Advertisement
১১ মে ২০২৪
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ওঠার আশায় মত বদল

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কড়া শর্ত বসাতে চায় ইরান

বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো বন্ধু ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যেও কড়া শর্ত বসানোর দিকে ঝুঁকছে ইরান। ইরানের সঙ্গে পরমাণু ক্ষেত্রে রফার পথে হাঁটতে গত এপ্রিলে প্রাথমিক ভাবে একমত হয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়া। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যে দেশকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়েছিলেন, যাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে বিপদের কথা ঢাক পিটিয়ে প্রচার করেন মার্কিন কূটনীতিকরা, সেই ইরানের সঙ্গে সমঝোতার প্রথম ধাপই হল দীর্ঘ এক দশক ধরে বহাল থাকা আন্তর্জাতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া।

নয়াদিল্লি
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো বন্ধু ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যেও কড়া শর্ত বসানোর দিকে ঝুঁকছে ইরান।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু ক্ষেত্রে রফার পথে হাঁটতে গত এপ্রিলে প্রাথমিক ভাবে একমত হয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়া। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যে দেশকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়েছিলেন, যাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে বিপদের কথা ঢাক পিটিয়ে প্রচার করেন মার্কিন কূটনীতিকরা, সেই ইরানের সঙ্গে সমঝোতার প্রথম ধাপই হল দীর্ঘ এক দশক ধরে বহাল থাকা আন্তর্জাতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া। এর জেরে কার্যত একঘরে হয়ে থাকা ইরানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ইউরোপ,আমেরিকা-সহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে ফের চালু হবে বাণিজ্যিক লেনদেন।

দিন বদলের আশায় ইরান তাই এ বার দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানো ভারতের সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তির শর্ত মেনে চলার ব্যাপারেও বেঁকে বসেছে। প্রসঙ্গত, সরাসরি আর্থিক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে ভারত বাধ্য ছিল না বলেই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে তা মেনে চলার ব্যাপারে চাপ ছিল আমেরিকার। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের তালিকায় থাকা যে-সব চুক্তির শর্ত ভাঙতে পারে ইরান, সেগুলি হল:

ভারত থেকে রেলওয়ে ট্র্যাক আমদানির চুক্তিতে কড়াকড়ি। ২৩.৩০ কোটি ডলারের (১৪৪৪.৬০ কোটি টাকা) এই চুক্তি সই হয় অক্টোবরে। সেই অনুযায়ী ভারতের স্টেট ট্রেডিং কর্পোরেশন (এসটিসি) মারফত স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া ও জিন্দল স্টিলের ওই রেল ট্র্যাক সরবরাহ করার কথা। সব কিছু স্থির হয়ে গেলেও এখন ইরান অন্য দেশের কাছেও প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়ে দরপত্র ডাকতে আগ্রহী। ভারত ইতিমধ্যেই দর ৭ শতাংশ কমিয়ে করেছে ২১.৭০ কোটি ডলার। ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা আরও ছাড় চায়।

যথেষ্ট পরিমাণে ইরানের তেল আমদানি করে ভারত। আমেরিকার শর্ত ছিল তা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু দেশে তেলের জোগান নিশ্চিত করতে ভারত অনেক সময়েই বাড়তি আমদানি করেছে। এ বার ভারতকে দেওয়া কিছু সুবিধার প্রতিশ্রুতি তুলে নিতে চেয়ে কার্যত হুমকি দিয়েছে ইরান। ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি জানিয়েছে, পরিবহণ খরচ বাবদ বাড়তি অর্থ না-নিতেও আর রাজি নয় তারা।

গত ২০১৩ সালেই ইরান তার ফারজাদ-বি গ্যাস ক্ষেত্রের দায়িত্ব উৎপাদন ভাগাভাগির ভিত্তিতে ভারতকে দেওয়ার প্রস্তাব আনে। নিষেধাজ্ঞা ওঠার সম্ভাবনায় সেই প্রস্তাব তুলে নিয়েছে ইরান। বরং তারা ওই গ্যাস ক্ষেত্র নিলাম করার কথা জানিয়েছে।

পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী, পরমাণু অস্ত্রের উপযোগী সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ কমানো থেকে শুরু করে পরমাণু প্রকল্পে আন্তর্জাতিক নজরদারি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। এর জেরেই নিষেধাজ্ঞা ওঠার আশায় ভোল বদলেছে তারা। এপ্রিলেই ভারত বাণিজ্য সচিব রাজীব খেরকে তেহরানে পাঠিয়েছিল রেল ট্র্যাক সরবরাহ চুক্তির পুরনো শর্ত মেনে চলার ব্যাপারে রাজি করাতে। তাঁকে খালি হাতেই ফিরতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE