Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

কর বাঁচান এপ্রিল থেকেই

সমাপ্ত সতেরো। পা আঠেরোয়। তবে সূচনা আদৌ শুভ হয়নি। প্রথম দিবসেই সুদ ছাঁটাই। সুদ কমানো হয়েছে ডাকঘরের প্রায় সব স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পেই। অবশ্য সুদ কমেছে নামমাত্র (১০ বেসিস পয়েন্ট)।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৮
Share: Save:

সমাপ্ত সতেরো। পা আঠেরোয়।

Advertisement

তবে সূচনা আদৌ শুভ হয়নি। প্রথম দিবসেই সুদ ছাঁটাই। সুদ কমানো হয়েছে ডাকঘরের প্রায় সব স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পেই। অবশ্য সুদ কমেছে নামমাত্র (১০ বেসিস পয়েন্ট)। তবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই ছাঁটাই ইঙ্গিত দেয় যে, সুদ আরও কমাতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর। যাঁরা আগে অবসর নিয়েছেন অথবা পয়লা এপ্রিল অবসরের কোর্টে পা রেখেছেন, তাঁদের জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত একটুও সুখের নয়।

চলুন এ বার ফিরে দেখি ’১৬-’১৭ বছরটা কেমন গেল। বলা বাহুল্য, সুদ-নির্ভর মানুষের বছরটা একটুও সুখে কাটেনি। গত বছরে বিভিন্ন জমা প্রকল্পে সুদ কমেছে অনেকটাই। সঙ্গে ছিল নোট বাতিলের যন্ত্রণা। তবে বাজারের দিকে তাকালে বলতে হবে— যাঁরা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করে থাকেন, তাঁদের জন্য বছরটা ছিল বেশ ভাল।

বছরের শেষ দিনে সেনসেক্স ২৭ পয়েন্ট খোয়ালেও গোটা বছরের নিরিখে সূচক খুশি রেখেছে সবাইকে। ২০১৬-র ৩১ মার্চ সেনসেক্স ছিল ২৫,৩৪২ অঙ্কে। এক বছরের ওঠা-পড়া শেষে তা থেমেছে ২৯,৬২০ অঙ্কে। নিট বৃদ্ধি ৪,২৭৮ পয়েন্ট বা ১৬.৮৮%। ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে এই সূচক খুইয়েছিল ৯.৩৫%। নিফ্‌টিও গত অর্থবর্ষে বেড়েছে ১৮.৫৬%। নোট বাতিলের প্রভাব সত্ত্বেও দুই প্রধান সূচকের এতটা উত্থানে শুধু বাজার নয়, বড় লাভ করেছেন মিউচুয়াল ফান্ড এবং এনপিএসের লগ্নিকারীরাও। ব্যাঙ্ক জমার উপর সুদ ক্রমাগত কমায় উত্থান দেখা দিয়েছে বন্ডের বাজারেও। সব মিলিয়ে লগ্নিকারীরা খুশি।

Advertisement

এ বার দেখা যাক, নতুন অর্থবর্ষে কী ভাবে প্রস্তুতি নিলে লগ্নিকারীরা স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। গোড়াতেই তৈরি করে ফেলতে হবে আর্থিক কাজকর্মের চেকলিস্ট। আসুন, এক নজরে দেখে নিই কী কী করতে হবে:

• ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সঞ্চয় শুরু করুন প্রথম মাস থেকেই। এ বার করছাড় বাবদ যে-অর্থ সাশ্রয় হবে (কম-বেশি ১২,০০০ টাকা), তা দিয়েই খুলতে পারেন ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম বা ইএলএসএস-এর এসআইপি।

• সেভিংসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা নামমাত্র সুদে পড়ে থাকলে তা আর্থিক দিক থেকে লাভজনক জায়গায় (যেমন লিকুইড ফান্ড) রাখুন।

• কর বকেয়া অবিলম্বে জমা করুন।

• আয়করের রিটার্ন ফাইল করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।

• আধার কার্ড না-থাকলে অবিলম্বে আবেদন করুন। এটি ছাড়া কিন্তু লগ্নির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হবে।

• বছরের গোড়াতেই ছকে নিন কর ও লগ্নির পরিকল্পনা। পড়তি সুদের বাজারে একটু বেশি আয় ও একইসঙ্গে কর বাবদ সুবিধার জন্য তহবিলের একাংশ শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন।

• ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করে খেয়াল রাখুন, সব জায়গা থেকে সুদ এবং ডিভিডেন্ড ঠিক সময়ে অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে কি না।

• কাগজ ঘেঁটে দেখুন, বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে কি না। মেয়াদি জমার মেয়াদ শেষে তা ভাঙানো বা নবীকরণ করা হয়েছে কি না।

চলুন, এ বার আরও সামনে তাকাই। কেমন যাবে ২০১৭-১৮ আর্থিক বছর? বাজার আশাবাদী। নোট বাতিলে আকাশ ভেঙে পড়েনি। শিল্প-মহল তা সামলে নিয়েছে। বাজারে এখন নোটের জোগান পর্যাপ্ত। এই কারণেই আবার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। দাম বাড়া কিন্তু শিল্পের দিক থেকে পুরোপুরি মন্দ নয়। কারণ, চাহিদা বাড়লে তবেই তো দাম বাড়ে। আর, অর্থনীতির নিয়ম মেনে চাহিদা এবং দাম বাড়লে শিল্পের সুবিধা হয়। দাম বাড়া এটারও ইঙ্গিত দেয় যে, মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়ছে।

খরচ করার মতো টাকা যে মানুষের হাতে এসেছে, তার ইঙ্গিত দিয়েছে গাড়ি শিল্প। মার্চে ভালই বিক্রি বেড়েছে গাড়ির। বিশদ তথ্য দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে। গাড়ি বিক্রি বাড়লে চাহিদা বাড়ে এই শিল্পের উপাদানের। যেমন, ইস্পাত, টায়ার, রবার, রং, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ও প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। বাড়তে শুরু করেছে কম এবং মাঝারি দামের বাড়ির চাহিদাও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সদর্থক।

বর্ষা স্বাভাবিকের আশেপাশে থাকলে আশা করা যায় ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে বাজার চাঙ্গা থাকবে। এ ছাড়া আগামী ২ মাস যে-দিকে নজর থাকবে তা হল: শেষ ত্রৈমাসিক তথা গোটা আর্থিক বছরের সংস্থার ফলাফল।

দেখা যাক, নতুন বছরে লগ্নির জল সুখের সরণিতে গড়ায় কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.