Advertisement
E-Paper

অবশেষে কিছুটা স্বস্তি বাজারে, বাছাই শেয়ার কিনুন অল্প অল্প করে

আগে অনেক বার হয়েছে। সম্প্রতি আরও এক বার হল। ফের বোঝা গেল, বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি ছাড়া গতি নেই। বিদেশি লগ্নি সামান্য সরলেই টলমল অবস্থা দুই শেয়ার সূচকের। শুধু শেয়ার নয়, এ বার ধাক্কা লেগেছে বন্ডের বাজারেও। টাকাও পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। ৩ বছরের মূলধনী লাভের উপর ন্যূনতম বিকল্প কর বা ম্যাট আদায়ের নোটিস পাওয়া মাত্রই আতঙ্কে সরতে শুরু করে বিদেশি লগ্নি। মে-র প্রথম কয়েক দিনে ভারত থেকে প্রস্থান করে ৬,৫০০ কোটি টাকা।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:০৫

আগে অনেক বার হয়েছে। সম্প্রতি আরও এক বার হল। ফের বোঝা গেল, বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি ছাড়া গতি নেই। বিদেশি লগ্নি সামান্য সরলেই টলমল অবস্থা দুই শেয়ার সূচকের।

শুধু শেয়ার নয়, এ বার ধাক্কা লেগেছে বন্ডের বাজারেও। টাকাও পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। ৩ বছরের মূলধনী লাভের উপর ন্যূনতম বিকল্প কর বা ম্যাট আদায়ের নোটিস পাওয়া মাত্রই আতঙ্কে সরতে শুরু করে বিদেশি লগ্নি। মে-র প্রথম কয়েক দিনে ভারত থেকে প্রস্থান করে ৬,৫০০ কোটি টাকা। ফলে বাড়তে শুরু করে ডলারের দাম। এক সময়ে তা অতিক্রম করে ৬৪ টাকার সীমা। অন্য দিকে বিশ্ব বাজারে গুটিগুটি বাড়ছিল অশোধিত তেলের দামও।

প্রয়োজন ছিল, ‘বাবা বাছা’ বলে বিদেশি লগ্নিকারীদের ফিরিয়ে আনা। আর, সেটাই করতে হল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। বসাতে হল এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, যারা এই বিতর্কিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে। এই দাওয়াইয়ে মন্ত্রের মতো কাজ হয় বাজারে। বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই সিদ্ধান্তে শুক্রবার সকাল থেকেই ভাল রকম তেতে ওঠে সেনসেক্স ও নিফটি। দিনের শেষে সেনসেক্স ওঠে ৫০৬ পয়েন্ট। আবার ফিরে আসে ২৭,০০০-এর ঘরে। প্রথম চার দিনে বাজার ভাল রকম নেমে আসার পরে সপ্তাহের শেষ দিনে বাজার এক ঝটকায় ৫০০ পয়েন্ট ওঠায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে। বাজার ওঠায় আর যে-সব শক্তি মদত জুগিয়েছে, সেগুলি হল ইংল্যান্ডের নির্বাচনের ফলাফল এবং বিশ্ব বাজার কিছুটা শক্তিশালী হয়ে ওঠা।

দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় বাজার ভাল রকম বিদেশি লগ্নি-নির্ভর। এই নির্ভরতা কমানোর একমাত্র উপায় হল, দেশীয় লগ্নি বাড়ানো, বড় সংখ্যায় সাধারণ মানুষকে বাজারমুখী করা। প্রভিডেন্ট ফান্ড তহবিলে বার্ষিক জমার ৫ শতাংশ ইক্যুইটিতে লগ্নির প্রস্তাব এই দিক থেকে স্বাগত। এই পথে প্রতি বছর বাজারে আসতে পারে কম-বেশি ৫,০০০ কোটি টাকা। জীবন বিমা নিগমও শেয়ার বাজারে একটি বড় লগ্নিকারী। এই ভাবে যদি দেশের ভিতর থেকে সংস্থাগত এবং ব্যক্তিগত লগ্নি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা যায়, তবে ধীরে ধীরে বিদেশি লগ্নির উপর নির্ভরতা কমতে পারে।

সুখের কথা, গত এপ্রিলে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে সম্পদের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছে ১১.৮৬ লক্ষ কোটি টাকায়। বাজার কিছুটা নেমে আসা সত্ত্বেও এপ্রিল মাসে যুক্ত হয়েছে ৩ লক্ষ নতুন ফোলিও।

ব্যাঙ্ক আমানত এবং অন্যান্য জমার উপর সুদ কমলে লগ্নিযোগ্য তহবিলের একটি ভাল অংশ সাধারণত শেয়ার বাজারের দিকে ধাবিত হয়। সম্প্রতি সুদ কমিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক। আশঙ্কা, জুনে তা আরও একবার কমতে পারে। কিন্তু হঠাৎই বাজার বেশ অনিশ্চিত হয়ে ওঠায় মানুষ ভরসা রাখতে পারছেন না। সুদ কমা সত্ত্বেও শেয়ারের পাশাপাশি দাম কমেছে বন্ডের। এই পরিস্থিতিতে মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না, কোথায় টাকা রাখা ঠিক হবে। শেয়ার-সাফল্যের একটি বড় মন্ত্র: পড়া-বাজারে প্রবেশ এবং চড়া-বাজারে প্রস্থান। বাজার অনেকটা পড়েছে। আরও যে নামবে না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এই কারণে এখন বেছে বেছে শেয়ার কিনতে হবে অল্প অল্প করে। বাছাই করতে হবে ২০১৪-’১৫ সালের আর্থিক ফলাফল দেখে। কিছু দিন আগে খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ার। ডলারের দাম বেড়ে ওঠায় এরা আবার চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দেখা পাওয়া যাচ্ছে কেনার তালিকায়।

গত সপ্তাহে ফল প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির পর এ বার ফলাফল নিয়ে হাজির হতে শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। তবে হতাশ করা ফলাফল প্রকাশ করেছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক। শেষ তিন মাসে এই অগ্রণী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৬২ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৩০৭ কোটি টাকায়। অন্য দিকে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের লাভ বেড়েছে ২৯%। পৌঁছেছে ২০৩ কোটি টাকায়। লাভ কমেছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার। সম্পত্তি বিক্রির সুবাদে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের লাভ ১৬.৭৩% বেড়ে পৌঁছেছে ১০১৮ কোটি টাকায়। গোটা বছরে লাভ হয়েছে ৪৩১৫ কোটি টাকা। কোম্পানি শেয়ার পিছু ৯ টাকা করে চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড দেবে। ৯% ত্রৈমাসিক লাভ বেড়েছে সিমেন্ট উৎপাদনকারী বিড়লা কর্পোরেশনের। ফলাফলের নিরিখে শেয়ার-দরে ভাল রকম পতন হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বাইক নির্মাতা হিরো মোটোকর্পের। সংস্থার ত্রৈমাসিক লাভ কমেছে ৭৭ কোটি টাকা। তারা প্রতিটি ২ টাকার শেয়ারে ৩০ টাকা চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড দেবে।

এ বার তাকানো যাক বাজারের দাম ও আয়ের অনুপাতের (পি ই রেশিও) দিকে। সেনসেক্সের আওতায় থাকা কোম্পানিগুলির পি ই রেশিও যখন ২০ ছুঁই ছুঁই, তখন ২২-এ পৌঁছে গিয়েছে নিফটির পি ই। এতটা নামার পরেও এই অনুপাত কিন্তু খুব সস্তা নয়। ১০-এর কম পি ই যুক্ত সংস্থাগুলি হল টাটা মোটরস, বিপিসিএল, কেয়ার্ন, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং এনএমডিসি।

ইস্যু করা শেয়ারের মোট বাজার দরের (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) ভিত্তিতে ভারতের প্রথম দশটি সংস্থা হল টিসিএস, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ওএনজিসি, আইটিসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কোল ইন্ডিয়া, সান ফার্মা, ইনফোসিস, স্টেট ব্যাঙ্ক এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। প্রথম ২০টি সংস্থার মধ্যে স্থান পেয়েছে ৪টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক— এইচডিএফসি (৫ম), আই সি আই সি আই (১২তম), অ্যাক্সিস (১৮তম) এবং কোটাক মহীন্দ্রা (১৯তম)। স্টেট ব্যাঙ্ক এই তালিকায় একমাত্র সরকারি ব্যাঙ্ক। প্রথম স্থানাধিকারী টিসিএস-এর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কম-বেশি ৫ লক্ষ কোটি টাকা, যা নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দরের ৫ শতাংশেরও বেশি।

share market situation expert opinion on share market share market relief amitabha guha sarkar share purchasing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy