বড় অঙ্কের আয়কর রিফান্ড আটকে রাখা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে যাতে অন্তত আমজনতার মধ্যে ক্ষোভ না ছড়ায়, তার জন্য ছোট অঙ্কের রিফান্ড ফিরিয়ে দিতে তৎপর ছিল আয়কর দফতর।
বাজেটের আগে থেকেই আয়কর দফতরের কাছে অর্থ মন্ত্রকের অলিখিত নির্দেশ ছিল, রিফান্ডের অঙ্ক ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে, আপাতত তা আটকে রাখা হোক। কিন্তু সাধারণ চাকুরিজীবী, মধ্যবিত্তরা তার জন্য যাতে অসুবিধায় না পড়েন, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনেই এ বার ৫০ হাজার টাকার কম রিফান্ড, বিশেষ করে যাঁদের কর ফেরতের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার কম, তাঁদের টাকা দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এতদিন যে সরকারের অলিখিত নির্দেশেই ৫০ হাজার টাকার বেশি অঙ্কের রিফান্ড আটকে রাখা হয়েছিল, তা আয়কর দফতরের কর্তারা স্বীকার করতে চাননি। কিন্তু এ বার অর্থ মন্ত্রকের নিজস্ব পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে, আয়কর দফতর কম টাকার রিফান্ড ফেরাতে বেশি নজর দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবর্ষের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ২ কোটি ৬ লক্ষ করদাতা রিফান্ড পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ করদাতার রিফান্ডের অঙ্ক ৫০ হাজার টাকার কম। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, ৯৩.৭০ লক্ষ করদাতারই রিফান্ডের অঙ্ক ৫ হাজার টাকারও কম। ৫০ হাজার টাকার বেশি অঙ্ক হলেও রিফান্ড ফেরত পেয়েছেন, তাঁদের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার। কম অঙ্কের রিফান্ড ফিরিয়ে দেওয়ায় এ বছর যে বেশি তৎপরতা দেখানো হয়েছে, তার প্রমাণ, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ইতিমধ্যেই রিফান্ড পেয়ে যাওয়া ছোট করদাতার সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। তাঁদের রিফান্ড পাওয়া টাকার অঙ্কের পরিমাণও বেশি। এমনিতে বেশি রিফান্ড পাওয়া মানুষের সংখ্যা কম অঙ্ক ফেরত পাবেন, এমন জনের তুলনায় বেশিই হওয়ার কথা। কিন্তু তা মাথায় রেখেও দু’য়ের মধ্যে ফারাক নজর কাড়ার মতো।
মোদী সরকার যে বড় অঙ্কের রিফান্ড আটকে রেখে রাজস্ব আয় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে, তা নিয়ে আগেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
খতিয়ান
• করের টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে ১৫ মার্চ পর্যন্ত
• পেয়েছেন ২.০৬ কোটি করদাতা
• এর মধ্যে ১ কোটি ৮৬ লক্ষের ক্ষেত্রে ফেরতের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার কম
• এর মধ্যে ৯৩.৭০ লক্ষ করদাতার রিফান্ড পাঁচ হাজার টাকারও নীচে
• ৫০ হাজার টাকার বেশি পেয়েছেন মাত্র ২০ হাজার জন
• ৫০ হাজারের বেশি রিফান্ড ছাড়া শুরু হবে এপ্রিলের মাঝামাঝি
অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, প্রতিবারই অর্থ বছরের শেষে বড় অঙ্কের রিফান্ড আটকে রাখতে হয়। যাতে কোষাগার ফুলেফেঁপে থাকে এবং রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য পূরণ হয়। নতুন বছরের শুরু থেকে তা ছাড়া শুরু হয়। এ বছর এমনিতেই অরুণ জেটলি চাপে। জিএসটি চালু হওয়ার পরে পরোক্ষ কর থেকে আয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই জেটলিকে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩.২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩.৫ শতাংশ করতে হয়েছে। তারপরেও ফেব্রুয়ারির শেষে ঘাটতি সারা বছরের হিসেবের ১২০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অঙ্কের রিফান্ড ছাড়া শুরু হবে। এতদিন হয়নি কেন? আয়কর কর্তাদের যুক্তি, অনেকে আইটিআরভি (ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ভেরিফিকেশন ফর্ম) জমা করেননি। অনেকে সব আয়ের উৎস জানাননি। যেমন অনেকেই ফিক্সড ডিপোজিট বা সুদ থেকে আয় জানাতে ভুলে যান। ফলে আয় ও করের হিসেবে গরমিল দেখা দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy