Advertisement
E-Paper

গত দশ মাসে দাম সবচেয়ে কম, তাও ঝিমোচ্ছে সোনা

নোটের আকালে ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবসা খুইয়ে জেল্লা হারাতে বসেছে গয়না শিল্প। কয়েক লক্ষ মানুষের রোজগার বন্ধ। উৎপাদন স্তব্ধ হওয়ায় টান পড়েছে বিপণন বাজেটেও।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫১

নোটের আকালে ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবসা খুইয়ে জেল্লা হারাতে বসেছে গয়না শিল্প। কয়েক লক্ষ মানুষের রোজগার বন্ধ। উৎপাদন স্তব্ধ হওয়ায় টান পড়েছে বিপণন বাজেটেও।

অথচ হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টো। কারণ গত দশ মাসের মধ্যে সোনার দাম এখন সবচেয়ে কম। সঙ্গে রয়েছে বিয়ের মরসুম। কিন্তু এই জোড়া হাতিয়ারকে ভোঁতা করে দিয়েছে নোট সঙ্কট। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, নোটের টানাটানিতে দেশ জুড়ে স্বর্ণ শিল্প ১৮ হাজার কোটি টাকা মার খেয়েছে। পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়ার আগে এই বাজার চাঙ্গা হওয়ার কোনও আশা দেখছেন না স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

নোট সঙ্কটের জেরে গোটা দেশেই গয়না শিল্প বিপর্যস্ত, তবে এ রাজ্যে বিপর্যয়ের মাত্রা দ্বিগুণ। কারণ সোনার গয়নার কারিগররা অধিকাংশই এ রাজ্যের। ৭০ শতাংশ কারিগর বাঙালি। বাজার তলানিতে ঠেকায় কাজ হারিয়েছেন ন’লক্ষের বেশি কারিগর। ‘স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও’ কমিটির কর্তা বাবলু দে-র দাবি, ভিনরাজ্যে সোনার কারিগর হিসেবে ১০ লক্ষেরও বেশি বাঙালি কাজ করতেন। ব্যবসা মার খাওয়ায় রুজি-রুটি হারিয়ে ৯৫ শতাংশই বাড়ি ফিরে এসেছেন। লোকসানের ধাক্কা সামলে এপ্রিল-মে মাসের আগে ছন্দে ফেরার আশা করছে না গয়না শিল্প। কারিগরদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে।

সোনার চাহিদায় অবশ্য খানিকটা মন্দা ছিল এ বছরের গোড়া থেকেই। কালো টাকার উপরে সরকারি চোখরাঙানি, বছরের প্রথম ছ’মাসে ঊর্ধ্বমুখী দাম ও মাস দুয়েকের ধর্মঘট— পরপর ধাক্কায় বিধ্বস্তই ছিল ভারতের সোনার বাজার। ওয়র্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী প্রথম ছ’মাসে এ বছর চাহিদা ছিল ২৪৭.৪ টন সোনা। ২০১৫ সালের তুলনায় এই পরিমাণ ৩০ শতাংশ কম।

তবে এই মলিন ছবিতেও কিছুটা রঙ ঢেলেছিল উৎসবের কেনাকাটা। যেমন বি সি সেনের কর্ণধার সুবীর সেনের কথায়, জমানো চাহিদার আগল খুলে দিয়েছিল পুজো ও দীপাবলি। সব মিলিয়ে বিক্রি বেড়েছিল প্রায় ২০ শতাংশ। উৎসবের এই রমরমা বাজারে প্রাণ ঢেলেছিল ভালো বর্ষা। যে কারণে গ্রামাঞ্চলের ক্রেতারাও দোকানে ভিড় জমাচ্ছিলেন, জানালেন অঞ্জলি জুয়োলার্সের অনর্ঘ চৌধুরি। সব মিলিয়ে বছর শেষে বড় লাভের আশায় ছিল গয়না শিল্প।

সেই ছবি আপাতত উধাও। অল ইন্ডিয়া জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শ্রীধর জিভি জানান, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে ব্যবসা ৮০ শতাংশের বেশি মার খেয়েছে। নগদহীন বাজারে বেসামাল হয়ে পড়েছে সোনার বিক্রিবাটা। কারণ এই শিল্পের ২২ শতাংশ মাত্র সংগঠিত। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনে অভ্যস্ত নন ক্রেতা ও বিক্রেতা, কেউই।

সাধারণ ভাবে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিয়ের মরসুমে ভাল চাহিদার কারণে ব্যবসা চাঙ্গা হয়। বিশেষত গ্রাম ও আধা শহরে এই চাহিদা চড়া থাকে। নগদহীন পরিস্থিতিতে সেই বাজার প্রায় পুরোটাই মার খাচ্ছে বলে দাবি শিল্পমহলের। অথচ ৮ নভেম্বর থেকে সোনার দাম পড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। কিন্তু দাম কম হলেও নোটের আকালে খরচ করতে ভরসা পাচ্ছেন না ক্রেতা।

দাম পড়ল কেন? ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার পড়তি বাজার— এ রকম অনেক কারণই রয়েছে। সেনকো গোল্ডের অন্যতম কর্তা শুভঙ্কর সেন জানান, গত দশ মাসে এখন সোনার দাম সবচেয়ে কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিয়ের মরসুমে এত কম দামে সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ বিক্রি বেশি হওয়ার কথা। তার বদলে অন্তত ৬০ শতাংশ কম বিক্রি হচ্ছে।

দেশের গয়না শিল্পের প্রাণকেন্দ্র মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারের হাল আরও খারাপ। মুম্বই জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসা মার খেয়েছে সেখানে। এ সময়ে অন্যান্য বছর যেখানে ১২৫ কোটি টাকার কাছাকাছি সোনা বিক্রি হয়, এ বারে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকায়। বিয়ের কেনাকাটার সুবাদে ২০ শতাংশ বাজার উঠলেও তাতে ঘাটতি মেটানো অসম্ভব বলে জানান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র সুরিন্দর কুমার জৈন।

চাহিদার এই ভাটার কথা উঠে এসেছে ওয়র্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যেও। সব মিলিয়ে ভারতের বার্ষিক চাহিদার পরিমাণ ৯০০ থেকে ১০০০ টন সোনা। কাউন্সিলের আশঙ্কা, ২০১৬’য় সেই চাহিদা কমপক্ষে ২৪ শতাংশ পড়বে। যা গত সাত বছরে রেকর্ড।

Gold
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy