রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।
চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধি ছ’বছরেরও বেশি সময়ের তলানি ছোঁয়ার (৪.৫%) পরে প্রত্যাশা আরও বেড়েছিল। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবারের ঋণনীতিতেও আর এক দফা সুদ (রেপো রেট, স্বল্প মেয়াদে যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা তো হলই না। উল্টে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কমাল আরবিআই। যা দেখে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের তোপ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফেব্রুয়ারিতে বলেছিল, বৃদ্ধির হার ৭.৪% হবে। দফায় দফায় ছেঁটে তা নামাল ৫ শতাংশে। হয় ফেব্রুয়ারিতে আরবিআই অযোগ্যতা দেখিয়েছিল। না-হলে সরকার আট মাসে অযোগ্য ভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করেছে।
এ দিন সুদ অপরিবর্তিত রাখার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। তবে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই নিয়ে নীরবই থেকেছে তারা।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর ক্ষেত্রে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকে সব চেয়ে গুরুত্ব দেয়। এ দিনও সেটাই হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন আনাজ ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সেই হার যে ফের বেলাগাম হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে তারা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের যুক্তি, সুদ কমানোর পথ খোলাই থাকছে। আপাতত আগের পাঁচ দফায় সুদ ছাঁটাই এবং গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রের নানা পদক্ষেপ কতটা সুফল দেয়, তা দেখা হবে। শক্তিকান্তের মতে, আগে রেপো যতটা কমেছে, ততটা সুদের সুবিধা এখনও মানুষ পাননি। আগে সেটা করুক ব্যাঙ্কগুলি।
সুদ নিয়ে বার্তা
•সুদ অপরিবর্তিত। রেপো রেট ৫.১৫%।
•তবে খোলা রাখা হয়েছে তা কমানোর রাস্তা।
•রিভার্স রেপো আছে রেট ৪.৯০ শতাংশেই।
•রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মত, শুধু যন্ত্রের মতো প্রতি বার সুদ কমানো যায় না। আগে গত পাঁচ ঋণনীতিতে টানা ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাইয়ের সুবিধা যতটা বেশি সম্ভব গ্রাহকের দরজায় পৌঁছে দিক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি।
•আবার তা কমানোর আগে আগের দফার ছাঁটাইগুলি ও নানা রকম সরকারি পদক্ষেপ যৌথ ভাবে বৃদ্ধিকে ঠেলে তোলে কিনা সেটা দেখবে আরবিআই।
•ফেব্রুয়ারিতে অর্থনীতির আরও পরিসংখ্যান হাতে আসার পরে এবং আগামী বাজেটে সরকার কী
ঘোষণা করছে তা দেখার পরে সুদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভাল হয়।
এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অভীক বড়ুয়ার মতে, মূল্যবৃদ্ধির হার দেখেই এই সতর্কতা। একাংশের যুক্তি, চাহিদা ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি যে শুধু কম সুদের উপর নির্ভর করে না, তা বুঝেছেন শক্তিকান্তেরা। তবে অবাক স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমারের মতো কেউ কেউ। তাঁদের দাবি, এটা ‘‘অপ্রত্যাশিত চমক’’। খুশি নয় শিল্পও। ফিকির মন্তব্য, বৃদ্ধির চাকায় গতি আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ-নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত ছিল। অ্যাসোচ্যামের আক্ষেপ, এই সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত হত, যদি এত দিন রেপো রেট কমার সঙ্গে তাল রেখে সুদ কমাত ব্যাঙ্কগুলি। অনেকেরই ধারণা, শক্তিকান্ত আগামী দিনে সুদ কমানোর বার্তা দিলেও, মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে মাথা তুলছে তাতে সংশয় থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy