পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হলে চার রকম হারে কর বসানোর প্রস্তাব দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির নেতৃত্বে আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, নতুন জমানায় আগামী পাঁচ বছর রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি পুরোপুরি মিটিয়ে দিতে রাজি কেন্দ্র। ক্ষতির অঙ্ক হিসেব করার পদ্ধতি নিয়েও একমত পরিষদ।
করের হার ঠিক করা ও রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণের পদ্ধতি নিয়ে জট কাটাতেই এ দিন শুরু হয়েছে জিএসটি পরিষদের তিন দিনের বৈঠক। কেন্দ্রের প্রস্তাব: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্যে ১২% কর বসানো হবে। ভোগ্যপণ্যের উপরই সর্বোচ্চ ২৬% করের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গরিব ও আমজনতার কথা মাথায় রেখে আবশ্যিক খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য জরুরি পণ্যে প্রস্তাব ৬% করের। আর অন্য যাবতীয় পণ্যে ১৮% কর বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে পরিষদ। অবশ্য সোনায় আলাদা ভাবে প্রস্তাব ৪% হারের। রাজস্ব সচিব হাসমুখ অধিয়া জানান, পরিষেবার ক্ষেত্রে ৬%, ১২% ও ১৮% হারে করের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠক শেষে জেটলি জানান, ‘‘এখনও করের হার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কর কাঠামো নিয়ে পাঁচ রকম প্রস্তাব জিএসটি পরিষদের কাছে জমা পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনা চলবে।’’ করের হার ঠিক করায় কেন্দ্রের মূল ভাবনা ছিল, রাজস্ব আয় একই রাখা। জেটলি বলেন, এই রাজস্ব বলতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মোট রাজস্ব আয় ধরা হবে। ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ধরে ৫ বছর রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ মেটানোর কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ক্ষতির অঙ্ক কী ভাবে ঠিক হবে, তা নিয়ে আগে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষকে ভিত ধরে ও রাজ্যগুলির রাজস্ব ১৪% হারে বাড়ত ধরে নিয়ে ক্ষতির অঙ্ক ঠিক হবে।’’
কেন্দ্রের কর প্রস্তাবে অবশ্য বেশ কিছু রাজ্য আপত্তি জানিয়েছে। কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক মন্তব্য করেন, ‘‘যা ভয় ছিল, তা-ই এখন নিশ্চিত। জিএসটি-তে পিছনের দিকে হাঁটবে দেশ। ভোগ্যপণ্যে কর কমিয়ে ২৬% করার প্রস্তাব দিয়েছে পরিষদ। এ দিকে জরুরি পণ্যে হার বেড়ে হবে ১২%।’’
বিলাসবহুল গাড়ি থেকে শুরু করে তামাক, পান মশলা, সিগারেট, ঠান্ডা পানীয় সমেত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্যে ৪০% হারে কর বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিল মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের কমিটি। তার বদলে মাত্র ২৬ শতাংশেই কেন্দ্র কেন থামতে চাইছে, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগ উঠেছে, শিল্প সংস্থাগুলির চাপে পড়েই এই প্রস্তাব।
তবে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, এই ধরনের সব পণ্যে ২৬% হারে করের উপরও বাড়তি সেস বসবে। যা থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হতে পারে। তাতেই রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ মেটাবে কেন্দ্র। কারণ সেস বাবদ আয়ের অর্থ রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রকে ভাগ করে নিতে হয় না। সেখানেও অবশ্য আপত্তি উঠেছে। কারণ জিএসটি চালু হলে সেই করের সঙ্গেই যাবতীয় সেস মেশার কথা ছিল। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন্দ্র জিএসটি-র উপর সেস বসাতে চাইছে। যা জিএসটি-র ভাবনার বিরোধী।’’
জেটলি বলেন, ‘‘এখনও করের হার চূড়ান্ত হয়নি। তবে কোন নীতির উপর ভিত্তি করে তা স্থির হবে, তা ঠিক হয়েছে। কর এমন ভাবে বসানো হবে, যাতে এক, খুচরো বাজারে দাম বাড়বে না। দুই, কেন্দ্র, রাজ্য সরকারের হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকবে। তিন, করদাতার উপর অনাবশ্যক বোঝা চাপবে না। চার, রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি মেটাতে কেন্দ্রের বাড়তি আয়ের পথ করতে হবে।’’ জেটলি বলেন, হার চূড়ান্ত হলে কোন শ্রেণির আওতায় কোন পণ্য আসবে, তা ঠিক হবে।