Advertisement
০২ মে ২০২৪
Export

ফের রফতানি সঙ্কুচিত, কেন্দ্রকে সতর্কবার্তা

আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রফতানির জন্য উৎপাদন। ২০১৭-১৮ সালে জিডিপিতে তার ভাগ ছিল ১৮.৮%।

An image of Export

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৪
Share: Save:

বৃদ্ধি অনেক দূর। একটানা ১০ মাস ধরে কমে চলেছে ভারতের রফতানি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা সঙ্কুচিত হয়েছে ২.৬%। অগস্টে কমেছিল ৩.৮৮% (সংশোধিত, আগে বলা হয়েছিল ৬.৮৬%)। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর— এই ছ’মাসেও রফতানি ৮.৭৭% কমেছে। বাণিজ্য মহলের একাংশের হুঁশিয়ারি, বিশ্ব বাজারে তলিয়ে যাওয়া এই বিক্রিবাটার মাসুল গুনতে হতে পারে দেশকে। যার থেকে বাঁচার পথ একমাত্র অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। দু’একটি দেশের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তা করেছে নয়াদিল্লি। তবে ভারতীয় পণ্যের বড় বাজার, এমন আরও অনেক বেশি সংখ্যক অর্থনীতির সঙ্গে দ্রুত সেই প্রক্রিয়া সারতে হবে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রফতানির জন্য উৎপাদন। ২০১৭-১৮ সালে জিডিপিতে তার ভাগ ছিল ১৮.৮%। ২০২১-২২ সালে বেড়ে হয়েছে ২১.৪%। ফলে রফতানি কমলে কল-কারখানায় পণ্যের উৎপাদন কমবে। ধাক্কা লাগবে আর্থিক বৃদ্ধিতে। এমনিতেই চড়া বেকারত্বে নাকাল দেশে কর্মসংস্থান আরও কমার আশঙ্কা তৈরি হবে। চাকরি খোয়াবেন অনেকে। ক্ষয়ে যেতে থাকবে দেশের অসময়ের ভরসা বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার। সরকারও রাজস্ব হারাবে।

কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ভারতের রফতানি কমে হয়েছে ৩৪৪৭ কোটি ডলার। আমদানি খরচও ১৫% কমেছে। তবে তার পরেও বিদেশ থেকে পণ্য-পরিষেবা কেনার অঙ্ক ৫৩৮৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ রফতানি খাতে আয় যা হচ্ছে, আমদানিতে ব্যয় তার থেকে অনেক বেশি। ছ’মাসের হিসাব ধরলেও ছবিটা এক। রফতানির অঙ্ক ২১,১৪০ কোটি। আমদানির ১২.২৩% কমেও ৩২,৪৯৮ কোটি। অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের বেড়েছে। এর ফলেও ডলার খরচ হচ্ছে বেশি। রফতানি কমতে থাকায় সেই ক্ষতি উসুল করা যাচ্ছে না। টাকার আরও অবমূল্যায়নের আশঙ্কা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই ডলার ৮৩ টাকার উপরে পৌঁছেছে।

অনির্বাণ, অজিতাভর মতো বিশেষজ্ঞেরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মদতপুষ্ট হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাতের জেরে পশ্চিম এশিয়া অশান্ত হওয়ার দরুন। তাঁদের দাবি, চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং লাগাতার সুদ বৃদ্ধির জেরে বহু দিন ধরে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো ভারতের রফতানির বড় বাজারগুলিতে চাহিদা ধুঁকছে। তার উপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বাজার। হামাসের আক্রমণের পরে ইজ়রায়েল পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়ায় আগামী দিনে রফতানির আরও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কারণ ভারতে অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য সহযোগী তেল আভিভ। ফলে চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন অনির্বাণ।

অজিতাভ জানান, ডলার আয়ের থেকে খরচ বেশি হলে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কমতে থাকে। যা দেশের অন্যতম শক্তি। সেটাও চিন্তার। এই পরিস্থিতিতে রফতানিকারীদের সংগঠন ফিয়োর পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান যোগেশ গুপ্তার বার্তা, রফতানি বাণিজ্যের তলিয়ে যাওয়া আটকানোর একমাত্র পথ, অবাধ বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। কালক্ষেপ না করে কেন্দ্রকে উদ্যোগী হতে হবে। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কথা চলছে অনেকের সঙ্গে। কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক মতান্তরে সেই প্রক্রিয়া বাধা পেলেও দ্রুত ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় অঞ্চলের সঙ্গে তা সেরে ফেলা দরকার।

তবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়ালের দাবি, সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যানে উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কট মাথায় নিয়েই ভারতের রফতানি এগোচ্ছে। এপ্রিল, মে, জুন, জুলাইয়ে সঙ্কোচন ১০ শতাংশের উপরে ছিল, এখন তার নীচে নেমেছে। ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, মালটা, ফিলিপিন্সের মতো নতুন নতুন বাজারে পা রাখা হচ্ছে। তাঁর আশা আগামী ছ’মাসে রফতানি বৃদ্ধির কক্ষপথে ফিরবে। আমদানি কমার কারণ হিসেবে কেন্দ্রের নেওয়া বিকল্প নীতি (দেশীয় উৎপাদনে জোর), বিশ্ব বাজারে তেল-সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমার কথাও বলেছেন তিনি।

আমদানি এবং রফতানি, দু’টিই কমার ফলে সেপ্টেম্বরে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। সরকারি হিসাবে তা এখন ১৯৩৭ কোটি ডলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Export India Export Crisis Export Hub
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE