Advertisement
E-Paper

টাটা সন্সকে বিভ্রান্ত করেন সাইরাস মিস্ত্রি, তোপ ইজিএমের আগে

বোর্ডরুম যুদ্ধের শেষ পর্বে পারদ চড়ছে টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতের। রবিবার নতুন করে বিবৃতি জারি করে টাটা সন্সের অভিযোগ, চেয়ারম্যান পদ পেতে বাছাই কমিটিকে বিভ্রান্ত করেন সাইরাস মিস্ত্রি। ২০১১ সালেই গড়া হয় ওই কমিটি। ক্ষমতা হাতে নিতে মরিয়া মিস্ত্রি ভুল বোঝান বাছাই কমিটিকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৫

বোর্ডরুম যুদ্ধের শেষ পর্বে পারদ চড়ছে টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতের।

রবিবার নতুন করে বিবৃতি জারি করে টাটা সন্সের অভিযোগ, চেয়ারম্যান পদ পেতে বাছাই কমিটিকে বিভ্রান্ত করেন সাইরাস মিস্ত্রি। ২০১১ সালেই গড়া হয় ওই কমিটি। ক্ষমতা হাতে নিতে মরিয়া মিস্ত্রি ভুল বোঝান বাছাই কমিটিকে। দায়িত্ব পেলে তিনি গোষ্ঠীর জন্য অনেক পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কোনও কথাই রাখেননি। পাশাপাশি মিস্ত্রিও এ দিন অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড দুর্নীতিতে জড়িয়ে দিলেন টাটা সন্সের মনোনীত ডিরেক্টর বিজয় সিংহের নাম। তাঁকে সরাতে রতন টাটার চক্রান্তের অন্যতম অংশীদারও সিংহ বলে তোপ দাগেন মিস্ত্রি।

টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে দেওয়ার পরে এ বার গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার পরিচালন পর্ষদে তাঁর ডিরেক্টর পদ খারিজ করার পালা। সেই লক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডারদের সায় পেতে বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএম ডেকেছে তারা। চলতি সপ্তাহের ১৩ তারিখ থেকে পরপর ইজিএম শুরুর আগেই দু’পক্ষের এই চাপান-উতর। টাটা সন্সের বিবৃতির লক্ষ্য ইজিএমে মিস্ত্রিকে সরানোর পক্ষে রায় দিতে শেয়ারহোল্ডারদের আর্জি জানানো। আবার মিস্ত্রির পাল্টা, রতন টাটার স্বভাবের জন্যই ব্র্যান্ড হিসেবে মার খাচ্ছে ‘টাটা’। রতন টাটার খামখেয়ালি কাজকর্মের প্রভাব থেকে গোষ্ঠীকে আগলে রাখতেই ক্ষমতায় থাকার সময়ে চেষ্টা করেছেন তিনি।

টাটা সন্স জানিয়েছে, মিস্ত্রির উপর কেন আস্থা হারিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা স্পষ্ট করতে চায় তারা। মিস্ত্রির দেওয়া ‘লম্বা-চওড়া’ প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই তাঁকে চেয়ারম্যান হিসেবে কমিটি বেছে নেয় বলে দাবি করেছে টাটা সন্স। কিন্তু চার বছর তাঁকে এই পদে বহাল রেখে অপেক্ষা করার পরেও কার্যত কোনও পরিকল্পনাই মিস্ত্রি রূপায়ণ করেননি বলেও অভিযোগ টাটা গোষ্ঠীর মূল হোল্ডিং সংস্থা টাটা সন্সের।

পারিবারিক উদ্যোগ শাপুরজি-পালোনজি থেকে দূরত্ব বজার রেখে চলার প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেননি মিস্ত্রি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর আচরণ ‘বেঠিক’ বলে অভিযোগ এনেছে টাটা সন্স। তাদের মতে এটি ‘বিশ্বাসভঙ্গের’ নামান্তর ও সংস্থা পরিচালনার ব্যাপারে টাটা সন্সের নীতির পরিপন্থী। এর জেরে মিস্ত্রির নেতৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। টাটাদের আরও অভিযোগ, এই উদ্বেগে নতুন মাত্রা যোগ করে গোষ্ঠীতে মিস্ত্রির সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। এর জেরে বিভিন্ন সংস্থার পরিচালন পর্ষদে গত ৩-৪ বছরে কমতে থাকে টাটা সন্সের প্রতিনিধিত্ব। তাঁর উপর টাটাদের ‘দায়িত্ব ছেড়ে রাখা’ ও ‘বিশ্বাস’-এর সুযোগ নিয়েই মিস্ত্রি পরিচালন ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছেন বলেও অভিযোগ। এ সবের জেরেই গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে টাটা সন্স। টিসিএস বাদে গোষ্ঠীর সব সংস্থা থেকেই ডিভিডেন্ড খাতে আয় কমেছে, কর্মী বাবদ খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের পক্ষে আর এই ঝুঁকি মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলেই সরানো হয় মিস্ত্রিকে।

টাটা সন্সের সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন মিস্ত্রি। তাঁর দফতরের দাবি, অভিযোগ থাকলে আইন মেনে কমিটি গড়তে পারত টাটারা, যার হাতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার ভার দেওয়া যেত। পরিচালন ব্যবস্থা প্রসঙ্গেও মিস্ত্রির পাল্টা দাবি, টাটা সন্সের চেয়ারম্যানকেই গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার মাথায় বসানোর প্রথা রতন টাটার আমল থেকেই চলে আসছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উপায়ও তাঁর সামনে ছিল না, দাবি মিস্ত্রির। কারণ, তাঁর কাজ তদারকির জন্য ছিলেন ৫০ জনেরও বেশি স্বাধীন ডিরেক্টর।

টাটা ট্রাস্টের মনোনীত ডিরেক্টর হিসেবে ২০১৩ সালে আনা হয় প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্য সচিব বিজয় সিংহকে, যাঁর বিরুদ্ধেও এ দিন তোপ দাগেন মিস্ত্রি। সাইরাসের অভিযোগ তিনি অগুস্তা হেলিকপ্টার দুর্নীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন, যা উড়িয়ে দিয়েছেন সিংহ। মিস্ত্রির অভিযোগ, তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরাতে রতন টাটার সঙ্গে মূল চক্রান্তকারীদের তালিকায় রয়েছেন বিজয় সিংহ। নিজের ভূমিকাকে আড়াল করতে মিস্ত্রির বিরুদ্ধে গল্পও ফেঁদেছেন সিংহ, এই অভিযোগ এনেছেন মিস্ত্রি। অথচ ২৮ জুনই টাটা সন্সের মনোনয়ন ও বেতন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মিস্ত্রির কাজের প্রশংসা করেন সিংহ। এখন সিংহের অভিযোগ, টাটা মোটরসের জন্য মিস্ত্রি কিছুই করেননি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বড় বরাতও মিস্ত্রির জন্যই হাতছাড়া হয়। যে-জন্য দরপত্র দেয় টাটা পাওয়ার ও টাটা মোটরস। মিস্ত্রির দাবি, রতন টাটা ও সিংহ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাই মিস্ত্রির উপর পুরো দায় বর্তায় না।

উল্লেখ্য, বোর্ড বা পর্ষদের ডিরেক্টর পদ থেকে মিস্ত্রিকে সরাতে ১৩ ডিসেম্বর ইজিএম ডাকা হয়েছে টিসিএসের, টাটা টেলি ১৪ই, ইন্ডিয়ান হোটেল্‌স ২০শে, টাটা স্টিল ২১শে, টাটা মোটরস ২২শে, টাটা কেমিক্যালস ২৩শে, টাটা পাওয়ার ২৬শে। তার ঠিক আগে নিজেদের সমর্থনে রবিবার ঘুঁটি সাজিয়েছে দু’পক্ষই।

Cyrus Mistry Agusta Scam Tata Sons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy