Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ বছরের জন্য ৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্য বাঁধল কেন্দ্র

আগামী মাসেই বিদায় নিচ্ছেন রঘুরাম রাজন। কিন্তু রেখে যাচ্ছেন পরম্পরা। সম্ভবত মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নাছোড় লড়াইও উত্তরাধিকারীর জন্য কিছুটা সহজ করে যাচ্ছেন তিনি।

দামের লড়াইয়ে হাতে হাত। জেটলি ও রাজন। ছবি: পিটিআই

দামের লড়াইয়ে হাতে হাত। জেটলি ও রাজন। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

আগামী মাসেই বিদায় নিচ্ছেন রঘুরাম রাজন। কিন্তু রেখে যাচ্ছেন পরম্পরা। সম্ভবত মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নাছোড় লড়াইও উত্তরাধিকারীর জন্য কিছুটা সহজ করে যাচ্ছেন তিনি।

আগামী পাঁচ বছরের জন্য মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করল মোদী সরকার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে রঘুরাম রাজন গোড়া থেকেই যার জন্য সওয়াল করে এসেছেন। ঋণনীতি নির্ধারণের সময় বরাবরই মূল্যবৃদ্ধির হার কমানোকেই পাখির চোখ করেছেন তিনি। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে শিল্পমহল সুদ কমানোর জন্য চাপ দিলেও, তিনি সেই চাপের সামনে মাথা নোয়াননি। যখন মনে করেছেন, মূল্যবৃদ্ধি (বিশেষত খুচরো বাজারে) সাধারণ মানুষের সহনীয় মাত্রার মধ্যে আছে, একমাত্র তখনই তিনি সুদের হার কমিয়েছেন। নইলে নয়।

আজ মোদী সরকার বস্তুত সেই নীতিতেই সিলমোহর বসিয়েছে। সংসদে সরকারি বিজ্ঞপ্তি পেশ করে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির প্রধান লক্ষ্য হবে মূল্যবৃদ্ধির দরকে লাগাম পড়িয়ে রাখা। তার সঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোকেও দেওয়া হবে গুরুত্ব। তবে তা স্বল্প মেয়াদে, প্রয়োজন অনুযায়ী। কিন্তু লম্বা দৌড়ে আসল লক্ষ্য হবে মূল্যবৃদ্ধিতেই লাগাম পরিয়ে রাখা। এখন থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যার লক্ষ্যমাত্রা ৪% ঠিক করেছে কেন্দ্র। বেশি হলে তার ঊর্ধ্বসীমা হবে ৬%। কম হলে তা ২% হবে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে আগামী মাসেই মেয়াদ ফুরোচ্ছে রঘুরাম রাজনের। দ্বিতীয় দফার জন্য তাঁকে ওই পদে ধরে রাখতে মোদী সরকার বা বিজেপি নেতৃত্ব বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু তাঁর নীতিতেই আজ সরকার সাংবিধানিক সিলমোহর বসিয়েছে। যার মাধ্যমে কেন্দ্র নিজেই মেনে নিল, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধান কাজ হবে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে রাজনের উত্তরসূরি হিসেবে যাঁকেই নিয়ে আসা হোক না কেন, অর্থনীতির গতি বাড়াতে তিনি যথেচ্ছ হারে সুদ কমাতে পারবেন না।

কিছুদিন আগেই রাজন বলেছেন, ‘‘লোকে যখন বলেন এখন তো বাজার দর কমে এসেছে, এ বার বৃদ্ধির হার বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে, তাঁরা বোঝেন না যে এটি একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য পূরণ করে সব সময়ই সুদের হার যথাসম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে।’’

এই হার না কমানোর জন্যই বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর তোপের মুখে পড়েছিলেন রঘুরাম রাজন। স্বামীর অভিযোগ ছিল, রাজন ইচ্ছাকৃত ভাবে সুদ বাড়িয়ে রাখছেন। তার ফলে শিল্পের জন্য ঋণের খরচ কমছে না। আর্থিক বৃদ্ধিতেও গতি আসছে না। স্বামীর পাশাপাশি মোদী সরকারের মন্ত্রী, বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় রাজনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থ মন্ত্রকের অন্তর্বর্তী আর্থিক সমীক্ষাতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অথচ আজ সেই নীতিতেই সিলমোহর বসিয়ে মোদী সরকার বার্তা দিল, রঘুরাম রাজন এত দিন যে ভাবে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন, সেই নীতি ভুল নয়।

নতুন ব্যবস্থায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজার দরকে ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার চেষ্টা করবে। ২ ও ৬ শতাংশর নিম্ন ও ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হবে। টানা ন’মাস যদি বাজার দর এই সীমার বাইরে থাকে, তা হলে ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হবে। এই ব্যর্থতার কারণ, তার দাওয়াই এবং সেই দাওয়াই দিয়ে কত দিনের মধ্যে আবার মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ফিরবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে তা জানিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এর ফলে রাজনের উত্তরসূরির কাজ কিছুটা সহজ হল। কারণ আগামী দিনে ছয় সদস্যের ঋণনীতি কমিটি সুদ ঠিক করবে। আজ সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে তাতেও সিলমোহর বসেছে। এই কমিটিতে গভর্নর, একজন ডেপুটি গভর্নর ও অফিসারকে নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তিন প্রতিনিধি থাকবেন। বাকি তিনজনের নাম সরকার ঠিক করবে। বৃদ্ধির হার বাড়াতে সরকারের তরফে সুদ কমানোর জন্য কমিটিতে চাপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু যেহেতু সরকারই মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আগে থেকে বেঁধে দিল, সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে গভর্নরের পক্ষে সেই চাপ প্রতিহত করাও খুব একটা কঠিন না-হওয়ার সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajan Jaitley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE