত মে মাসে দেশের ৪২টি মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯.০৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.২২ লক্ষ কোটি টাকা বেশি। এই সময়ে দেশের ছোট শহরগুলি থেকে (বড় ১৫টি শহর বাদ দিয়ে) লগ্নি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল ফান্ড জগতের বিশদ তথ্য। অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজার যে-দিকে এগোচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ফান্ডে লগ্নি আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE