আগুন আটকে পড়া তিন জনকে উদ্ধারের পরে তাঁদের সঙ্গে ধ্রুবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। রবিবার সিঁথিতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
ঘরের ভিতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। কালো ধোঁয়ায় ভিতরের কিছুই দেখার উপায় নেই! বাইরের রাস্তায় তখন প্রতিবেশীদের ভিড়। সকলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। এর মধ্যেই আগুন লাগা ঘর থেকে আটকে পড়া বাসিন্দাদের একে একে বার করে আনছেন এক ব্যক্তি।
রবিবার সকালে একটি একতলা বসত বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল সিঁথির কাঠগোলা এলাকা। ওই বাড়ির দুই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাসিন্দা-সহ তিন জনের প্রাণ বাঁচিয়ে নির্লিপ্ত বছর ষাটের ধ্রুবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ বাঁচানোকে তিনি ‘কর্তব্য’ হিসেবেই দেখছেন।
জানা গিয়েছে, সিঁথি থানার কাঠগোলা এলাকায় ওই একতলা বাড়িতে স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বছর সত্তরের সঞ্জীব সরকার। ছোট ছেলে অন্যত্র থাকেন। অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারের কর্মী সঞ্জীবের স্ত্রী এবং বড় ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। দু’জনের কেউই ঠিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। সঞ্জীব নিজেও বয়সজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের দেখাশোনা করেন এক মহিলা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ একতলা এই বাড়ির ভিতর থেকে প্রথমে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। যদিও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা কার্যত ঘিরে নেয় গোটা বাড়ি। সেই সময়ে বাড়ির ভিতরেই ছিলেন তিন জন। স্থানীয়েরা পুলিশ এবং দমকলকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি আটকে পড়া তিন জনকে বাইরে আনার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু আগুনে এমন ভাবেই আটকে পড়েছিলেন তিন জন যে বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা ছিল না।
চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে চলে এসেছিলেন স্থানীয় দোকানি ধ্রুবপ্রসাদ। ভিতরে আটকে থাকা তিন জনকে উদ্ধার করতে তিনিই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঢুকে যান। তাঁর কথায়, ‘‘তখন প্রাণের ঝুঁকির কথা মাথায় আসেনি। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখি, কালো ধোঁয়ায় ঘর ভরে রয়েছে। মা-ছেলে বিছানাতেই শুয়ে। হতভম্ব হয়ে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে বাড়ির কর্তা।’’ ধ্রুবপ্রসাদ বলেন, ‘‘কোনও কিছু না ভেবেই প্রথমে সঞ্জীববাবুকে বার করে আনি। এর পরে একে একে কোলে করে তাঁর ছেলে এবং স্ত্রীকে বার করি। বাইরে বেরোনোর সময়ে তীব্র আওয়াজে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেছিল। সেই সময়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আর হয়তো প্রাণে বেঁচে বেরোনো হবে না। কোনও মতে আগুনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।’’
তিন জনকে বার করে আনার মিনিট পনেরো পর দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রায় ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। যদিও তার আগেই কার্যত ভস্মীভূত হয়ে যায় গোটা বাড়ি। বাড়ির কর্তা সঞ্জীব বলেন, ‘‘দু’জনে অসুস্থ হওয়ায় রাতে ওদের ঘুমের ওষুধ দিতে হয়। আমি নিজেও ঘুমের ওষুধ খাই। তাই আগুন লাগলেও ঘুমিয়ে থাকায় প্রথমে জানতে পারিনি। চিৎকার-চেঁচামেচিতে যখন বুঝতে পারি, তখন আমাদের বেরোনোর উপায় ছিল না। কেউ সাহায্য না করলে তিন জনেরই আজ পুড়ে মৃত্যু হত।’’
এ দিকে এই আগুন লাগার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিঁথি থানার পুলিশ। শর্ট সার্কিট, না কি পুজোর ঘর থেকে আগুন লেগেছিল, স্পষ্ট নয় তা। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘরের ভিতরে সিলিং দরমার বেড়া দিয়ে করা ছিল। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy