Advertisement
১১ মে ২০২৪

বাজারের মন পড়ে ব্যালট, বোমা, গদিতে

এ বার সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা নিয়েছিল মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দেশীয় সংস্থাগুলির লগ্নি। মোদী সরকারের কিছু সংস্কারের হাত ধরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এই আশাও উৎসাহ জুগিয়েছিল।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

সারা বছরে লগ্নিকারীদের সম্পদ মোট ২০.৭০ লক্ষ কোটি টাকা বাড়িয়ে বুধবারই এই অর্থবর্ষের মতো দৌড় শেষ করেছে শেয়ার বাজার। পরের দিকে খানিকটা অনিশ্চয়তা মাথাচাড়া দিয়েছিল ঠিকই। কয়েক বার বড় পতনও ঘটেছে। তবে মোটের উপর বছর মন্দ কাটেনি তার। সেনসেক্স বেড়েছে ৩,৩৪৮.১৮ পয়েন্ট। নিফ্‌টি ৯৩৯.৯৫। দুই সূচকের আওতাভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার মূল্য উঠেছে যথাক্রমে ১১.৩০% ও ১০.২৫%। নতুন শিখরে পা রাখার নজিরও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন আর্থিক বছরে ছবিটা অন্য রকম হতে পারে। জমাট বাঁধতে পারে অনিশ্চয়তা।

এ বার সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা নিয়েছিল মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দেশীয় সংস্থাগুলির লগ্নি। মোদী সরকারের কিছু সংস্কারের হাত ধরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এই আশাও উৎসাহ জুগিয়েছিল। যে কারণে ২৯ জানুয়ারি সেনসেক্স ৩৬,৪৪৩.৯৮ পয়েন্ট ছুঁয়ে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে। বন্ধ হয় ৩৬,২৮৩.২৫ অঙ্কে।

কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, আগামী বছর অনিশ্চয়তা গভীর হওয়ার আশঙ্কা। একে তো আমেরিকার শুল্ক বসানো ঘিরে বাণিজ্য-যুদ্ধের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে এই অর্থবর্ষের শেষেই। আতঙ্ক জারি উত্তর কোরিয়া ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি নিয়েও। সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশে রাজনৈতিক টানাপড়েন বাড়ার আশঙ্কা।

আগামী লোকসভা ভোটে কেউ আদৌ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লির মসনদ দখল করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যে সংখ্যা গরিষ্ঠতা বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে জ্বালানি জুগিয়েছিল বাজারে।

অনেকের দাবি, নোট বাতিলের প্রভাব, তাড়াহুড়োয় জিএসটি চালু, অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধি, নীরব মোদীর জালিয়াতি ইত্যাদি সমস্যার বীজ বুনেছে। তবে সব কিছু সত্ত্বেও ১১.৩% সেনসেক্সের বৃদ্ধি ভারতের শেয়ার বাজারের অভ্যন্তরীণ শক্তির দিকটিই তুলে ধরেছে বলে তাঁদের দাবি।

দৌড়

৩/০৪/১৭ ২৮/০৩/১৮

২৯,৯১০.২২ ৩২,৯৬৮.৬৮

• সেনসেক্স ৩,৩৪৮.১৮

৩/০৪/১৭ ২৮/০৩/১৮

৯,২৩৭.৮৫ ১০,১১৩.৭০

• নিফ্‌টি ৮৭৫.৮৫

লগ্নিকারীর সম্পদ

• ২০.৭০ লক্ষ কোটি টাকা বেড়েছে

ঠেলে তুলেছে

• কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার থাকা

• কিছু সংস্কারের হাত ধরে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকার আশা

• মিউচুয়াল ফান্ড-সহ দেশীয় আর্থিক সংস্থাগুলির টানা লগ্নি

রাশ টেনেছে

• নোটবন্দির পরের প্রভাব

• তাড়াহুড়োয় জিএসটি চালু

• আমেরিকা-উত্তর কোরিয়ার মধ্যে পরমাণু-হুমকির উত্তাপ

• নীরব মোদীর জালিয়াতি

• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বিপুল অনুৎপাদক সম্পদ

• ট্রাম্প টর্পেডোয় বাণিজ্য-যুদ্ধের আশঙ্কা

সামনের অনিশ্চয়তা

• লোকসভা ভোটে ত্রিশঙ্কু বা জোট সরকার আসার আশঙ্কা

• বাণিজ্য-যুদ্ধের সম্ভাবনা

• পরমাণু-হুমকি মাথা চাড়া দেওয়ার আশঙ্কা

তা ছাড়া, নতুন শেয়ার ছেড়ে বিভিন্ন সংস্থা ১.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছে। যা আগের বছরের তিন গুণেরও বেশি।

কিন্তু দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দে বলেন, ‘‘আগামী বছর সূচক থাকবে অনিশ্চয়তার কবলে।’’ একই মত ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের।

অজিতবাবু বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সমস্যার জের ভারতেও পড়বে। আমেরিকা, চিন এবং উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে যে উদ্বেগ মাথা তুলেছে, তার জের কত দূর গড়াবে বলা কঠিন।’’

কৌশিক ও পারেখ বলছেন, ‘‘দেশের মধ্যে অনিশ্চয়তার আভাসও পেতে শুরু করেছে বাজার। স্থায়ী সরকার নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন যত বড় হবে, তত তার বিরূপ প্রভাব পড়বেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Index uncertain financial year
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE