আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করার দাওয়াই এ বার রাজ্য বাজেটে।
নোটের চোটে বেসামাল আবাসন শিল্পকে ছন্দে ফেরাতে শুক্রবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ক্রেতাদের বেশ কিছু ছাড় ও সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিক্রির চুক্তির (‘এগ্রিমেন্ট টু সেল’) ভিত্তিতে হাতবদলের জন্য কিস্তিতে স্ট্যাম্প ডিউটি মেটানোর সুবিধা, রেজিস্ট্রেশনে ছাড় ইত্যাদি। এ দিন বাজেট পেশ করে অমিতবাবু জানান, এ বার ফ্ল্যাট বুকিং করে প্রথমে ২% স্ট্যাম্প ডিউটি দিলেই চলবে। বাকি ৫% টাকা পরের চার বছরে ধাপে ধাপে দেওয়া যাবে। এই সময়ের মধ্যে পরিবারের সদস্যের নামে ওই সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন করা হলেও সুবিধা বহাল থাকবে। পাশাপাশি এক লপ্তে টাকা মেটানোর জন্যও ছাড় দিচ্ছে রাজ্য। বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার প্রথম এক বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সেরে নিলে সরাসরি ২০% ছাড় পাবেন ক্রেতা।
এ সবই ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতাদের ফের বাজারমুখো করবে বলে মনে করছেন আবাসন নির্মাতারা। তবে অনেকে বলছেন, কেন্দ্রের নোট বাতিলের পরে বিক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে বহু ফ্ল্যাট-বাড়ির হাতবদল হয়েছে। বিক্রয় চুক্তির উপর ২% হারে স্ট্যাম্প ডিউটি নেওয়া কার্যকর হবে ২০১৫-র ১ জানুয়ারি থেকে। অর্থাৎ নোট বাতিলের সময়ে যে-সব সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি হয়েছে, সেগুলিও এর আওতায় আসবে। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণায় ওই সব বেআইনি লেনদেন আইনি বৈধতা পেয়ে যাবে না তো?
প্রসঙ্গত, নোটের আকালে কলকাতায় ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে। ২০১৬-র শেষ ত্রৈমাসিকে ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা কম হয়েছে এ ক্ষেত্রে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোষাগারেও স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে ৩০ কোটি টাকা কম জমা পড়েছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষা দেখিয়েছে এ সব তথ্য। কর বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটে স্ট্যাম্প ডিউটিতে সুবিধা দিয়ে এই ঘাটতিই পূরণ করতে চায় রাজ্য।
এই নতুন নিয়মে খুশি আবাসন শিল্পমহল। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই বেঙ্গলের অন্যতম কর্তা সুশীল মোহতা জানান, নতুন প্রস্তাবে নির্মাণ সংস্থা, ক্রেতা ও সরকার, তিন পক্ষই লাভবান হবে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে ফ্ল্যাট কেনার পরে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ক্রেতার হাতে টাকা থাকে না। তখন ফ্ল্যাটের অধিকার পাওয়াও সমস্যা হয়। রেজিস্ট্রেশন পিছিয়ে গেলে সরকারের কোষাগারেও টাকা ঢোকে না।’’
গৃহঋণ নিয়ে কেনা বাড়িতে সমস্যা আরও জটিল হয়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী এক লপ্তে রেজিস্ট্রেশন না-করলে ‘পজেশন সার্টিফিকেট’ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বাধা দেয়। আটকে যায় নির্মাণ সংস্থার প্রাপ্য শেষ কিস্তির টাকা। নতুন নিয়মে এই সমস্যা মিটবে বলে মনে করেন ইডেন রিয়্যালটির সচ্চিদানন্দ রাই ও বিজিএ রিয়্যালটির রাজীব ঘোষ। পাশাপাশি বাড়ি কেনার প্রথম এক বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সেরে সরাসরি ২০% ছাড় পেলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আবাসনের ক্রেতারা স্বস্তি পাবেন বলে মনে করছেন ক্রেডাই-কর্তা নন্দু বেলানি।
শিল্পমহলের মতে, দেরিতে স্ট্যাম্প ডিউটি মেটানোর সুযোগ দেওয়ায় অন্য যে-সব সুবিধা মিলবে, তার মধ্যে আছে:
l বিক্রয় চুক্তির উপর প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন সেরে নিয়ে চার বছর পরে যখন ক্রেতা চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন করবেন, তখনও পুরনো হারেই সম্পত্তির মূল্যায়ন হবে। l সম্পত্তি কেনার সময়ে যদি বাবা-মায়ের নামে ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনা হয়, চার বছর পরে তাঁরা সন্তানের নামেও রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারবেন। মালিকানা বদল নিয়ে তেমন ঝামেলা থাকবে না। l কেনার চার বছরের মধ্যে মারা গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যও চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন ও নাম বদল করতে পারবেন। আগে এ ব্যবস্থা ছিল না।
অনেকের অবশ্য অভিযোগ, নোট বাতিলের পরে রাজ্যে বহু ফ্ল্যাট বিক্রয় চুক্তির ভিত্তিতেই হাতবদল হয়েছে শুধু কালো টাকায়। সেগুলিকে আইনি বৈধতা দেওয়া নিয়ে আশঙ্কাও তৈরি হয়। এখন সহজেই সে সব সম্পত্তি আইনি বর্ম পেতে পারবে। পাশাপাশি কালো টাকায় কেনা সম্পত্তি সাদা করতে চার বছর সময়ও মিলবে বলে প্রশ্ন অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy