—প্রতীকী ছবি।
ভারত যে বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির তকমা ধরে রাখতে পারবে, সে বিষয়ে এখন সমস্ত পক্ষই একমত। কিন্তু অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের ধারণা, এই বিপুল আর্থিক কর্মকাণ্ড বৈষম্যকে বিন্দুমাত্র কমাতে পারবে না। আর বৈষম্য যোঝার অন্যতম অস্ত্র যে বেকারত্ব, তাকে নামিয়ে আনাও তৃতীয় মোদী সরকারের জন্য হতে পারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই মতামত।
গত ১৫ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে ৫১ জন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করেছে রয়টার্স। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল লোকসভা ভোটের মাঝামাঝি সময় থেকে ফলাফল পরবর্তী দু’সপ্তাহের মধ্যে। সেখানে ৪৩ জন বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরে আর্থিক বৈষম্য উল্লেখযোগ্য ভাবে কমার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী নন। তাঁদের ২১ জন না-কমা নিয়ে কার্যত নিশ্চিত। কমার ব্যাপারে আশাবাদী ছ’জন। বাকি দু’জন নিশ্চিত, বৈষম্য কমবে।
আইআইটি দিল্লির অর্থনীতির অধ্যাপক ঋতিকা খেরার কথায়, ‘‘সমস্যার কথা স্বীকার করে নেওয়াটাই হবে প্রথম ভাল পদক্ষেপ। বৈষম্য কমানোর বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই নেই।... এটা এমন জিনিস নয় যে নিজে থেকে চলে যাবে। তার জন্য সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’’ অনেকে মনে করাচ্ছেন, গত মার্চে ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের রিপোর্টের কথা। যেখানে বলা হয়েছিল, উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির মধ্যেও ভারতের বৈষম্য মাত্রাতিরিক্ত বেশি। সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের শিল্প অর্থনীতির অধ্যাপক শৈবাল কর বলছেন, ‘‘বর্তমান সরকার এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যেখানে মধ্য আয়ের গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসছে। দরিদ্ররা বেঁচে আছেন সরকারি অনুদানে। আর ধনীরা ভর্তুকি পাওয়ার ফলে বন্ধু পুঁজিপতি বাড়ছে।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, মোদী সরকার ২০১৪-এ বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও তা পূরণ হয়নি। বরং উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র মে মাসের সমীক্ষাও দেখিয়েছে , দেশে বেকারত্ব ৭%। যা অতিমারির আগের চেয়েও বেশি। মানুষের হাতে রোজগার পৌঁছে দিতে না পারা বৈষম্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাঁদের আরও বক্তব্য, ভোটের আগেই আগামী পাঁচ বছর ৮১ কোটি মানুষকে নিখরচায় রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এটি আদতে বৈষম্য ও বেকারত্ব সম্পর্কে মোদী সরকারের নীরব স্বীকারোক্তি। ৫৪ জন অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞের মধ্যে অন্য এক সমীক্ষা চালিয়েছিল রয়টার্স। সেখানে ৪৯ জনই বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরে বেকারত্বই হতে চলেছে কেন্দ্রের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ভারতের সমস্যা বড় অদ্ভুত। আর্থিক বৃদ্ধির উঁচু হার, অথচ কর্মসংস্থানে তার প্রতিফলন নেই।’’
সকলে অবশ্য এ বিষয়ে একমত নন। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অর্থ ব্যবস্থার অধ্যাপক নাগপূর্ণানন্দ প্রবালার মতে, ‘‘বৈষম্যের বিষয়টি ভারতের ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থবহ বলে মনে হয় না। আর্থিক ভাবে নিচু অংশের মানুষের কতটা উন্নতি হচ্ছে বা তাঁরা কেমন জীবনযাপন করছেন সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy