Advertisement
১১ মে ২০২৪

সফর-সঙ্গী

বিদেশে পাড়ি দেওয়ার তোড়জোড় মানেই হাজারো পরিকল্পনা। কিন্তু নানা বিপদ-আপদের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সেই তালিকায় ভ্রমণ-বিমা করানোর বাধ্যবাধকতাও মনে রাখা জরুরি। সেই বিমার প্রয়োজনই মনে করালেন দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত বিদেশে পাড়ি দেওয়ার তোড়জোড় মানেই হাজারো পরিকল্পনা। কিন্তু নানা বিপদ-আপদের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সেই তালিকায় ভ্রমণ-বিমা করানোর বাধ্যবাধকতাও মনে রাখা জরুরি।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ১৩:০৪
Share: Save:

বেড়াতে যাওয়া মানেই এক ঝলক ক্লান্তি জুড়োনো দমকা হাওয়ার হাতছানি। আর তা যদি হয় বিদেশে, তবে মজাটা একলপ্তে বেড়ে যায় বহু গুণ। জোরকদমে চলতে থাকে প্রস্তুতি। কিন্তু সে সবের মধ্যে কেউ কি একবারও ভাবেন, বিদেশ-বিভুঁইয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে? চিকিৎসার অর্থ কোথা থেকে আসবে? যদি বিমানের মালপত্র খোয়া যায়? ফিরে এসে যদি দেখেন চুরি-ডাকাতি হয়ে গিয়েছে বাড়িতে?

বেড়ানোর আনন্দে ঢুকে পড়া এই সব চিন্তা খুবই বেমানান ও বেসুরো। কিন্তু বাস্তবকে যুঝতে তৈরি থাকাও জরুরি। না-হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন কাটানো মানুষ প্রিমিয়াম গুনে স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা করেন কেন? কেনই বা দুর্ঘটনা ও শারীরিক অক্ষমতার সুরক্ষা ব্যবস্থা এত গুরুত্ব পায়! ঠিক সেই কারণে বিশেষত বিদেশে যাওয়ার জন্যও ভ্রমণ-বিমা জরুরি। যা বাধ্যতামূলক না-হলেও, বাড়তি সুরক্ষাকবচ। প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতেই তার হাত ধরা দরকার। আজকের আলোচনা এই ভ্রমণ-বিমা নিয়েই। যা আদপে জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমা এবং সম্পত্তি-বিমার যোগফল।

সুযোগ-সুবিধা

এ বার প্রশ্ন হল, কখন পাশে পাবেন বেড়াতে যাওয়ার সুরক্ষাকবচকে? এটা জানা থাকলে বিমা করার লক্ষ্যে এগোতে সুবিধা হবে অনেকটাই। সেই তালিকায় রয়েছে—

• বিদেশে থাকার সময়ে অসুস্থতার দরুন বা দুর্ঘটনায় বিমাকারীর মৃত্যু। সে ক্ষেত্রে বিমার টাকা তাঁর পরিবার পাবে। পাওয়া যেতে পারে মরদেহ দেশে আনার জন্য পরিবহণ খরচও। কোনও কোনও বিমা সংস্থা শর্তসাপেক্ষ অন্ত্যেষ্টির খরচও দেয়।

• বিদেশে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা অসুস্থ হলে, তার চিকিৎসা খরচ। এই খরচের বেশ কিছুটা ক্যাশলেস। বাকিটা দেশে ফিরলে মিটিয়ে দেয় (রিএমবার্সমেন্ট) বিমা সংস্থা। হাসপাতালে ভর্তি না-হতে হলেও অনেক সময়ে চিকিৎসার খরচ
পাওয়া যায়।

• কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা দুর্ঘটনায় জখম হলে, সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে আনার খরচ।

• বিমানে ‘চেক্‌ড-ইন’ মালপত্রের নিরাপত্তা।

• বিমান দেরি করার জন্য গুনতে হওয়া আর্থিক ক্ষতি।

• বিমান বদলে গন্তব্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে প্রথমটি দেরি করলে পরেরটি ধরতে না-পারা। তবে একই কারণে তৃতীয় বিমানটি ধরতে না-পারলে কিন্তু ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় না।

• বিমান ছিনতাই। কোনও কোনও বিমা সংস্থা এ জন্য দৈনিক একটা সীমা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়।

• পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়া বা কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

• বিদেশে থাকার সময়ে দেশে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা। সেখানে চুরি-ডাকাতি হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় এর আওতায়। তবে বাড়ি বিমাকারীর নামেই থাকতে হবে।

• দাঁতের ক্ষতি। অনেক সময় দেখা যায়, ঠান্ডার দেশে গিয়ে তাপমাত্রার হেরফেরের দরুন অনেকের দাঁতের ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য ডাক্তার-ওষুধে গচ্চা গেলে ক্ষতিপূরণ চাওয়া
যেতে পারে এর আওতায়।

তবে খেয়াল রাখবেন, সব বিমার ক্ষেত্রেই কিছু শর্ত থাকে। টাকা পাওয়ার সর্বোচ্চ সীমাও নির্দিষ্ট করা থাকে। দাখিল করতে হয় আর্থিক খরচ বা ক্ষতির উপযুক্ত প্রমাণ। তারপরে সেই সুবিধা পান বিমাকারী।

রকমফের

বিদেশ দেখার ‌ইচ্ছে অনেকেরই থাকে। কিন্তু টাকাপয়সা-সহ নানা কারণে বেশির ভাগেরই হয়ে ওঠে না। তাই যাওয়ার পরিকল্পনা এক্কেবারে পাকাপাকি হয়ে গেলে, তবেই ভ্রমণ-বিমা করান।

এই বিমা দু’ধরনের—

• ব্যক্তিগত: সফর নিজের উদ্যোগে হলে। ছেলে-মেয়ে বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে ঘুরতে গেলে। কিংবা স্রেফ পড়াশোনার জন্য পাড়ি দিলে।

এটি প্রতিটি ব্যক্তি নিজের জন্য আলাদা করে করতে পারেন। পরিবারের জনা পাঁচ-ছয় সদস্যকে সামিল করে করা যেতে পারে ফ্যামিলি ফ্লোটার। আর পরিবারের মধ্যের অথবা বাইরের কয়েক জনকে নিয়ে করা যায় গোষ্ঠী বিমা। এ ক্ষেত্রে বিমা করতে হলে একটি গোষ্ঠীতে কতজন সদস্যকে রাখতেই হবে, তার সংখ্যা সংস্থা নির্বিশেষে আলাদা হতে পারে।

• কর্পোরেট: কোনও সংস্থা তাদের অনেক কর্মীর জন্য একসঙ্গে বিমা করালে, তা এই বিমার আওতায় পড়ে। কাজের প্রয়োজনে যাঁদের বিদেশে ঘন ঘন যেতে হয়, তাঁদের জন্যও করানো হয় এ ধরনের বিমা। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে যা পুনর্নবীকরণ করা যায়।

কোন দেশে কোনটি

ভ্রমণ-বিমা বাছাবাছির ক্ষেত্রে কোন দেশে বেড়াতে বা কাজে যাচ্ছেন, সেটাও বিবেচনার বিষয়। যেমন—

• সাধারণত ইওরোপের শেনজেন গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি বাদে সারা বিশ্বে আর কোথাও ভ্রমণ-বিমা বাধ্যতামূলক নয়। শেনজেন গোষ্ঠীর আওতায় পড়ে অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, গ্রিস, সুইৎজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন পর্তুগাল, পোল্যান্ড-সহ মোট ২৬টি দেশ। এ সব জায়গায় সফরের জন্য ভ্রমণ-বিমা না-থাকলে ভিসার জন্য আবেদনই করা যায় না।

• বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূলত দু’ধরনের বিমার সুযোগ রয়েছে। একটি আমেরিকা ও কানাডা বাদে গোটা বিশ্ব ভ্রমণের জন্য। অন্যটি আমেরিকা ও কানাডাকে নিয়ে সারা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যেতে। ওই দুই জায়গায় চিকিৎসার খরচ বেশি বলেই এই বিভাজন।

• এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্যও আলাদা ভ্রমণ-বিমা চালু রয়েছে। সেই প্রকল্পগুলির আওতায় আবার অনেক সময়েই জাপান আসে না। কারণ সেই আমেরিকা, কানাড়ার মতো একই। চিকিৎসার খরচ তুলনায় বেশি সেখানে।

• এই কারণে কাজে বা বেড়াতে জাপানে গেলে আলাদা করে বিমা করাতে হয়।

কত দিনের জন্য

সাধারণত ব্যক্তিগত ভ্রমণ-বিমার মেয়াদ এক দিন থেকে শুরু করে ১৮০ দিন পর্যন্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে সময়সীমা পেরোনোর আগেই শর্তসাপেক্ষে তা আরও ১৮০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যায়।

আর বেশির ভাগ কর্পোরেট বিমাই এক বছরের। প্রিমিয়াম দিতে হয় এককালীন। এক বছর তা কার্যকর থাকলেও একসঙ্গে পুরোটার সুযোগ নেওয়া যায় না। এক একটি ‘ট্রিপ’-এ সর্বাধিক কত দিন ভ্রমণ করা যাবে তা নির্দিষ্ট করা থাকে। বছর বছর বিমা পুনর্নবীকরণের সুযোগ মিলতে পারে।

প্রিমিয়ামের খরচ

ভ্রমণ-বিমার মূল্য ও প্রিমিয়ামের পরিমাণ কতগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন—

• কত দিনের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তার উপরে নির্ভর করতে পারে বিমামূল্য। সেই অনুযায়ী প্রিমিয়াম কম বা বেশি হতে পারে।

• প্রিমিয়ামের পরিমাণ নির্ভর করে বিমাকারীর বয়সের উপরেও।

• তবে প্রিমিয়াম বিদেশ ঘোরার আনুষঙ্গিক খরচের তুলনায় সাধারণ ভাবে খুব যে বেশি হয়, তা একেবারেই নয়। বরং ভ্রমণ-বিমা বিদেশ-বিভুঁইয়ে প্রয়োজনে ত্রাণকর্তা হয়ে উঠতে পারে।

চাইলে বাড়তিও

এটা ‘অ্যাড অন’-এর যুগ। যা পাচ্ছেন, তার উপরি ঝুলিতে পোরার সুযোগ সব কিছুতেই। সে রকম ভ্রমণ-বিমাতেও ইচ্ছে করলে কেউ বাড়তি সুবিধা নিতে পারেন। যেমন, ব্যক্তিগত বিমা করালেন। সঙ্গে নিলেন নির্দিষ্ট কিছু জিনিসপত্রের (যেমন মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কম্পিউটার ইত্যাদি) আলাদা বিমা। বিদেশে গিয়ে সেগুলি হারালে বা ছিনতাই হলে ক্ষতিপূরণ মিলবে।

প্রবীণদের জন্য

বিমাকারীর বয়স ৭০ বছর পর্যন্ত হলে ভ্রমণ-বিমা করানোর সময়ে কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয় না। কিন্তু তার বেশি হলে কয়েকটি করানোর কথা বলা হয়। যদিও তা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিমা করার আগে প্রয়োজনীয় ওই সমস্ত পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট জমা দিলে সাধারণ ভাবে প্রিমিয়াম কম দিতে হতে পারে।

নমিনি

বিমা করাতে নমিনির নাম বাধ্যতামূলক। না-হলে আবেদনই করা যাবে না।

পড়তে গেলে

এ ক্ষেত্রেও ভ্রমণ-বিমার সুযোগ দেয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলি। পর্যটক এই বিমার যা যা সুযোগ পান, তা-ই পেতে পারেন পড়ুয়ারা। যাত্রাপথের জন্য বিমা ছাড়াও সে ক্ষেত্রে টিউশন ফি, জামিন বা খেলাধূলো করতে গিয়ে জখম হওয়া ইত্যাদির মতো বাড়তি কিছু পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণের সুবিধা দেয় কোনও কোনও সংস্থা। এ ছা়ড়া, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন করলে এক বছর করে পড়ুয়ার গোটা পাঠ্যক্রমের জন্যও আলাদা বিমা করায় সংস্থাগুলি।

যাত্রা বাতিল

যাত্রা শুরুর আগেই কেউ সফরের পরিকল্পনা খারিজ করলে, সেই বাবদ চার্জ বাদ দিয়ে প্রিমিয়ামের বাকি টাকা তাঁকে ফেরত দিতে পারে বিমা সংস্থা। তবে তিনি বিমার সুবিধা দাবি করতে পারেন না।

বিদেশে যাওয়ার পরে কোনও কারণে ফিরে আসতে বা সফর কাটছাঁট করতে বাধ্য হলে, শর্তসাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে বিমার সুবিধা দাবি করা যায়। তবে স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরে এলে তা চাওয়া যাবে না।

খেয়াল রাখুন

দেশের বাইরে গেলে প্রথমেই ভাল করে যাচাই করে নিন, বিমা প্রকল্পটি বিদেশের জন্যই কি না। দেশের মধ্যে হলেও দেখে নিতে হবে কোন কোন জায়গার জন্য।

ভিন্‌ দেশের জন্য বিমা হলে তাতে কী কী সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হবে, তা খতিয়ে দেখে নিন। কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোর পরে বিমামূল্য থেকে অল্প কিছু টাকা পরিষেবা খরচ হিসেবে কাটা হয়।

বিদেশে থাকার সময়ে বিমা সংস্থার সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ করবেন জেনে নিন। সমস্যায় পড়লে সাধারণ ভাবে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করতে বলে সংস্থাগুলি। তবে এখন ই-মেলের যুগ। তাই তাদের মেল-ঠিকানাও সঙ্গে রাখুন, যাতে হঠাৎ প্রয়োজনে সংস্থা বা এজেন্টকে মেল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে ওই মেল আপনার কাছে ঘটনার প্রমাণ হিসেবে একটা গুরুত্বপূর্ণ নথিও হয়ে থাকবে।

দরজা খোলা দেশেও

সাধারণত বিদেশে যাওয়ার জন্যই এত কাল বিভিন্ন প্রকল্প এনেছে বিমা সংস্থাগুলি। তবে এখন দেশের মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কয়েকটি চালু হয়েছে। অনেকেরই এমনিতে প্রচলিত স্বাস্থ্যবিমা থাকে। কিন্তু ভিন্‌ রাজ্যে বেড়াতে যাওয়া একই পরিবারের বা বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের সকলেরই তা না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেউ দুর্ঘটনায় জখম হলে বা কারও মৃত্যু হলে কোনও বিমার সুযোগ তিনি পাবেন না। তবে এ ক্ষেত্রেও যদি সকলের জন্য আলাদা করে ভ্রমণ-বিমা করানো থাকে, তা হলে সেই সব সমস্যায় পড়লে ওই ক’দিনের জন্য প্রত্যেক বিমাকারীই ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।

ওই সময়ে ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার জন্যই বিমা করার সুযোগ দেয় সংস্থাগুলি। তবে কেউ একই সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে অন্য সুবিধাও (যেমন বিমানে ‘চেক্‌ড-ইন’ ব্যাগ ও মালপত্র দেরিতে পৌঁছনো বা খোয়া যাওয়া, ভ্রমণ বাতিল, ‘কানেক্টিং’ বিমান ধরতে না-পারা ইত্যাদি) দেয়। কেউ আবার এগুলিকে আলাদা সুবিধা হিসেবে গণ্য করে প্রতিটির জন্য প্রিমিয়ামে পৃথক মাসুল নেয়। এখন ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ জনপ্রিয় হওয়ায় কিছু সংস্থা সে ক্ষেত্রে বিমার বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে কিছু সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলো বা কার্যকলাপে যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে বিমা করায়ই না।

সুযোগ নেই

যে সমস্ত ক্ষেত্রে বিমার সুযোগ মিলবে না, সেগুলি হল

•আগে থেকে থাকা রোগ লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরে অসুস্থ হলে বা মারা গেলে

•বিদেশ ভ্রমণে বা বিমানে চাপতে টিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকলে

•যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে যুদ্ধের ঝুঁকি থাকলে

•আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ও অপ্রকৃতিস্থ হলে

•ড্রাগ বা নেশার জন্য জখম হলে

সাবধান!

মাথায় রাখবেন, অনেকেই বিদেশে যাওয়ার আনন্দে নিজের রোগ-বালাইকে তেমন আমল দেন না। অথচ আগেই বললাম রোগ লুকিয়ে পাড়ি দিলে এবং অসুস্থ হলে ভ্রমণ-বিমা করা কাজে দেবে না। নষ্ট হবে টাকা। অকূলপাথারে পড়বেন। এমনকী সেখানে মৃত্যুর মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও বিমার ক্ষতিপূরণ মিলবে না। সুতরাং শুরু থেকেই মেপে-বুঝে পা ফেলা ভাল। তাই উচিত পুরনো অসুখ বিমা করানোর সময়েই জানিয়ে দেওয়া।

নথিপত্র

যে কোনও বিমা প্রকল্পের মতো বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত নথিপত্র জমা না-দিলে আর্থিক সুরক্ষার সুবিধা পাবেন না। এ ক্ষেত্রে সাধারণত লাগে—

•অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে বিমার পলিসি নম্বর। পলিসির কপি সঙ্গে থাকাও জরুরি

•যে-সব খরচ ক্যাশলেস হয় না, সেগুলির টাকা পরে পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে হাসপাতালের আসল বিল, ক্লিনিকের আসল বিল, বিমানের টিকিট, বোর্ডিং
পাস ইত্যাদি

•চেকড-ইন মালপত্র নষ্ট বা হারানোর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হলে বিমানের টিকিট, বোর্ডিং পাস

•বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবার ব্যাগ বা মালপত্র খোয়া যাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুলিশ-প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। সেই নালিশের কপিও দরকার হতে পারে

•এ ছাড়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিমার ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য আরও নানা ধরনের কাগজপত্র বা প্রমাণ লাগতে পারে। সে জন্য বিমা সংস্থার কাছ থেকে একেবারে শুরুতেই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া জরুরি। না হলে ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে সমস্যা হতে পারে

পাঠকের প্রশ্ন ?

প্রঃ পিপিএফ সম্পর্কে জানতে চাই। একে সঞ্চয়ের কাজে লাগানোর সঠিক পথ কী?

সায়ন্তনী কর, বেলেঘাটা

পিপিএফ লম্বা মেয়াদে টাকা জমানোর আদর্শ জায়গা। বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

• মেয়াদ ১৫ বছর।

• প্রাথমিক মেয়াদ শেষে ৫ বছর করে তা বাড়িয়ে নেওয়া যায়।

• বার্ষিক জমার সর্বাধিক পরিমাণ দেড় লক্ষ টাকা। জমায় করছাড় আছে ৮০সি ধারায়।

• বর্তমানে সুদ ৭.৯%।

• সুদ পুরোপুরি করমুক্ত।

• খাতা খোলার কয়েক বছর পরে জমার একাংশ তোলা ও ঋণ নেওয়ার সুবিধা আছে।

• স্বনির্ভরদের জন্য সুরক্ষা, আয় এবং করছাড়ের দিক থেকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকল্প।

• যাঁদের কর্মস্থলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা আছে, তাঁরাও জমাতে পারেন পিপিএফ প্রকল্পে।

• এই অ্যাকাউন্ট খোলা যায় বড় ডাকঘর এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট কিছু শাখায়।

পিপিএফ সঞ্চয়ের কাজে লাগানোর সঠিক পথ—

• দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখতে থাকুন।

• বছরে দেড় লাখের মধ্যে যতটা পারবেন জমানোর চেষ্টা করে যান।

প্রঃ স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে ৪ লক্ষ টাকা শিক্ষা-ঋণ নিলে আমাকে সুদ সমেত কত শোধ করতে হবে? আমার বাবা সরকারি চাকরি করেন। আয় ২.৫ লক্ষ টাকা। শিক্ষা-ঋণে কি কোনও
ভর্তুকি পাব?

তীর্থরাজ ভট্টচার্য, কোচবিহার

স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে কত সুদে শিক্ষা-ঋণ নিয়েছেন জানাননি। ফলে সুদ সমেত কত মেটাতে হবে, বলা সম্ভব নয়।

আয়কর আইনের ৮০ই ধারা অনুযায়ী, শিক্ষা-ঋণের উপর যে-সুদ দিতে হয়, তার পুরোটাতেই করছাড় পাওয়া যায়। অর্থাৎ করযোগ্য আয় থেকে সুদের অঙ্ক বাদ দেওয়া হয়।

পরামর্শদাতা:
অমিতাভ গুহ সরকার

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

travel insurance Foreign Trip obligation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE