Advertisement
১১ মে ২০২৪
আর্থিক ফলের প্রভাব পড়বে দীর্ঘ মেয়াদে

বিহারের রায়ই আজ পথ দেখাবে শেয়ার বাজারকে

ধনতেরস, কালীপুজো, দীপাবলি এবং ভাইফোঁটা। এত কিছু নিয়ে কাটবে উৎসব মুখর সপ্তাহটা। গয়নার বিজ্ঞাপনে খবরের কাগজগুলি কয়েক দিন আগে থেকেই বেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রথা অনুযায়ী আজ থেকেই ভিড় উপচে পড়বে গয়নার দোকানে। দামের দিক থেকে সোনা বেশ কিছুটা নেমে চলে এসেছে সুবিধাজনক জায়গায়।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

ধনতেরস, কালীপুজো, দীপাবলি এবং ভাইফোঁটা। এত কিছু নিয়ে কাটবে উৎসব মুখর সপ্তাহটা। গয়নার বিজ্ঞাপনে খবরের কাগজগুলি কয়েক দিন আগে থেকেই বেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রথা অনুযায়ী আজ থেকেই ভিড় উপচে পড়বে গয়নার দোকানে। দামের দিক থেকে সোনা বেশ কিছুটা নেমে চলে এসেছে সুবিধাজনক জায়গায়। ফলে অনেকেরই ইচ্ছে করবে, অল্প হলেও কিনি। পাশাপাশি, প্রকৃত সোনার চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার এই মোক্ষম সময়ে বাজারে ছেড়েছে রাষ্ট্রীয় গোল্ড বন্ড প্রকল্প। ধনতেরসের ঠিক পরে দিওয়ালির সন্ধ্যায় এক শ্রেণির মানুষ মেতে উঠবেন শেয়ার কিনতে। দিওয়ালির প্রাক্কালে শেয়ার বাজার এ বার অনেকটাই ম্লান। বিহারের ভোটে বিজেপি জোটের হেরে যাওয়ার খবরই বাজারের গতিপথ নির্ধারণ করবে আজ। তবে একটু বড় মেয়াদে বাজারের উপর বড় প্রভাব থাকবে কোম্পানি ফলাফলের। বেশ কিছু বড় কোম্পানি আগের তিন মাসে খুব ভাল ফল প্রকাশ করেনি। উৎসবের মরসুমে বহু পণ্যের চাহিদা বাড়ায় আশা করা যায়, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে কোম্পানি ফলাফলে কিছুটা উন্নতি ঘটবে।

যাঁরা লগ্নি হিসেবে সোনা কিনতে চান, মূলত তাঁদের জন্যই গোল্ড বন্ড। বাজার দরের ভিত্তিতে ইস্যু করা হবে এই কাগুজে সোনা। ২ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের সোনার দামে কেনা যাবে এই স্বর্ণপত্র। প্রকল্পের বড় আকর্ষণ হল, লগ্নির উপরে সুদ মিলবে ২.৭৫% হারে। অর্থাৎ সোনার দাম যদি না-ও বাড়ে, তা সত্ত্বেও অন্তত কিছু আয় হবে এই লগ্নি থেকে। যাঁদের ভবিষ্যতে প্রকৃত সোনার প্রয়োজন হবে, তাঁরাও কিনে রাখতে পারেন গোল্ড বন্ড। দরকারে চালু থাকা সোনার দামে বন্ড বিক্রি করে বাজার থেকে প্রকৃত সোনা কেনা যেতে পারে। বন্ডের মেয়াদ ৮ বছর হলেও ৫ বছর পর থেকেই তা ভাঙানো যাবে। এ ছাড়া শেয়ার বাজারেও নথিবদ্ধ হবে এই বন্ড। তা ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে অথবা সার্টিফিকেট হিসেবে কেনা যেতে পারে। আবেদন নেওয়া হচ্ছে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। ২৬ নভেম্বর অ্যালটমেন্টের দিন।

বস্তুত প্রকৃত সোনার চাহিদা কমলে তা দেশের পক্ষে ভাল। জ্বালানি তেলের পরে আমদানির তালিকায় সোনা দ্বিতীয় স্থানে। বিপুল বিদেশি মুদ্রা খরচ হয় এই সোনা আমদানি করতে। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল, বছরে ভারত কম-বেশি ১,০০০ টন সোনা আমদানি করে। সোনায় যাঁরা লগ্নি করেছেন, তাঁরা গত এক বছরে লাভের মুখ দেখেননি, বরং বিক্রি করলে লোকসানই হয়েছে। ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বিশ্ব বাজারে দুর্বল হয়ে পড়েছে ধাতুটি। কবে আবার উঠবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এই কারণে লগ্নির জায়গা হিসেবে সোনার জৌলুস কিছুটা হলেও কমেছে। তবে সোনার আকর্ষণ একটুও কমেনি ভারতীয় মহিলাদের কাছে। পাকা সোনা এক সময়ে উঠেছিল প্রতি ১০ গ্রামে ৩২,০০০ টাকায়। তা এখন ঘোরাফেরা করছে ২৬,০০০-এর আশেপাশে। এই কারণে বৌবাজার এবং অন্যত্র গয়নার দোকানে আজ ভিড়ের কোনও ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। কয়েক বছর হল, বাঙালিরাও ধনতেরসে হুড়মুড়িয়ে সোনা কিনছেন। সোনা ছাড়া এই উৎসবের মরসুমে বিক্রি বাড়ে গাড়ি, বাইক, টিভি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি ‘সাদা পণ্য’র।

একটু একটু করে ফলাফলের মরসুমে গত দশ দিনে অনেকটাই নেমেছে শেয়ার সূচক। এক দিকে বিহারের ফলাফল নিয়ে আশঙ্কা এবং অন্য দিকে কিছু সংস্থার খারাপ ফলাফল দুর্বল করে রেখেছে শেয়ার বাজারকে। পাঁচ দফা ভোট পর্বের পর অবশেষে গতকাল বিহারের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে অবশ্য বাজারের খুশি হওয়ার কথা নয়। কারণ এই রায়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাত শক্ত হয়নি। বরং বিরোধী গোষ্ঠীকেই তা নতুন করে শক্তি জোগাবে। অর্থাৎ সোমবার বাজারে প্রাণ ফেরার সম্ভাবনা কম।

গত সপ্তাহে যে-সব কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ছিল ভাল এবং মন্দের মিশ্রণ। ইস্পাতের বাজার যখন খারাপ, তখন সবাইকে অবাক করে টাটা স্টিলের লাভ বেড়েছে ২২%। এই লাভ বেড়েছে আয় ১৮% কমা সত্ত্বেও। পাশাপাশি, ১০৫৬ কোটি টাকা ত্রৈমাসিক লোকসানের তথ্য প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টিল অথরিটি। এই সময়ে কোম্পানির আয়ও কমেছে ২,৪৫৩ কোটি টাকা। আয় বাড়া সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক অব বরোদার লাভ কমেছে প্রায় ৮৯%। আগের বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ৩,২৯১ কোটি টাকা লাভের জায়গায় এ বার একই সময়ে টাটা মোটরস-এর লোকসান হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা। একই সময়ে মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রার লাভ কমেছে ২.৪৩%। সপ্তাহ শেষে তাক লাগানো ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। শুধু আয় ও লাভই বাড়েনি, কমেছে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদও। তিন মাসে ব্যাঙ্কের নিট লাভ আগের বছরের ৩,১০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বার হয়েছে ৩,৮৭৯ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশার কথা শুনিয়েছেন ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। সব মিলিয়ে কোম্পানি ফলাফল অবশ্য খুব বেশি আশা জাগায় না। অর্থাৎ আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market affect bihar election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE