Advertisement
০২ মে ২০২৪

কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্পে খোঁজ ৬৫ হাজার কোটির

অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্তও খোঁজ মিলেছিল মাত্র চার হাজার কোটি টাকার। সেখানে শুক্রবার স্বেচ্ছায় কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্পের (২০১৬) দরজা বন্ধ হয়েছে ৬৫,২৫০ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে। তবে তা কেন্দ্রের অঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার (এক লক্ষ কোটি) থেকে বেশ কম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্তও খোঁজ মিলেছিল মাত্র চার হাজার কোটি টাকার। সেখানে শুক্রবার স্বেচ্ছায় কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্পের (২০১৬) দরজা বন্ধ হয়েছে ৬৫,২৫০ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে। তবে তা কেন্দ্রের অঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার (এক লক্ষ কোটি) থেকে বেশ কম।

শনিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘৬৪,২৭৫ জন স্বেচ্ছায় কালো টাকার বিষয়ে জানিয়েছেন। ৬৫,২৫০ কোটির খবর মিলেছে।’’ অবশ্য তাঁর আশা, ‘‘ঘোষিত কালো টাকা আরও কয়েক হাজার কোটি বাড়বে।’’

কেন্দ্রের তরফে শেষ বেলায় হুমকি, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ইত্যাদির দৌলতেই ৬৫ হাজার কোটির বেশি কালো টাকার খোঁজ মিলেছে বলে সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত। কর, জরিমানা ও সেস মিলিয়ে যার ৪৫% (প্রায় ২৯,৩৬২ কোটি) আসতে চলেছে কেন্দ্রের ঘরে। তেমনই উল্টো মত হল, কেন্দ্রের অঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লক্ষ কোটি। কিন্তু আদপে ‘সাদা হওয়া কালো টাকা’র পরিমাণ থেমে গিয়েছে তার অনেক আগেই।

সরকারি ভাবে ঘোষণা না-করলেও, এক লক্ষ কোটি কালো টাকার সন্ধানকে লক্ষ্য বেঁধে ১ জুন প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র। শুরুতে সাড়া তেমন মেলেনি। পরিস্থিতি দেখে মুখ খোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। আয়কর দফতর হঁশিয়ারি দেয়, ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের দরজা বন্ধ হওয়ার পরে ১ অক্টোবর থেকেই শুরু হবে ধরপাকড়। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে দাবি, তার পরেই প্রকল্পে গতি আসে। এ দিনও জেটলি বলেছেন, ‘‘সময়ের মধ্যে যাঁরা ঘোষণা করলেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেবে আয়কর দফতর।’’

কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্পের দরজা বন্ধের পরে লুকোনো টাকা ধরা পড়লে বড়সড় খেসারত দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, এই প্রকল্পে কর (৩০%), কৃষি কল্যাণ সেস (৭.৫%) এবং জরিমানা (৭.৫%) গুনলেই কালো টাকা সাদা করা যেত। অর্থাৎ, মোট টাকার ৪৫% সরকারের ঘরে জমা দিয়ে রেহাই মিলত হয়রানি থেকে। শুধু তা-ই নয়। আয়ের সূত্রও জানতে চাওয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে নাম গোপন রাখারও। অথচ সেখানে এ বার কালো টাকা ধরা পড়লে, কিছু ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলারও সম্ভাবনা আছে।

প্রকল্পের দরজা বন্ধ হওয়ার পরে জরিমানা ও সুদ বাবদও অনেক বেশি টাকা গুনতে হবে। অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার্সের সহ-সভাপতি নারায়ণ জৈনের হিসেব অনুযায়ী, কেউ যদি ছ’বছর আগে ১ লক্ষ টাকার আয় গোপন করে এখন ধরা পড়েন, তবে তাঁকে সব মিলিয়ে গুনতে হবে অন্তত ৮১,৬০০ টাকা (বিশদ সঙ্গের সারণিতে)। সর্বাধিক ১,৪১,৬০০ টাকা। তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে একমত ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (পূর্বাঞ্চল শাখা) চেয়ারম্যান অরিন্দম দত্ত।

আয়কর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর অব ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন প্রিয়ব্রত প্রামাণিক বলেন, ‘‘কালো টাকার মালিকদের নিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছি। তার ভিত্তিতে তা উদ্ধারে পদক্ষেপ করব।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ করা হবে না। আইন মেনেই কাজ হবে। তিনি জানান, তথ্যভাণ্ডার গড়তে বিদেশ থেকে পাওয়া তথ্যও কাজে লাগানো হয়েছে। এ জন্য ৯৪টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। তার মধ্যে রয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানি, চিন, তাইল্যান্ড। মরিশাসের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। তবে তা মেনে তথ্য মিলবে ২০১৭ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

black money project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE