আশির কোঠায় পা রাখা বেহালা পর্ণশ্রীর সুহাস ও নোটন সেনের ক্যানসারে আক্রান্ত একমাত্র পুত্রের মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘ দিন আগে। অবসর জীবনে আয়ের উৎস শুধু বিএসএনএলের বাড়ি ভাড়া। অথচ গত নভেম্বর থেকে ১.৩১ লক্ষ টাকারও বেশি ভাড়া বকেয়া। পুর-কর খাতে মেটানো প্রাপ্যও বাকি পাঁচটি ত্রৈমাসিকের। এ ভাবে আর কত দিন, উদ্বেগে কার্যত ঘুম নেই তাঁদের।
একই হাল পাইকপাড়ার অদ্বৈত গোপাল মজুমদারের। বিএসএনএলকে স্থানীয় এক্সচেঞ্জের জন্য বাড়ির একাংশ ভাড়া দেন। নভেম্বর থেকে বাকি পড়েছে ১ লক্ষেরও বেশি। তাঁর দাবি, বছর তিনেক ধরে পুর-কর দেওয়া প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকাও মেটায়নি সংস্থাটি। আয় না হলেও, এর মধ্যে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের আরও প্রায় ৪৬ হাজার টাকা পুর-কর দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বা টেলি পরিষেবার বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো ব্যবস্থা গড়ার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বাড়ি ভাড়া নেয় বিএসএনএল। সরকারি সংস্থাকে ভাড়া দিয়ে নিশ্চিত আয়ের কথা ভেবে অনেকেই তাতে আগ্রহী হন। ভাড়ার পাশাপাশি পুর-কর অগ্রিম দেওয়ার পরে বাড়িওয়ালাকে তা মিটিয়ে দেওয়াই বিএসএনএলের দস্তুর।
সংস্থা সূত্রের খবর, বাজারে মাসুল যুদ্ধের জের, ঋণ নিতে কেন্দ্রের অনুমোদন না মেলা-সহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে গোটা দেশেই বহু জায়গায় বাড়িওয়ালাদের ভাড়া ও পুর-করের টাকা মেটাতে পারছে না সংস্থাটি। নোটনদেবী বলেন, ‘‘সমস্যায় রয়েছি। কত টাকাই বা
আর জমানো থাকে, যে তা ভাঙিয়ে চলবে? নুন-ভাত খেয়ে কিছু দিন চললেও ভয় লাগে, এই বয়সে বড় অসুখ হলেই বা কী করব?’’
সুহাসবাবু ও অদ্বৈতবাবু জানান, এরিয়া ম্যানেজার থেকে সংস্থার শীর্ষ কর্তা, সকলকে চিঠিতে দুর্দশার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। অদ্বৈতবাবুর অভিযোগ, আগাম পুর-কর দিলেও তা বকেয়া থাকার কথা গোড়ায় মানেইনি সংস্থাটির স্থানীয় অফিস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তাঁদের মতো আরও অনেকেই এ রাজ্যে সংস্থাটির দুই শাখা ক্যালকাটা টেলিফোন্স ও ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। উপায়ন্তর না দেখে কেউ কেউ বাড়িতে সংস্থার কাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার এমন কয়েকজন বাড়িওয়ালা সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের সিজিএমের দফতরে গিয়ে বিক্ষোভও দেখান। অনেকেরই অভিযোগ, বিএসএনএল বাড়ি ছাড়তে চায় না। ফলে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার পথও বন্ধ।
এ রাজ্যে সংস্থাটির দুই সার্কলের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য এই সমস্যার কথা মানছেন। তাঁদের বক্তব্য, সার্বিক ভাবে সংস্থাটির আর্থিক অবস্থা বেহাল। সারা দেশেই এক অবস্থা। তবে তাঁদের আশ্বাস, সংস্থাটির কর্পোরেট অফিস, কেন্দ্রীয় সরকার, সকলেই সঙ্কট কাটাতে সচেষ্ট। নিয়মিত আলোচনা চলছে। অর্থ মিললেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কবে তা মিলবে, সেটা দিল্লির উপরই নির্ভর করছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy