এ রাজ্যে চা শিল্পের সমস্যা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে আগামীকাল (শনিবার) দু’দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বন্ধ চা বাগানগুলিতেও যাওয়ার কথা তাঁর। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে বৈঠকে বসার কথা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গেও।
এর আগেও দু’বার উত্তরবঙ্গ সফরে আসার কথা ছিল নির্মলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। যেমন, গত মাসে তাঁর আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায় রাজ্যে পুর নির্বাচনের কারণে। চা পর্ষদ সূত্রে খবর, ১৬ মে (শনিবার) দিল্লি থেকে শিলিগুড়ি আসবেন সীতারামন। সে দিনই উত্তরবঙ্গের কয়েকটি বন্ধ চা বাগান পরিদর্শনে যাওয়ার কথা তাঁর। পরদিন সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার কথা শিলিগুড়িতেই। এখন সরকারি ভাবে উত্তরবঙ্গে ৭টি বাগান বন্ধ। সুরেন্দ্রনগর, ঢেকলাপাড়া, রেড ব্যাঙ্ক, বুন্দাপাণি, ধরণীপুর, সোনালি ও মধু। এর মধ্যেই কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখতে পারেন মন্ত্রী।
অসমে বাগান বন্ধের সমস্যা না-থাকলেও দায়িত্ব নেওয়ার পরে চা শিল্পের হাল-হকিকৎ বুঝতে গত বছর সেখানে যান সীতারামন। সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বৈঠকে বসেন চা শিল্পমহলের সঙ্গে। তখন সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং এ রাজ্যের চা শিল্পকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল টি বোর্ড। কিন্তু রাজ্যের তরফে কেউ যাননি।
এই পরিস্থিতিতে সীতারামনের সফরের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রাজ্যের চা শিল্পমহল। বিশেষত যেখানে বাগান বন্ধের দায় নিয়ে আগেই একপ্রস্ত কেন্দ্র-রাজ্য চাপান-উতোর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অভিযোগ, আমন্ত্রণ সত্ত্বেও অসমের বৈঠকে না-যাওয়ার কারণও তা-ই।
বন্ধ বাগান খোলা নিয়ে চাপান-উতোর অবশ্য নতুন নয়। ইউপিএ সরকারও চা-আইন সংশোধনের চেষ্টা করে সফল হয়নি। টি বোর্ডের দাবি, বাগানের জমি লিজ দেয় রাজ্য। সে ক্ষেত্রে মালিক বাগান বন্ধ করলে, তাঁর লিজ বাতিল করে অন্য কারও হাতে তা তুলে দিক তারা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাগানের সমস্ত দায় রাজ্যের উপর আসার আশঙ্কায় তারা কেন্দ্রীয় আইনের দিকে বল ঠেলছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
গত বছর উত্তরবঙ্গের চা বাগানে কর্মী মৃত্যুর জেরে ফের ওই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। রাজ্যের দাবি, বাগান খোলার দায় কেন্দ্রের। এ নিয়ে সীতারামনকে চিঠিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ পদস্থ আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় আসেন বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনী রঞ্জন রশ্মি। কিন্তু কোন পথে হাঁটলে বন্ধ বাগান খুলবে, সেই রফাসূত্র মেলেনি। এই অবস্থায় মন্ত্রীর সফর কোনও আলো দেখাতে পারে কি না, সে দিকেই এখন তাকিয়ে সকলে।