Advertisement
E-Paper

টাটা গোষ্ঠীর রাশ চন্দ্রশেখরনের হাতে

তামিলনাড়ুর অখ্যাত গ্রাম থেকে যে ম্যারাথন দৌড় শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা দড়ি ছুঁল বম্বে হাউসে এসে!সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে দেওয়ার আড়াই মাসের মাথায় এ দিন নতুন কর্ণধারের নাম ঘোষণা করল টাটা গোষ্ঠী। জানাল, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের মূল সংস্থা টাটা সন্সে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন এন চন্দ্রশেখরন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৬

তামিলনাড়ুর অখ্যাত গ্রাম থেকে যে ম্যারাথন দৌড় শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা দড়ি ছুঁল বম্বে হাউসে এসে!

সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে দেওয়ার আড়াই মাসের মাথায় এ দিন নতুন কর্ণধারের নাম ঘোষণা করল টাটা গোষ্ঠী। জানাল, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের মূল সংস্থা টাটা সন্সে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন এন চন্দ্রশেখরন। ২০০৯ সাল থেকে যিনি টাটাদের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের শীর্ষ কর্তা। আর তাঁর জায়গায় টিসিএসের সিইও-এমডি হচ্ছেন রাজেশ গোপীনাথন।

চন্দ্রশেখরনের পুরো কর্মজীবনই কেটেছে টিসিএসে। ১৯৮৭ সালে যোগ দেওয়ার পরে ২০০৯ সালে সংস্থার সিইও-এমডি। তিনি যোগ দেওয়ার সময়ে সংস্থার কর্মী সংখ্যা ছিল পাঁচশো। এখন তা ৩ লক্ষ ৭১ হাজার। বছরে ব্যবসার অঙ্ক ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত আট বছরে তাঁর নেতৃত্বেও শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে দ্রুত গতিতে।

এ দিন বিবৃতিতে টাটা সন্স জানিয়েছে, ‘‘টিসিএসের কর্ণধার হিসেবে নেতৃত্বের আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছেন চন্দ্র। আমাদের বিশ্বাস, তিনি ধরে রাখবেন তার মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য।’’

চন্দ্রশেখরনও বলেছেন, দেড়শো বছরের পুরনো গোষ্ঠীর কর্ণধার হিসেবে যে রতন টাটা তাঁর উপর আস্থা রেখেছেন, সেই কারণে তিনি কৃতজ্ঞ ও সম্মানিত। টাটা সন্স চালাতে গিয়ে সমাজের উন্নয়নে টাটা ট্রাস্টসের অবদানও তাঁর মাথায় থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি মিস্ত্রি যে ভাবে লাগাতার রতন টাটা ও টাটা ট্রাস্টসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণাচ্ছেন, তাতে এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।

২৪ অক্টোবর সাইরাসকে সরিয়ে দেওয়ার পরে টাটা সন্সের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে ফেরেন রতন টাটা। উত্তরাধিকারীর খোঁজে গড়া হয় কমিটি। চন্দ্রর নাম শোনা যাচ্ছিল তখন থেকেই। অনেক সমালোচকের প্রশ্ন, তবে কি রতন টাটার প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্যই এই পদে তুলে আনল চন্দ্রকে? টাটাদের চোখে চোখ রেখে কি অপ্রিয় প্রশ্ন তুলতে পারবেন তিনি? সাহসী হতে পারবেন খরচ ছাঁটাই বা ব্যবসা গোটানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে? উল্লেখ্য, সরানোর পরে মিস্ত্রির অভিযোগ ছিল, তাঁকে ক্ষমতাহীন চেয়ারম্যান করতে চেয়েছিলেন টাটা।

চন্দ্রকে কাছ থেকে চেনা অনেকে বলছিলেন, তিনি আদ্যন্ত নেতা। ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি তাঁর নেই। কিন্তু সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আগে মানুষ চেনায় বিশ্বাসী বলে টিসিএসে অন্তত ৫,০০০ এগ্‌জিকিউটিভের নাম বলতে পারেন গড়গড়িয়ে। চট করে টাল খান না ব্যবসার উত্থান-পতনে। আর আছে লেগে থাকার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। নইলে গ্রাম থেকে উঠে এসে, প্রথম জীবনে ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ে, ছ’মাস নিজেদের জমিতে চাষের কাজ করেও আজ এখানে উঠে আসার কথা নয়। তাঁর দৌলতেই এই প্রথম টাটা গোষ্ঠীর শীর্ষ পদে বসছেন এমন কেউ, যিনি পার্সি নন।

কোনও কাজে তিনি কতটা একাগ্র, তার নিদর্শন তাঁর দৌড়-প্রেম। বাড়িতে ডায়াবেটিসের ধাত বলে নিছক শরীরচর্চা হিসেবে তা শুরু করেছিলেন। ক্রমশ তা বদলে গিয়েছে প্যাশনে। মুম্বই, নিউ ইয়র্ক, বস্টন, টোকিও থেকে বার্লিন— পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ম্যারাথন দৌড়ের ফিনিশিং লাইনে পৌঁছেছেন তিনি।

জীবনের ম্যারাথনে সর্বোচ্চ সাফল্যের ফিতেও সম্ভবত এ দিন ছুঁয়ে ফেললেন চন্দ্র। তামিলনাড়ুর অখ্যাত গ্রাম থেকে টাটাদের সদর দফতর বম্বে হাউসের ‘বস’। ম্যারাথন দৌড়ও বোধ হয় এত লম্বা নয়।

Natarajan Chandrasekaran Tata Sons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy