Advertisement
১১ মে ২০২৪

রাজ্যে আইনি জটে আটকে হার্ডওয়্যার পার্ক প্রকল্প

আইনি লড়াইয়ে থমকে রাজ্য সরকার পরিকল্পিত হার্ডওয়্যার পার্ক। ২০১০ সালে বাম জমানাতেই সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্কের শিলান্যাস হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয় জমি।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

আইনি লড়াইয়ে থমকে রাজ্য সরকার পরিকল্পিত হার্ডওয়্যার পার্ক।

২০১০ সালে বাম জমানাতেই সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্কের শিলান্যাস হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয় জমি। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ১১ একরের পার্কে ২০টি সংস্থার জায়গা হওয়ার কথা। এই জমি নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। জমির সঠিক দাম দেওয়া হয়নি বলে জনৈক জমিদাতা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর এই আইনি জটে আটকে গিয়েছে হার্ডওয়্যার শিল্পতালুকের লগ্নি। এখনও চালু হয়নি অনলাইনে জমি নিলাম বা ই-অকশন। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের ক্ষোভ। রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল এই পার্ক তৈরি ও চালু করার দায়িত্বে রয়েছে। সমস্যা নিয়ে সংস্থার কেউ অবশ্য মুখ খোলেননি।

সফটওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে শুধরে নিতে চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। আর তৃণমূল সরকার আর এক ধাপ এগিয়ে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায় ঢুকিয়েছে সৌর বিদ্যুত্‌ তৈরির যন্ত্রপাতিও। নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও বিশেষ জায়গা পেয়েছে হার্ডওয়্যার শিল্প। তবুও এই শিল্পে দেশের বাজারে রাজ্যের উপস্থিতি প্রায় না-থাকার মতো।

শিল্পমহল অবশ্য মনে করে, শুধু নীতি থাকলেই চলে না। প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে চাই সেই নীতি কার্যকর করার মতো পরিবেশ। তাদের অভিযোগ, সরকার নিজের তৈরি সমস্যার কারণেই বিপদে পড়েছে। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের আপত্তি সকলেরই জানা। আর সেই অবস্থানের কারণেই সোনারপুরের ছোট জমি নিয়েও মামলা হচ্ছে। বিরোধী আসনে বসে কেন্দ্রের জমি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর পশ্চিমবঙ্গে জমির মালিকের সঙ্গে মামলা লড়ছে তাদের শাসিত সরকারই।

প্রকল্প থমকানোয় শুধু লগ্নি নয়, আটকে গিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। সরকারি সূত্রের খবর, সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্ক চালু হলে প্রায় হাজার দুয়েক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। আর পরোক্ষ কর্মসংস্থান কমপক্ষে দশ হাজার।

২০১২ সালে সোনারপুর ছাড়া আরও ৩টি হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য। কিন্তু ঘোষণার বাইরে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে হার্ডওয়্যার সমেত ইলেকট্রনিক্স-এর বাজার দাঁড়াবে ৪০,০০০ কোটি ডলার। আর ২০২০ সালে দেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০,৪০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিপুল ফারাক। যা আবার তৈরি করেছে ব্যবসার আকাশছোঁয়া সম্ভাবনা। কিন্তু তা ছুঁতে পারার মতো উৎপাদন পরিকাঠামো রাজ্যে এখনও নেই বললেই চলে। ফলে সেই বাজার কার্যত রাজ্যের অধরা।

শিলান্যাসের পরে ৩টি সংস্থা জমি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে টাকাও জমা দেয়। পরে অবশ্য দু’টি সংস্থা জমি কেনার আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ তখনও নির্বাচন ও সরকার পরিবর্তনের ডামাডোলে পার্কের কাজ বিশেষ হয়নি। অর্থাৎ নতুন বিনিয়োগ টানার আগেই হাতছাড়া হতে শুরু করে প্রতিশ্রুত লগ্নি।

এর পরেই টনক নড়ে রাজ্যের। ২০১২ সালে পার্কের রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুত্‌ সংযোগের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়তে রাজ্য প্রায় ৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরি হওয়ার কথা ছিল। হিসেব মতো ২০১৫ সালে পার্ক পুরোদমে চালু করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। আইনি জ়ট ছাড়িয়ে পার্ক কবে চালু হয় এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

legal hardware park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE