Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মিস্ত্রির সঙ্গে জোট বাঁধিনি: নুসলি ওয়াদিয়া

গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাইরাস মিস্ত্রির বিদায়ের রাস্তা পাকা করতে চায় টাটারা। আর, তার মধ্যেই বিস্ফোরক চিঠিতে টাটা গোষ্ঠী ও তার কর্ণধার রতন টাটাকে দুষলেন শিল্পপতি নুসলি ওয়াদিয়া।

নুসলি ওয়াদিয়া

নুসলি ওয়াদিয়া

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩০
Share: Save:

গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাইরাস মিস্ত্রির বিদায়ের রাস্তা পাকা করতে চায় টাটারা। আর, তার মধ্যেই বিস্ফোরক চিঠিতে টাটা গোষ্ঠী ও তার কর্ণধার রতন টাটাকে দুষলেন শিল্পপতি নুসলি ওয়াদিয়া।

মিস্ত্রি-পন্থী বলে তাঁকেও সাইরাসের সঙ্গেই গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার পর্ষদ থেকে সরাতে চায় টাটারা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই টাটা স্টিলের শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে এ দিন লেখা ১৫ পৃষ্ঠার চিঠিতে ওয়াদিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমি মিস্ত্রির সঙ্গে জোট বেঁধেছি, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। আমাকে ডিরেক্টর পদ থেকে সরাতে চাওয়ার মূল কারণ আমার স্বাধীনচেতা মনোভাব ও কাজকর্ম।’’ উল্লেখ্য, টাটা স্টিল, টাটা কেমিক্যালস, টাটা মোটরসে তিিন রয়েছেন স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে। শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি ওয়াদিয়ার খোলাখুলি মন্তব্য, ‘‘আমার স্বাধীন মনোভাবেই টাটা সন্সের ক্ষোভ বেড়ে গিয়েছে। আমাকে তারা সরাতে চায়, কারণ, আমি তাদের হুকুম মেনে চলি না। আমার সব দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের সংস্থার প্রতি। টাটা গোষ্ঠীর কাছে নয়, যার সংজ্ঞা আমার কাছে স্পষ্টও নয়। আমাকে সরাতে ভোট দিতে বলা হয়েছে আপনাদের। এখানে কিন্তু সত্যি সত্যি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি আমাকে। আসলে এই মুহূর্তে পরীক্ষার মুখে স্বাধীন ডিরেক্টর রাখার গোটা ব্যবস্থাটাই।’’

মিস্ত্রিকে সরানোর প্রস্তাব এ দিন আনা হয় টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ইজিএমে। প্রস্তাবের পক্ষেই মত দেন শেয়ারহোল্ডাররা। আগামী কালই রয়েছে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর ইজিএম। টাটা স্টিলের ইজিএম ২১শে, টাটা মোটরস ২২শে, টাটা কেমিক্যালস ২৩শে। তার ঠিক আগেই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ এনে টাটা স্টিল শেয়ারহোল্ডারদের কাছে চিঠি লিখলেন ওয়াদিয়া। তাঁর সমর্থন ও সাহায্যেই প্রাক্তন টাটা কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রি গোষ্ঠীর ভিত নড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে এর আগে আঙুল তুলেছিল টাটারা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াদিয়া জানিয়েছিলেন, টাটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠোকা ছাড়া আরও কোনও বিকল্প খোলা নেই তাঁর সামনে।

এ দিন যুদ্ধং দেহি মেজাজেই ফের ওয়াদিয়ার তোপ, তাঁর বিরুদ্ধে টাটাদের আনা সব অভিযোগ মিথ্যে, ভিত্তিহীন, সেগুলির পক্ষে কোনও প্রমাণও নেই। তাঁর দাবি, স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর কাজকর্ম পুরোপুরি ‘স্বাধীন’। তার সঙ্গে অন্য কাউকে জড়ানো যাবে না। গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে ওয়াদিয়া কাজ করছেন, টাটাদের এই অভিযোগেরও জবাব দিয়েছেন ওয়াদিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি টাটা গোষ্ঠীর আওতায় পড়ি না, তাই তাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনও আমার নেই। স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে আমি যে-সব সংস্থার পর্ষদে রয়েছি, তাদের স্বার্থ যতটুকু দেখার, আমি ততটাই দেখব। তার চেয়ে কম নয়, বেশিও নয়।’’

ওয়াদিয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই দায়িত্বের খাতিরেই ব্রিটিশ সংস্থা কোরাস কেনার ব্যাপারে রতন টাটার প্রস্তাবে ‘জোরালো’ আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মতৈক্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টাটা স্টিলের ইউরোপীয় ব্যবসায় একটানা পুঁজি লগ্নির বিপক্ষেও ছিলেন ওয়াদিয়া। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঢালা হয়েছে বলে জানান ওয়াদিয়া। টাটা স্টিলের শেয়ারহোল্ডারদের ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজার কোটি টাকার মতো খোয়াতে হয়েছে বলে দাবি ওয়াদিয়ার, ভবিষ্যতে যা আরও বাড়তে পারে। রতন টাটা, নশির সুনাওয়ালা (টাটা ট্রাস্টের ট্রাস্টি)-র বিরুদ্ধে বেআইনি শেয়ার লেনদেনের অভিযোগও এনেছেন ওয়াদিয়া। এই পদ্ধতিতেই বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দরে প্রভাব খাটান তাঁরা, অভিযোগ ওয়াদিয়ার।

জে আরডি টাটার আমন্ত্রণে প্রায় চার দশক আগে টাটা স্টিলে যোগ দেওয়ার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন ওয়াদিয়া। সরাসরি রতন টাটার নাম করে তাঁর মন্তব্য, জেআরডি-র পরম্পরা ধ্বংস করার পথেই হাঁটছেন তিনি ও টাটা সন্স। যা দুর্ভাগ্যের ও দুঃখের।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর মিস্ত্রিকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। টাটা সন্স জানিয়ে দিয়েছে, মিস্ত্রির নেতৃত্বে তাদের আর আস্থা নেই, যে-কারণে সংস্থার কর্ণধার হিসেবে আপাতত ফিরিয়ে আনা হয়েছে রতন টাটাকে। মিস্ত্রিকে তাই কোনও শাখা সংস্থার পর্ষদে রাখতে চায় না টাটা সন্স। শেয়ারহোল্ডারদের সায় ছাড়া পর্ষদ থেকে কাউকে সরানো যায় না বলেই এই সব সংস্থা পরপর ইজিএম ডেকেছে চলতি সপ্তাহ থেকেই।

ইন্ডিয়ান হোটেলস শেয়ার -হোল্ডারদের চিঠি মিস্ত্রির

ইন্ডিয়ান হোটেলসে ২০ ডিসেম্বর ইজিএম ডেকেছে টাটা সন্স। তার আগে সোমবার সংস্থার শেয়ারহোল্ডারদের চিঠি লিখে তাঁকে সমর্থনের আর্জি জানালেন মিস্ত্রি। তাঁর দাবি, ২০১২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে সংস্থার সামনে অনেক সমস্যা ছিল। তা মেটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন তিনি। যার রেশ এখনই বোঝা না-গেলেও, ভবিষ্যতে ফল মিলবে। এর আগে টাটা গোষ্ঠীর এই হোটেল সংস্থার স্বাধীন ডিরেক্টরদের পাশে পেয়েছিলেন মিস্ত্রি। ইন্ডিয়ান হোটেলসের চেয়ারম্যান হিসেবে সাইরাসের উপর আস্থা জ্ঞাপন করেন তাঁরা। তার পরেই তাঁকে পর্ষদ থেকে সরাতে বিশেষ সভা ডাকে টাটা সন্স। এ দিন মিস্ত্রির অভিযোগ, ভারতে যেখানে দেশি-বিদেশি সংস্থা ব্যবসা ছড়াচ্ছে, সেখানেই অন্যান্য দেশে আরও বেশি অধিগ্রহণের পথে হেঁটে সমস্যায় পড়েছে ইন্ডিয়ান হোটেলস। দিল্লিতে তাজ মানসিংহ হোটেল নিয়ে আইনি লড়াইয়েও জড়িয়েছে ইন্ডিয়ান হোটেলস। আর এই সব কারণেই পরিচালন ব্যবস্থা হাতে রেখেও ১২.৫ কোটি ডলারে তাজ বস্টনের রাশ ছেড়ে দেওয়া, সিডনিতে ব্লু হোটেল এবং ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের শেয়ার বিক্রির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়েছে বলে চিঠিতে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে দাবি করেছেন মিস্ত্রি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nusli wadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE