Advertisement
E-Paper

পাঁচ বছরে উন্নতি নেই ব্যবসা শুরুর পরিবেশে, দাবি সমীক্ষায়

লাল ফিতের ফাঁস। ছাড়পত্র পেতে দেরি। কিংবা সমস্যার সুরাহার খোঁজে সরকারি দফতরের দরজায় হন্যে হয়ে ফেরা। এ রাজ্যে ব্যবসা শুরুতে বাধার এই আদি-অকৃত্রিম ছবি গত পাঁচ বছরে যে এক চুলও বদলায়নি, সে কথা বারবার বলে শিল্পমহল। অভিযোগ তোলে, সিন্ডিকেট আর তোলাবাজির দৌরাত্ম্যে সেই সমস্যা আরও গভীর হওয়ার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৬

লাল ফিতের ফাঁস। ছাড়পত্র পেতে দেরি। কিংবা সমস্যার সুরাহার খোঁজে সরকারি দফতরের দরজায় হন্যে হয়ে ফেরা। এ রাজ্যে ব্যবসা শুরুতে বাধার এই আদি-অকৃত্রিম ছবি গত পাঁচ বছরে যে এক চুলও বদলায়নি, সে কথা বারবার বলে শিল্পমহল। অভিযোগ তোলে, সিন্ডিকেট আর তোলাবাজির দৌরাত্ম্যে সেই সমস্যা আরও গভীর হওয়ার। এ বার পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা শুরুর পরিবেশ নিয়ে হতাশার এই ছবি ফুটে উঠল মার্কিন বহুজাতিক অ্যামওয়ের সমীক্ষায়। ২১টি রাজ্যের ৫০টি শহরে (কলকাতা ও হাওড়া-সহ) যা করেছে তারা।

এ রাজ্যে ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশই ব্যবসা শুরুতে আগ্রহী। কিন্তু ৫৪% মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তার পরিবেশ একটুও বদলায়নি। ২০ শতাংশের ধারণা, পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। তিন শতাংশের অভিযোগ, তা খারাপ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। গত ৫ বছরে পরিস্থিতি অল্প ও চোখে পড়ার মতো ভাল হয়েছে বলে দাবি যথাক্রমে ১৯ ও ৪ শতাংশের। ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিন্‌হার অবশ্য দাবি, ‘‘ব্যবসার পরিবেশ গড়তে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। হয়তো সেই বার্তা সর্বত্র ঠিকমতো পৌঁছয়নি। আগামী দিনে তা নিশ্চিত করতে হবে।’’

কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবসা শুরু করে স্বনির্ভর হওয়ার কথা প্রায়ই বলেন, সেখানে তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি হল না কেন? বিশেষত যেখানে পাঁচ বছরে চোখে পড়ার মতো উন্নতির কথা বলেছেন অসম (২২%), গুজরাত (৩১%), ওড়িশা তেলেঙ্গানা ও মধ্যপ্রদেশের (১৮% করে) অনেক বেশি মানুষ। বিহার ও ছত্তীসগঢ়েও যথাক্রম ৫১% ও ৪৭% জানিয়েছেন অন্তত সামান্য কিছুটা উন্নতির কথা।

ছোট ও মাঝারি শিল্পের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘অনেক সরকারি তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা সুবিধা হচ্ছে বিভিন্ন কর দিতে। কিন্তু শুধু তথ্য পেলেই ব্যবসা করা যায় না। তা কাজে লাগানোর সুযোগ দরকার। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতির প্রায় উন্নতিই হয়নি। প্রকল্প নিয়ে সরকারি দফতরে গেলে, শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়ার দশা।’’ সংশ্লিষ্ট মহলে অনেকের দাবি, দমকলের ছাড়পত্র পেতে হয়রান হতে হয়। রেহাই পাওয়ার জো নেই তোলাবাজি, সিন্ডিকেটের দাপট থেকে। আর এই সব অসুবিধার ভিড়ে তখন নেটে তথ্যের সুবিধাটুকু হারিয়ে যায় বলে তাঁদের দাবি। এর আগে জেলা স্তরে সরকারের তৈরি পরিকাঠামো নড়বড়ে থাকার কথা বলেছিলেন বিভিন্ন জেলার বণিকসভার প্রতিনিধিরাও।

গত বছর সিআইআইয়ের সভায় সিডবি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কর্তা বলছিলেন, ‘‘রাজ্যে নতুন সংস্থা তৈরির সম্ভাবনা বিপুল। কিন্তু তোলাবাজির সমস্যা এতই যে, উদ্যোগপতিদের সময় চলে যাচ্ছে সেই সমস্যা সামলাতে। দায় হচ্ছে ব্যবসার কথা ভাবা।’’ যা কখনওই ব্যবসা শুরুর আদর্শ পরিবেশ নয়।

পরিবেশে যে খামতি আছে, তা ফুটে উঠেছে কেন্দ্রের ‘মার্কশিটে’ও। শিল্প ও ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কোন রাজ্য এগিয়ে বা পিছিয়ে, তা চিহ্নিত করতে তালিকা তৈরি করেছে মোদী সরকার। সেখানে গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র তো বটেই, ওই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পিছনে ফেলেছে ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যও।

শিল্পমহলের অনেকের অভিযোগ, ব্যবসা শুরুতে উৎসাহ দিতে কয়েক কোটি খরচ করে ‘রিয়েলিটি শো’ করেছে রাজ্য। যোগ্য শিল্পোদ্যোগী বাছাই করতে ও অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিতে গাঁটছড়া বেঁধেছে আইআইএম-কলকাতার সঙ্গে। অথচ নজর দেওয়া হয়নি আসল জায়গায়।

অথচ সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সরকারের ভূমিকা কত জরুরি, তা স্পষ্ট সমীক্ষায়। ৫৮% মনে করেন, ব্যবসা শুরুর কথা ভাবলে, আগে সরকারি দফতরে যেতে হবে। ৪০ শতাংশের মতে, প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি সহায়তা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সদ্য গড়া সংস্থার জন্য আলাদা নীতি তৈরিতে জোরের কথা বহু দিন জোরের সঙ্গে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অথচ সমীক্ষা বলছে, ৭০ শতাংশেরও বেশি রাজ্যের নীতি, কর্মসূচি জানেন না।

শিল্পমহলের একাংশ বলছেন, যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী তেলেভাজাকে শিল্প বলেন, পাগলের তকমা পান রতন টাটা, সেজ-ছুৎমার্গে আটকে থাকে ইনফোসিসের প্রকল্প, সেখানে কেউ নতুন ব্যবসা শুরু করবেন কোন সাহসে? তাঁদের মতে, এই সমীক্ষায় সেই সত্যিই ফের উঠে এসেছে পরিসংখ্যানের বুনোটে।

business environment improvement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy