স্বাগত সম্বৎ ২০৭৩। রবিবার সন্ধ্যায় মুরত লেনদেন পর্বে বাজার সবুজে খুললেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। বন্ধের সময়ে কিছুটা ম্লানই ছিল সেনসেক্স ও নিফ্টি।
তবে মনে রাখতে হবে, ‘সকাল দেখে দিনটা কেমন যাবে তা বলা যায়’ এই কথাটি শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে তেমন খাটে না। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের কোনও অঘটন না-ঘটলে নতুন সম্বতে বাজার ভালই চাঙ্গা থাকবে।
রবিবার সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার বিশেষ কেনাবেচা শেষে সেনসেক্স এবং নিফ্টি সামান্য নেমে এলেও সামগ্রিক ভাবে বাজারের মুড কিন্তু ছিল বেশ চাঙ্গা। মুরত পর্বে বিএসই মিড ক্যাপ বেড়েছে ৬৫ পয়েন্ট বা ০.৪৮ শতাংশ এবং বিএসই স্মল ক্যাপ সূচক উঠেছে ১২৯ পয়েন্ট অর্থাৎ ০.৯৬ শতাংশ। ওই সন্ধ্যায় যতগুলি শেয়ার নেমেছে, তার প্রায় চার গুণ শেয়ারের দাম বেড়েছে। এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটাই হবে নতুন বছরে ‘বাজারের মুড’।
বাজার কেন চাঙ্গা থাকবে, তা বলতে গিয়ে অনেকেই ভাল বর্ষা, পণ্যমূল্য হ্রাস, গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফেরায় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা, চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি কমে আসা, সুদ ছাঁটাই, ইত্যাদির কথা উল্লেখ করছেন। সরকারের তরফেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে, কৃষি উৎপাদন এ বার বাড়বে ৪ শতাংশ এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার ছুঁতে পারে ৮ শতাংশ।
এই লক্ষ্যমাত্রায় যদি পৌঁছনো যায়, তবে যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা একটি বড় ‘বুল রান’ দেখব, তাতে সন্দেহ নেই। পাশাপাশি, বাজারের সতর্ক নজর থাকবে মার্কিন নির্বাচন, ফেড রেট বাড়ার সম্ভাবনা, উত্তরপ্রদেশের ভোট এবং সীমান্তে অশান্তির দিকে। পণ্য-পরিষেবা করের হার কত দাঁড়ায়, সে দিকেও তাকিয়ে লগ্নিকারীরা। সব মিলিয়ে রাজারের পরিবেশ এখন বেশ ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।
সদ্য শেষ হওয়া সম্বৎ ২০৭২ ছিল পণ্যের (কমোডিটি) বছর। ওই বছর ভাল লাভের সন্ধান দিয়েছে সোনা, রুপো, অশোধিত তেল-সহ বেশ কয়েকটি পণ্য। চলতি বছরেও সোনা-রুপো চাঙ্গা ভাব ধরে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, গ্রামের মানুষের হাতে টাকা এলে এ দেশে সোনার চাহিদা বাড়ে।
বাজারে এখন চলছে আর্থিক ফলাফল প্রকাশের ভরা মরসুম। গত সপ্তাহে ফল প্রকাশ করেছে একগুচ্ছ কোম্পানি। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল মোটের উপর ভালই বলতে হবে। টাটা-কাণ্ড বাদ না-সাধলে এই সব ফলাফল হয়তো অনেক শেয়ারকেই নতুন মাত্রা দিত। গত সপ্তাহে যে-সব সংস্থা ভাল ফল প্রকাশ করেছে, সেগুলির মধ্যে আছে মারুতি- সুজুকি, ওএনজিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল, বজাজ ফিনান্স, ইমামি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, আইটিসি, এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি, এশিয়ান পেন্টস, আদানি পোর্টস, এল অ্যান্ড টি ফিনান্স, আইডিএফসি ব্যাঙ্ক। যে-সব সংস্থা তেমন ভাল ফল প্রকাশ করেনি, সেই তালিকায় এ বার স্থান পেয়েছে টেক মহীন্দ্রা, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, এমআরএফ, ভারতী এয়ারটেল জে এস ডব্লিউ এনার্জি ইত্যাদি। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল গত সপ্তাহে প্রকাশিত ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের কিছু সংস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল।
বড় মাপের বেশ কিছু কোম্পানি ভাল ফল প্রকাশ করায় তা আগামী মাসগুলিতে সূচককে শক্তি জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভাল বর্ষা এবং উৎসবের মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধির সুফল তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলেও বর্তাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই আশা আগামী তিন মাস বাজারকে চাঙ্গা রাখবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। যাঁরা নতুন সম্বতে শেয়ারে লগ্নি করবেন বলে স্থির করেছেন, তাঁদের এই ফলাফলের উপর নজর রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভাল সময় চলছে নতুন ইস্যুর বাজারে। গত সপ্তাহে বন্ধ হওয়া পিএনবি হাউসিং ফিনান্স আইপিও-তে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। তবে এই ইস্যুতে তেমন সাড়া মেলেনি খুচরো লগ্নিকারীদের কাছ থেকে। এঁদের জন্য রাখা শেয়ার কেনায় আবেদন এসেছে মাত্র ১.২ গুণ। অর্থাৎ এই শ্রেণির আবেদনকারীরা প্রত্যেকেই শেয়ার পাবেন। সংস্থাগত লগ্নিকারীদের জন্য সংরক্ষিত শেয়ারের আবেদন জমা পড়েছে ৮৬ গুণ এবং উঁচু সম্পদশালী লগ্নিকারীদের থেকে এসেছে ৬৮ গুণ। ইস্যুটিতে দামের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৭৭৫ টাকা। এখন দেখার, কী দামে এই গৃহঋণ সংস্থার শেয়ার নথিবদ্ধ হয় বাজারে।
বিগত ২০৭২ সম্বতে মোটের উপর চাঙ্গা ছিল নতুন ইস্যুর বাজার। বছরের শেষ দিকে ছক্কা মেরেছে আরবিএল ব্যাঙ্ক। অগস্টের শেষ দিকে ২২৫ টাকায় ইস্যু করা এই শেয়ারের দর মুরতের সন্ধ্যায় ছিল ৩৯১ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ২ মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। শেয়ারটিকে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বছরের শেষ দিকে ইস্যু এনে এখনও কোনও লাভের সন্ধান দিতে পারেনি আইসিআইসিআই প্রু ইনশিওরেন্স কোম্পানি। তবে বড় মেয়াদে শেয়ারটি সম্পর্কে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
নতুন সম্বতে বাজার চাঙ্গা থাকলে নতুন ইস্যুর বাজারেও উত্তেজনা বহাল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রাণচঞ্চল থাকবে মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়াও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy