বিদ্যুৎ পরিষেবা চালাতে গিয়ে মাসে সব মিলিয়ে খরচ যদি দু’টাকা হয়, সেখানে কোষাগারে আয় হচ্ছে প্রায় অর্ধেক। এক টাকার মতো। বিদ্যুৎ চুরি, বিল ঠিকমতো আদায় না হওয়া-সহ নানা কারণে এই বিপুল ঘাটতির মুখে দাঁড়িয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। পরিস্থিতি এমনই যে, হাওয়া বুঝে এখন ব্যাঙ্কগুলি কার্যকরী মূলধনের জন্য ঋণ দিতেও গড়িমসি করতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমে বাজারে পড়ে থাকা টাকা ঘরে তুলতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মানছেন বিদ্যুৎ কর্তারাই। বণ্টন সংস্থা সূত্রে খবর, আয়-ব্যয়ের এই বিপুল ঘাটতি কমাতে এখন তাই একগুচ্ছ পদক্ষেপ করতে চলেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
বণ্টন সংস্থাকে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম-সহ নানা জায়গা থেকে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ কিনতে বহু টাকা খরচ করতে হয়। তার সঙ্গে কর্মীদের বেতন, পেনশন, সুদে-আসলে ব্যাঙ্কের দেনা শোধ করা ইত্যাদিতেও কম টাকা খরচ হয় না! সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে বণ্টন সংস্থার মাসে খরচের বহর ৩,০০০ কোটি টাকার আশপাশে। সেখানে বিদ্যুৎ বিক্রি করে ঘরে আসে ১,৫০০ কোটির মতো। অর্থাৎ ব্যয়ের তুলনায় আয় প্রায় অর্ধেক। বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, মূলত বিদ্যুৎ চুরি, বিল আদায় ঠিক মতো না হওয়া, মিটার না দেখা-সহ নানা কারণে এই ক্ষতি হচ্ছে। বিল আদায় বাড়াতে অতীতে বহুবার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এখনই ২০ শতাংশ আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে ওই কর্তাদের দাবি।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, আয়ের সঙ্গে খরচের সঙ্গতি নেই। তাই খরচে লাগাম দিয়ে রোজগার বাড়ানোর চেষ্টা করতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রী তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কাজে কোনও ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।
দাওয়াই
• অপ্রয়োজনীয় খরচ ছাঁটাই
• ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে অসাধু চক্র বন্ধ
• বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের উপরে কড়া নজর
• সঠিক মিটার রিডিং, সেই অনুসারে বিল তৈরি ও আদায়
• বিল বাকি রাখলে কড়া ব্যবস্থা
• আয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই, এমন জায়গায় বাড়তি খরচ নয়
• ক্ষতির জায়গা চিহ্নিত করা
• উপর ও নিচু তলার সমস্ত কর্মীদের মধ্যে সমম্বয়
• কাজে কোনও গাফিলতি কিংবা অজুহাত বরদাস্ত করা হবে না
• অগস্টের মধ্যে সমস্ত বকেয়া আবেদনকারীকে বিদ্যুৎ সংযোগ
বণ্টন সংস্থার টানাটানির সংসারে নগদ-পুঁজির অভাবে বার বার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ সামাল দেওয়া হচ্ছিল এতদিন। তার মধ্যে এসে পড়েছে কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা দেওয়ার চাপ। পরিস্থিতি এমনই যে, আয় বাড়ানোর পথ খুঁজে বার করতে না পারলে আগামী দিনে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবা শিল্প মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ শিল্পের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি মুখ্যসচিব মলয় দে-কে মাথায় রেখে সেই লক্ষ্যে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছেন।
সরকার মনে করছে, সংস্থার আর্থিক হাল ধরে রাখার ক্ষেত্রে কর্মীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির বিদ্যুৎ কর্মী সেই দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্য দিকে কর্মীদের দাবি, ক্ষতির দায় শুধু তাঁদের ঘাড়ে চাপালে চলবে না। রোজ কোটি-কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ ও প্রশাসনের কোনও রকম সাহায্য পাওয়া যায় না।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও অজুহাত তিনি আর শুনবেন না। ক্ষতি কমানোর ‘ওষুধ’ আগে খুঁজে বার করতে হবে। সেই নির্দেশ কাজে লাগাতেই সকলে মিলে এ বার একযোগে চেষ্টায় নামছেন বণ্টন কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy