বছরের শুরুতেই ধাক্কা। দেশ জুড়ে স্টার্ট-আপ বা নতুন সংস্থার পুঁজিতে টান পড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে নতুন সংস্থায় পুঁজি বিনিয়োগ এক ধাক্কায় কমেছে ৪৬%! মাত্র ১২০টি সংস্থা পুঁজির সংস্থান করতে পেরেছে। ২০১৬-তে এই সংখ্যাটা ছিল ২৪৫। সংস্থা প্রতি লগ্নির পরিমাণও কমেছে ৪৫ শতাংশের বেশি। গবেষণা সংস্থা ভিসিসিএজ-এর রিপোর্টে উঠে এসেছে স্টার্ট-আপ দুনিয়ার এই বিবর্ণ ছবি।
কাকে বলে স্টার্ট-আপ সংস্থা? সংস্থা তৈরির প্রথম পাঁচটি আর্থিক বছরে ব্যবসার পরিমাণ হতে হবে ২৫ কোটির মধ্যে। নতুন প্রযুক্তি ও তার বাণিজ্যকরণই এ ধরনের সংস্থার মূল কাজ।
আর এই সব নতুন সংস্থার হাত ধরেই বিশ্বের স্টার্ট-আপ শিল্পে আমেরিকা ও চিনের পরেই ভারতের জায়গা। একদা সাড়া জাগানো বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের প্রায় সব বড় শহরের নতুন সংস্থাই পুঁজি জোগাড় করতে ব্যর্থ। আর এই তালিকায় সবচেয়ে মলিন ছবিটা কলকাতার।
নোট-কাণ্ডের পরে পুঁজির পরিমাণের নিরিখে প্রথম পাঁচ শহরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বেঙ্গালুরু। দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চল। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে মুম্বই ও চেন্নাই। পাঁচে হায়দরাবাদ। আর কলকাতা? গত তিন মাসে এই শহরে মাত্র তিনটি নতুন সংস্থা লগ্নি টেনেছে। সব মিলিয়ে পুঁজির পরিমাণ এক লক্ষ ডলার।
কেন এই হাল? বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সংস্থার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পুঁজির জোগানটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণত স্টার্ট-আপে গোড়ায় পুঁজির পরিমাণ কম থাকে। সেই কারণে বিনিয়োগকারীদের ভিড়ও বেশিই থাকত এত দিন। কিন্তু এই ধারায় এ বার ছেদ পড়েছে।
উদ্যোগী পুঁজি সংস্থাগুলির দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের মূল ভাবনা মৌলিক হলেও বাস্তবে তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তাই লাভের আশা পূরণ হবে না বুঝেই বিনিয়োগকারীরা হাত তুলে দিচ্ছেন।
পাশাপাশি এখন বিনিয়োগকারীর পছন্দও বদলাতে শুরু করেছে। খাদ্য ও পর্যটন শিল্পে আর আগের মতো পুঁজি আসছে না। বরং লগ্নিকারীদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসছে প্রযুক্তি নির্ভর আর্থিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্টার্ট-আপ। গত তিন মাসে এমন ১১টি সংস্থায় বিনিয়োগ এসেছে প্রায় দু’কোটি ডলার। ১০টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্টার্ট-আপে লগ্নির পরিমাণ ৮৪ লক্ষ ডলার।
তবে পুঁজির এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেই মনে করছে ন্যাসকম। শুধু জাতীয় স্তরে নয়। কলকাতার ক্ষেত্রেও সমস্যা সাময়িক। ন্যাসকমের দাবি, পুঁজির সমস্যা গত পাঁচ বছরে অনেকটাই কমেছে। কারণ মেধার টানে স্টার্ট-আপে টাকা ঢালতে পিছপা নন স্থানীয় শিল্পপতিরা।
সফটওয়্যারের মতো স্টার্ট-আপেও শুরু করতে দেরি করেছে কলকাতা। যখন লগ্নিকারীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো শহর, তখন কলকাতা আরম্ভই করতে পারেনি। অথচ যে-পুঁজির জোরে স্টার্ট-আপ তৈরি হয়, সেই মেধা-সম্পদের অভাব নেই এ রাজ্যে। তবুও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ‘স্টার্ট-আপ’ বা নতুন ব্যবসার সংখ্যা এখনও সামান্য এ রাজ্যে।
মেধা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, পুঁজি ও পরিকাঠামোর সঠিক মেলবন্ধনের কাজটাই দেরিতে শুরু হয়েছে কলকাতায়। অথচ ২০১২ সালে স্টার্ট-আপের আন্তর্জাতিক মানচিত্রে প্রথম ২০টি শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণের শহর বেঙ্গালুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy