Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে তাড়া আরবিআইয়ের

নেট নিরাপত্তা নীতি তৈরির নির্দেশ

হ্যাকার হানা রুখতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে অবিলম্বে নির্দিষ্ট সাইবার নিরাপত্তা নীতি তৈরি করতে বলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমস্ত রকম ঝুঁকির কোনটি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা-ও আগাম চিহ্নিত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে তারা।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

হ্যাকার হানা রুখতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে অবিলম্বে নির্দিষ্ট সাইবার নিরাপত্তা নীতি তৈরি করতে বলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমস্ত রকম ঝুঁকির কোনটি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা-ও আগাম চিহ্নিত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে তারা।

সাইবার হানায় বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮.১ কোটি ডলার (প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা) খোওয়া যাওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে নতুন করে নড়ে বসেছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে সাইবার নিরাপত্তা পোক্ত করার নির্দেশ দিচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশও কিছুটা সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দেওয়া বলে ধারণা।

এ দিন এক বিবৃতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে, সাইবার হানার ঝুঁকি মাথায় রেখে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। ওই ধরনের আক্রমণ রুখতে যে সব ব্যবস্থা এখন রয়েছে, সেগুলি উন্নত করা দরকার। প্রয়োজন তাদের ঢেলে সাজা।

শীর্ষ ব্যাঙ্কের মতে, নতুন সাইবার নিরাপত্তা নীতিতে দু’টি বিষয় স্পষ্ট থাকা উচিত— (১) ওই আক্রমণ ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগাম তৈরি রাখা (২) হ্যাকার হানার মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে, তার পরিকল্পনা। এ জন্য সম্ভাব্য সমস্ত ঝুঁকিকে আগে থেকে কম, মাঝারি, বেশি এবং অত্যন্ত বেশির শ্রেণিতে ভাগ করে রাখতে হবে। যাতে সেই অনুযায়ী তাদের মোকাবিলার রাস্তাও তৈরি রাখা সম্ভব হয়।

স্রেফ নির্দেশ মানার খাতিরে যাতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কোনওক্রমে নীতি খাড়া না-করে, তা-ও নিশ্চিত করতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে কারণে তারা বলেছে ওই নীতি সার্বিক তথ্যপ্রযুক্তি কৌশলের থেকে আলাদা ভাবে তৈরি করতে। সাইবার আক্রমণ সামলানোর কৌশলে (সাইবার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান) লাগবে পরিচালন পর্ষদের সিলমোহরও।

যত দিন যাচ্ছে, তত বেশি করে প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। ইন্টারনেট-স্মার্টফোন-অ্যাপের দৌলতে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের দিকে অনেক বেশি করে ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষও। আর সেই সুযোগে বাড়ছে হ্যাকার হানা। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কথায়, সম্প্রতি সাইবার আক্রমণের সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। তা হচ্ছে ঘন-ঘন। তাদের অভিঘাতও অনেক বেশি তীব্র হচ্ছে আর্থিক সংস্থাগুলির উপর। তাই তা সামলাতে ব্যাঙ্কগুলির ঝাঁপানো উচিত।

সাম্প্রতিক হ্যাকার হানার উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের কথা। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সাইবার নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ভেঙে হানা দেয় হ্যাকাররা। আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে পড়শি দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কটির। সেখান থেকে ৯৫ কোটি ডলারেরও বেশি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। শেষমেশ দেখা যায়, ফিলিপিন্সের কিছু অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি ডলারেরও বেশি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কটির কর্ণধার।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছে সুইফ্‌ট-ও। এই সুইফ্‌ট কার্যত একটি সমবায়। যার সদস্য ৩,০০০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সদর সফতর ব্রাসেলসে। আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং লেনদেনে এই সুইফ্‌ট কোড জরুরি। কারণ, টাকা পাঠানোর জন্য তা অন্য দেশের ব্যাঙ্ক-কে চিহ্নিত করে। ঠিক যে ভাবে ভিন্‌ দেশের টেলিফোন কলকে পথ চিনিয়ে আনে আইএসডি কোড।

প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা আঁটোসাটো কি না, প্রতিটি সদস্য ব্যাঙ্ক-কে তা খতিয়ে দেখতে বলেছিল সুইফ্‌ট। হ্যাকারদের হাত থেকে লেনদেন সুরক্ষিত রাখতে যে সমস্ত নিরাপত্তা বিধি মানা উচিত, জোর দিয়েছিল তা যাচাইয়ে। মনে করিয়েছিল নিরাপত্তার আঁটুনি নিয়মিত জরিপ করার কথা।

সুইফ্‌টের সেই পরামর্শের পরে এ বার হ্যাকার হানা রুখতে ভারতের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে কোমর বাঁধতে বলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নির্দেশ দিল সর্বোচ্চ মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RBI commercial banks security policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE