বাজার এখন বাজেট জ্বরে আক্রান্ত।
জেটলির ব্রিফকেসে বাজার-উত্তেজক অনেক কিছু থাকবে, এই আশায় গত কয়েক দিন ধরে তরতরিয়ে বেড়েছে শেয়ার সূচক। তবে শুধু বাজেটই নয়, বাজারকে ইন্ধন জুগিয়েছে আশঙ্কার তুলনায় অনেকটাই ভাল কোম্পানি ফলাফল। নোট বাতিলের প্রতিকূল হাওয়া যে-কাটতে চলেছে, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। কম-বেশি ১০ লক্ষ কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে এসে যাওয়ায় ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতি। কিছুটা চাহিদা ফিরছে শিল্পে। তাই বাজার এখন আশা নিয়ে তাকিয়ে সামনের দিকে।
শুক্রবার বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২৭,৮৮২ পয়েন্টে। গত সপ্তাহের চারটি কাজের দিনে সূচক উঠেছে মোট ৮৪৮ পয়েন্ট বা ৩.১৩ শতাংশ। নোট বাতিলের পরের দু’মাসে সূচক যতটা পড়েছিল, তার পুরোটাই কেটে গিয়েছে গত সপ্তাহে। ৮ নভেম্বর অর্থাৎ নোট বাতিল ঘোষণার দিন সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২৭,৫৯১ পয়েন্টে। বহু শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ ফিরে এসেছে আগের জায়গায়।
ভরা জোয়ার এখন কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের দুনিয়ায়। গত সপ্তাহে অক্টোবর-ডিসেম্বরের ফল প্রকাশ করেছে একগুচ্ছ প্রথম সারির সংস্থা। অনেকেই আশঙ্কার তুলনায় ভাল ফল উপহার দিয়েছে। তালিকায় আছে আইটিসি, মারুতি, এলঅ্যান্ডটি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক পিএনবি হাউসিং ফিনান্স, এক্সাইড, এভারেডি, জে কে পেপার-সহ বেশ কিছু কোম্পানি। খারাপ ফলাফলের তালিকায় স্থান পেয়েছে ভারতী এয়ারটেল এবং উইপ্রো-সহ গুটিকতক সংস্থা। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল কিছু ফলাফল।
গরম নতুন ইস্যুর বাজারও। তেমন ভাল ইস্যু না-হওয়া সত্ত্বেও অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) পাবলিক ইস্যু। ৫০ গুণেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে ভারতে কোনও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম শেয়ার ইস্যুতে।
কিছু দিনের মধ্যেই আমরা দেখতে পাব দেশের বৃহত্তম শেয়ার বাজার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের পাবলিক ইস্যু। গত সপ্তাহে প্রতি ৩টির জন্য ১টি করে বোনাস শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত গেইল ইন্ডিয়া। বাজারের প্রতি যে লগ্নিকারীদের আস্থা আছে, গত সপ্তাহে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সিপিএসই ইটিএফ ইস্যু এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ম্যাঙ্গানিজ ওর সংস্থার বিলগ্নিকরণ ইস্যুর সাফল্য থেকে।
ফিরে আসা যাক বাজেটের কথায়। বাজেট নিয়ে আশা এ বার তুঙ্গে। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের করদাতারা আশা করছেন: করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে, কমতে পারে সর্বোচ্চ করের হার, পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে করের স্তর, বাড়তে পারে ৮০সি ধারার অধীনে করছাড়ের মাত্রা ইত্যাদি। কর্পোরেট দুনিয়ার আশা: এ বার কমানো হতে পারে কোম্পানি কর। তাদের দাবি: কমানো হোক শেয়ার লেনদেন কর বা এসটিটি, ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নির মাত্রা বাড়িয়ে করা হোক ২ লক্ষ টাকা, মূলধনী লাভকর বাবদ সুবিধার জন্য ঋণপত্র-নির্ভর মিউচুয়াল ইউনিট ধরে রাখার মেয়াদ ৩৬ মাস থেকে কমিয়ে করা হোক ১২ মাস। এ ছাড়া সরকারের মাথায় আছে— একদম নিচুতলার মানুষের সামাজিক সুরক্ষা বাবদ নামমাত্র মূল্যে স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা।
এত সব আশার কতটা জেটলি পূরণ করতে পারবেন, তা জানা যাবে বাগ্দেবীর আরাধনা করতে করতে আগামী বুধবার।
বাজেট প্রসঙ্গে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, জনমোহিনী বাজেট মানেই কিন্তু তা শেয়ার বাজারের পক্ষে ভাল না-ও হতে পারে। জনগণকে বেশি ছাড় দিতে যদি রাজস্বে ঘাটতি পড়ে, তবে তাকে বাজার ভাল চোখে দেখবে না। বাজেট থেকে শিল্প-বাণিজ্যের যে-আশা, তা না-মিটলে চুপসে যেতে পারে ইতিমধ্যেই স্ফীত শেয়ার সূচক। অন্য দিকে বাজেট যদি বাজারের মনে ধরে, তবে সূচকের উত্থান অব্যাহত থাকবে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের সুপারিশ— বেশি মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ করে বেশি ছাড় দেওয়া হোক।
সব ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন অরুণ জেটলি, সংসদে বুধবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy