Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সুদ নিয়ে নিজের জায়গায় অনড় রাজন

চাপ যতই আসুক, বিদায়বেলাতেও সুদ নিয়ে নিজের অবস্থান বদলাবেন না তিনি। রবিবার এমনই ইঙ্গিত দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

চাপ যতই আসুক, বিদায়বেলাতেও সুদ নিয়ে নিজের অবস্থান বদলাবেন না তিনি। রবিবার এমনই ইঙ্গিত দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।

একই সঙ্গে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ অন্যান্য সমালোচকদের এক হাত নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক-কর্তার দাবি, তিনি যে ঠিক পথেই চলেছেন তার প্রমাণ মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। যেখানে স্পষ্ট, ফের মাথা তুলেছে পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধি। খুচরো মূল্যবৃদ্ধিও পৌঁছেছে দু’বছরের সর্বোচ্চ হারে।

খামোখা দোষারোপ না করে বরং সংখ্যায় চোখ রাখুন— রবিবার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে ঠিক এ ভাবেই তোপ দেগেছেন রাজন। তাঁর দাবি, যাঁরা মনে করছেন মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ফলে এখন শুধু বৃদ্ধির হার নজরে রেখে এগোনো উচিত, তাঁরা ভুল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই বিদায়ী কর্তার সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ‘‘অনেকেরই অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসা সত্ত্বেও আমি সুদ কমাচ্ছি না। যা বৃদ্ধির চাকায় গতি আসার পথে বাধা তৈরি করছে। কিন্তু এ সব সমালোচনার আদপে কোনও অর্থনৈতিক ভিত্তিই নেই।’’ উল্টে নিন্দুকদের উদ্দেশ্যে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘সুদ কমানোর উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি কোথায় ‘খুব’ কমে গিয়েছে দেখান আমাকে।’’ আর রাজনের এই বার্তার মধ্যেই ৯ অগস্ট তাঁর জমানার শেষ ঋণনীতিতে সুদ না-কমানোর ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্টমহলের মতে, এ দিন রাজনের নিশানা খুব পরিষ্কার। এর আগে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জেটলি বারবার সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে সওয়াল করলেও, অনেক সময় মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কায় তা করেননি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তা। সে জন্য তাঁকে এক সময় অর্থ মন্ত্রকের বহু অফিসারের চক্ষুশূলও হতে হয়। তার পর আবার সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার স্বামীর তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। যার অভিযোগ ছিল, মার্কিন স্বার্থ দেখতে গিয়েই নাকি সুদ কমাননি রাজন। যে কারণে তাঁকে সরানোর আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠান ওই সাংসদ। ফলে সকলেই মনে করছেন, সরাসরি সে সবের জবরদস্ত জবাব দিতেই এ দিন মুখ খোলেন তিনি। বিশেষ করে যেখানে গত মাসেই তিনি বলে দিয়েছেন, ৪ সেপ্টেম্বরের পরে আর শীর্ষ ব্যাঙ্কে থাকতে চান না। ফিরতে চান আমেরিকায়। গবেষণা ও অধ্যাপনার বৃত্তে। কাজেই স্পষ্টভাষী রাজন চলে যাওয়ার আগে যে তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগের ‘যোগ্য’ উত্তর দিয়ে যাবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে একই সঙ্গে তাঁদের এটাও ধারণা যে, এ ভাবে আগামী ঋণনীতিতে সুদ না-কমানোর ক্ষেত্রও কিছুটা তৈরি করে রাখার কাজ সারলেন তিনি।

এ দিন অবশ্য শুধু নিজের নয়, কেন্দ্রের সমালোচকদেরও একহাত নিতে দেখা যায় রাজনকে। ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর গতি হতাশাজনক মানলেও, তার দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপানোর পক্ষপাতী নন বলেই ইঙ্গিত তাঁর। বরং শীর্ষ ব্যাঙ্ক কর্তার মতে, দেশে টানা দু’বছরের খরা, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্তের মতো ঘটনায় টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতিই এর জন্য দায়ী। যদিও এত প্রতিকূলতা নিয়েও ভারতের অর্থনীতি বহু দেশের তুলনায় ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে বলে দাবি তাঁর। রাজনের মতে, পূর্বাভাস মিলিয়ে এ বার বর্ষা ভাল হলে, কৃষি লাভবান হবে। গ্রামাঞ্চলে চাহিদা বাড়বে। পোক্ত হবে গ্রামীণ শিল্পগুলির পায়ের তলার মাটি। পাশাপাশি, সংস্কারের লক্ষ্যে কেন্দ্রের পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়িত হলে আর্থিক বৃদ্ধির হার মাথা তুলবে। যার অন্যতম পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি)। বৃদ্ধির স্বার্থে সংস্কারের গতি বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও কোমর বেঁধে এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।

যদিও রাজনের বক্তব্য, বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তিনি টেবিল চাপড়ানোর পক্ষপাতী নন। বরং এই প্রবণতা থেকে তিনি খুব সচেতন ভাবে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন।

বস্তুত, বৃদ্ধির উঁচু হারকে যে কোনও সরকারই নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরবে, এটাই দস্তুর। কারণ, সেটা তাদের প্রশাসনিক দক্ষতার অন্যতম নির্ধারক। জনগণের সামনে নিজেদের তুলে ধরার বড় হাতিয়ার। কিন্তু সেই হারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সমালোচনা কম হয় না।

এ দিন রাজনও বলেন, বৃদ্ধির হারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান সব সময়ই যে অর্থনীতির প্রকৃত ছবিটাকে তুলে ধরে তা নয়। হয়তো হার বেশ ভাল হল, কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অর্থনীতি সত্যি সত্যিই ততটা ভাল ভাবে এগোতে পারেনি। যে কারণে অনেক সময়ই ৭.৬% ও ৮% হারকে একই সারিতে গণ্য করা হয়। আর সেই কারণেই হার নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর বদলে অর্থনীতির সার্বিক ভালর জন্য ভাবনা-চিন্তা করাই সব থেকে বেশি জরুরি বলে দাবি করেন রাজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raghuram rajan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE