Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩
রিপোর্টে তবু হতাশা ঘুরে দাঁড়াতে দেরি নিয়ে

বৃদ্ধির চাকায় গতি বাড়ার ইঙ্গিত আগামী অর্থবর্ষেই

বিশ্ব অর্থনীতির মেঘলা আকাশে ভারতই যে উজ্জ্বল বিন্দু, সম্প্রতি তা বারবার বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তুলে ধরেছে, আগামী দিনে অর্থনীতির আন্তর্জাতিক আঙিনায় অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে তার উঠে আসার সম্ভাবনার কথা। এ বার সেই আশার আগুনে ঘি ঢালল মার্কিন আর্থিক সংস্থা মর্গ্যান স্ট্যানলিও।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

বিশ্ব অর্থনীতির মেঘলা আকাশে ভারতই যে উজ্জ্বল বিন্দু, সম্প্রতি তা বারবার বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তুলে ধরেছে, আগামী দিনে অর্থনীতির আন্তর্জাতিক আঙিনায় অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে তার উঠে আসার সম্ভাবনার কথা। এ বার সেই আশার আগুনে ঘি ঢালল মার্কিন আর্থিক সংস্থা মর্গ্যান স্ট্যানলিও।

Advertisement

এক সমীক্ষায় তাদের ভারতীয় শাখার দাবি, গতি ফিরতে শুরু করেছে গত কয়েক বছরে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া ভারতীয় অর্থনীতির চাকায়। আগামী অর্থবর্ষে তা আরও স্পষ্ট বোঝা যাবে। কারণ, বাজারে ক্রেতা-গ্রাহকদের তরফে চাহিদা দ্রুত বাড়বে। পছন্দের পণ্য-পরিষেবা কিনতে বেশি টাকা ঢালবেন তাঁরা। চাহিদা বাড়িয়ে বেসরকারি লগ্নিকে উৎসাহ দিতে পরিকাঠামো উন্নয়নে মোটা অঙ্ক লাগাবে কেন্দ্র। তার উপর এই মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধির হারও নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর জমি তৈরি বলে মনে করছে সংস্থাটি। বাজি ধরছে ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত হওয়ার উপর।

মার্কিন সংস্থাটির ধারণা, ২০০৪-২০০৭ সালের মধ্যের বৃদ্ধি হয়তো এখনই ছোঁওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু ১৯৯৮-২০০২ সালের মধ্যে বৃদ্ধি নুয়ে পড়ার পরে ভারতের অর্থনীতি যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, এ বারও তা শুরু হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে স্পষ্ট ভাবে তা সামনে আসার সম্ভাবনা।

তবে অর্থনীতির হাল ফেরাতে মোদী সরকারের কাছে প্রত্যাশা যে আরও বেশি ছিল, তা মেনে নিয়েছে মর্গ্যান স্ট্যানলি ইন্ডিয়া। বলেছে, ২০১৪ সালে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও হতাশাজনক ভাবে তেমন হাওয়া লাগেনি বৃদ্ধির পালে। বিশ্ব অর্থনীতির উথাল-পাথাল ও তার জেরে রফতানি কমাকেই এর জন্য মূলত দায়ী করেছে তারা।

Advertisement

সম্প্রতি মর্গ্যান স্ট্যানলির ভারতীয় শাখার তরফে ওই রিপোর্ট তৈরি করেছেন চেতন আহিয়া। সেখানে দেখিয়েছেন, ১৯৯৮-২০০২ আর ২০১৩-২০১৬— দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই দুই সময়ের মধ্যে মিল চোখে পড়ার মতো। দুই সময়েই সরকারি ও বেসরকারি লগ্নির অঙ্ক কম। বৃদ্ধির হার ঢিমে। কিন্তু তেমনই কয়েকটি বিষয়ে সাম্প্রতিক ফারাকও নজরকাড়া। যেমন, অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়াতে এ বার বিপুল অঙ্কের সরকারি পুঁজি ঢালার উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। সেই টাকা লগ্নির কথা বলা হচ্ছে রেল, রাস্তা, বন্দর-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নে। অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে যা একান্ত জরুরি। রেকর্ড অঙ্কে পৌঁছেছে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির অঙ্ক। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৫,৫০০ কোটি ডলার জিডিপির ২.৭%। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। মাত্রা ছাড়ায়নি রাজকোষ ঘাটতিও। লক্ষ্মণরেখার মধ্যে রয়েছে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের ঘাটতিও। সুতরাং সব মিলিয়ে, বৃদ্ধির গতি ফেরার জমি তৈরি।

তার উপর সম্প্রতি মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বেড়েছে কেন্দ্রীয় কর্মীদের। সেই সঙ্গে, নতুন লগ্নির হাত ধরে বাড়বে কাজের সুযোগ। এই জোড়া কারণে ভারতের বাজারে চাহিদা দ্রুত বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

অনেকে বলছেন, এই সমীক্ষা হাসি ফোটাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মুখে। দু’জনেই বারবার বলেছেন, টালমাটাল আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধির গতিকে কিছুটা শ্লথ করে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সংস্কার এগোচ্ছে ঠিক পথে। তাঁদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির এলোমেলো হাওয়া ভারতের গায়ে লাগছে। চিন্তায় রেখেছে টালমাটাল চিনা অর্থনীতি। কিন্তু চারপাশে এমন অনিশ্চয়তার বাতাবরণেও বৃদ্ধি ৭-৭.৫ শতাংশের মধ্যে। ফলে আগামী দিনে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেই, তা আরও বেশ খানিকটা উঠবে বলে তাঁদের আশা।

আহিয়ার রিপোর্টও বলছে, মোদী সরকার আসার পরে অর্থনীতিতে যে গতি আমদানির আশা ছিল, তা পূর্ণ হয়নি। সরকারি নীতি মোটামুটি ঠিক পথে চলেছে। কিন্তু বৃদ্ধিকে পিছু টেনে ধরছে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি আর বেহাল রফতানি। অর্থাৎ, সেখানে উন্নতি হলে এ দেশেও বৃদ্ধির ইঞ্জিন পুরোদমে দৌড়বে বলে তাঁদের আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.