Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হালখাতায় বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি সূচক

নতুন ২০৭৩ সম্বতের মুরত লেনদেনে শেয়ার বাজার প্রথমে উঠলেও শেষে তা আগের দিনের থেকে সামান্য নীচেই শেষ হয়। তবে ওই দিনের লেনদেনকে ভবিষ্যতে বাজার কেমন যাবে, তার ইঙ্গিত হিসাবে মানতে পুরোপুরি রাজি নন বিশেষজ্ঞরা।

বিএসিতে ঘণ্টা বাজিয়ে মুরতের সূচনায় প্রাচী দেশাই।-পিটিআই

বিএসিতে ঘণ্টা বাজিয়ে মুরতের সূচনায় প্রাচী দেশাই।-পিটিআই

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

নতুন ২০৭৩ সম্বতের মুরত লেনদেনে শেয়ার বাজার প্রথমে উঠলেও শেষে তা আগের দিনের থেকে সামান্য নীচেই শেষ হয়। তবে ওই দিনের লেনদেনকে ভবিষ্যতে বাজার কেমন যাবে, তার ইঙ্গিত হিসাবে মানতে পুরোপুরি রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এ দিন রবিবার হওয়ায় বিশ্ব বাজার ছিল বন্ধ। বর্তমান বিশ্বায়নের জমানায় অন্যান্য দেশের বাজার কেমন থাকে, তার উপর ভারতে শেয়ার সূচকের ওঠা-নামা অনেকটাই নির্ভর করবে।

এ দিন সন্ধ্যা ৬.৩০ থেকে ৭.৩০ পর্যন্ত এক ঘণ্টার বিশেষ মুরত লেনদেন শুরু হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সেনসেক্স ১৫৪ এবং নিফ্‌টি ৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে এই বৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত বাজার ধরে রাখতে পারেনি। লেনদেনের শেষে প্রায় স্থিতাবস্থাই বজায় থাকে বাজারে। সেনসেক্স আগের দিনের থেকে ১১.৩০ পয়েন্ট কমে ২৭,৯৩০.২১ অঙ্কে এবং নিফ্‌টি ১২.৩০ পয়েন্ট কমে ৮,৬২৫.৭০ অঙ্কে ঠেকে।

নতুন সম্বতের দিনটিকে শেয়ার বাজারের হালখাতা হিসাবে মানা হয়। ওই দিনই সাধারণত শেয়ার ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের জন্য লেনদেনের খাতা খোলেন। তাই এই বিশেষ দিনটিতে বাজার যেমন থাকে, তাকেই বাকি বছরে শেয়ার বাজার কেমন যাবে, তার ইঙ্গিত বলে মনে করে থাকে শেয়ার বাজার মহল। কিন্তু এ বার এই দিন রবিবার হওয়ায় বিশ্ব বাজার বন্ধ থাকার ফলে তার ব্যতিক্রম হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘অন্তত গত ৫০ বছরে রবিবার মুরত লেনদেন হয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। এ দিনের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে বাকি বছরে বাজারের হাল কেমন থাকবে, তা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলেই আমি মনে করি।’’

তবে বাজারের হাল ভবিষ্যতে কেমন যাবে, তা নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘বাজারে আপাতত স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা কম। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের যে আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে, তার বিরূপ প্রভাব থেকে শেয়ার বাজারের রেহাই পাওয়া মুশকিল। এই অবস্থায় বাজারে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা কম বলেই আমি মনে করি। শুধু তাই নয়, অবস্থার উন্নতি না হলে নিফ্‌টি ৪০০ পয়েন্ট এবং সেনসেক্স প্রায় হাজার খানেক পয়েন্ট কমে গেলেও অবাক হব না।’’

তবে অজিতবাবু এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ অবশ্য ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ে বিশেষ আশাবাদী। ওই দুই বিশেষজ্ঞ মনে করেন ‘‘ভারতের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার বাজারের চাঙ্গা হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’’ তাঁরা যে-সব যুক্তি দিয়েছেন, সেগুলি হল:

কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার থাকা।

মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খুশি। ফলে সুদ আরও কমার সম্ভাবনা।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে আসা এবং সোনা আমদানিতে কেন্দ্র রাশ টানায় ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি আগের থেকে অনেকটাই কমে আসা।

সম্প্রতি স্পেকট্রাম নিলাম, বিলগ্নিকরণ এবং কালো টাকা উদ্ধার প্রকল্পে কেন্দ্রের হাতে ভাল অর্থ আসা। আশা করা যায়, ওই টাকা দেশের পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মীদের বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ায় ইতিমধ্যেই চাহিদা বেড়েছে, গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধিকে যার উদাহরণ বিসাবে তুলে ধরেছেন অজিতবাবুর মতো বিশেষজ্ঞরা।

তবে উদ্বেগের কারণ যে নেই, তা নয়। সপ্তাহখানেক বাদেই আমেরিকায় নিবার্চান। শেয়ার বাজার মহলের আশঙ্কা, ‘আউটসোর্সিং’-এর বিরোধী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোলান্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে বাজারে তার ভাল রকম বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভানা। কারণ এতে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া ইউরোপের আর্থিক সমস্যাও ভারতের শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা
প্রকাশ করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stock Share market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE