Advertisement
১৮ মে ২০২৪
ব্যবসা ১২ কোটি ছাড়ালে তবেই শুল্ক, প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর

জেটলির আশ্বাস সত্ত্বেও ধর্মঘট আরও লম্বা হচ্ছে গয়না শিল্পে

তিন দিনের ধর্মঘট শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। কিন্তু তার বদলে দেশজুড়ে সমস্ত দোকানের ঝাঁপ আরও তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ক্ষুব্ধ সোনার গয়না ব্যবসায়ীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

তিন দিনের ধর্মঘট শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। কিন্তু তার বদলে দেশজুড়ে সমস্ত দোকানের ঝাঁপ আরও তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ক্ষুব্ধ সোনার গয়না ব্যবসায়ীরা। এমনকী সোনার গয়নায় উৎপাদন শুল্ক বসানোর প্রস্তাব ঘিরে তৈরি হওয়া সমস্যা অর্থমন্ত্রী খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস মেলার পরেও। শিল্পের ক্ষোভ দূর করতে শুক্রবার অর্থ মন্ত্রক শুল্ক-প্রস্তাবের ব্যাখ্যাও দিয়েছে। জানিয়েছে, বছরে ১২ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করলে তবেই ১% হারে উৎপাদন শুল্ক দিতে হবে সংশ্লিষ্ট গয়না সংস্থাকে। ফলে ছোট সংস্থাগুলি এর আওতার বাইরেই থাকবে। কিন্তু এই প্রস্তাব মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তাদের নাছোড় দাবি, গয়নায় উৎপাদন শুল্ক বসানোর প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিতে হবে কেন্দ্রকে।

এ বারের বাজেটে সোনার গয়নায় ১% হারে উৎপাদন শুল্ক বসানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার পরেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ধর্মঘটে যায় গয়না ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলি। ঠিক ছিল ২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে তা চলবে তিন দিন। কিন্তু প্রতিবাদের সুর চড়াতে শুক্রবার গয়না শিল্পমহলের সিদ্ধান্ত, এখনই শেষ নয়, আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চালানো হবে ধর্মঘট।

ক্ষোভের কারণ অবশ্য শুধুমাত্র উৎপাদন শুল্ক বসানোর প্রস্তাব নয়। কিছু দিন আগে ২ লক্ষ টাকা বা তার বেশি দামের গয়না কিনতে হলে বিলে প্যান নম্বর উল্লেখ করতে হবে বলে একটি নিয়মও চালু করেছে কেন্দ্র। শিল্পের অভিযোগ, এতে মার খাবে ব্যবসা। ফলে এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোও ধর্মঘটের অন্যতম উদ্দেশ্য। জেটলি অবশ্য এই সমস্যাও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘১২ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক ব্যবসার ক্ষেত্রে উৎপাদন শুল্ক বসানোর যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তা মানছি না। আমাদের দাবি, সোনার গয়নায় উৎপাদন শুল্ক বসানোর প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।’’

অবশ্য প্যান নম্বর জানানো নিয়ে গয়না ব্যাবসায়ীরা শর্তসাপেক্ষে কিছুটা নরম হতে রাজি। তাঁদের প্রস্তাব, ১০ লক্ষ টাকার উপর গয়না কেনার ক্ষেত্রে ওই নম্বর উল্লেখের নিয়ম চালু করা হলে আপত্তি করবেন না তাঁরা।

সোনার গয়নায় উৎপাদন শুল্ক বসলে, তা আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক বাস্তব সমস্যা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বাবলুবাবু। তাঁর মতে, নিয়ম মতো উৎপাদন শুল্ক দেওয়ার কথা গয়না প্রস্তুতকারকদের। অথচ আইনের দিক দিয়ে দেখতে গেলে গয়না বিক্রেতারা কিন্তু তা তৈরি করেন না। সেই কাজ করেন কারিগররা। এটা অনেকটা কুটির শিল্পের মতো। কারিগররা গয়না বিক্রেতা বা জুয়েলারদের কাছ থেকে বরাত নিয়ে এসে তা তৈরি করেন। সুতরাং উৎপাদন শুল্ক দিতে হলে তার দায় বর্তায় ওই সব কারিগরের উপরেই।

কিন্তু কারিগর বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি এতই ছোট মাপের যে, তাদের পক্ষে উৎপাদন শুল্ক হিসাব করা এবং সেই সংক্রান্ত খাতাপত্র রাখা প্রায় অসম্ভব। বাবলুবাবু বলেন, তা ছাড়া একটি গয়না তৈরি করতে ৭ থেকে ৮ জন কারিগরের ঘরে ঘরে ঘুরতে হয়। কেউ সোনা গালান, কেউ নকশা কাটেন, কেউ গয়নার উপর পাথর বসান এবং আরও অনেকে অন্যান্য বহু কাজ করেন। এর মধ্যে কার কার কাছে থেকে উৎপাদন শুল্ক নেওয়া হবে, তা ঠিক করার চেষ্টা একটি অবাস্তব পরিকল্পনা ছাড়া কিছু নয় বলেই মনে করেন তিনি।

এ দিকে, তিন দিনের ধর্মঘটে সারা দেশে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা মার খেয়েছে বলে জানিয়েছেন গয়না ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, ধর্মঘটের জেরে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ। শুধু এ রাজ্যেই গয়না বিক্রি থেকে ভ্যাট বাবদ সরকারের দৈনিক ৪০ লক্ষ টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন বাবলুবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jewelry industry Arun Jaitley srike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE