লগ্নি-কথার মাঠ
দেশে থাকুন বা প্রবাসে, লগ্নি তো করতেই হবে। মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, ভারতে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি কি বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারেন? অথবা অনাবাসীরা কী ভাবে লগ্নি করতে পারেন স্থাবর সম্পদে? প্রশ্ন-উত্তরে এ সবেরই খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।
অনাবাসী থাকার সময়ে কেনা বিদেশি স্থাবর সম্পত্তি কি ভারতে ফেরত এলেও রাখা যায়?
বিদেশি মুদ্রা লেনদেন আইন (ফেমা), ১৯৯৯ সালের ৬(৪) ধারা অনুসারে, কোনও ভারতীয় বিদেশে সম্পত্তি রাখতে, লগ্নি করতে বা হস্তান্তর করতে পারেন। তবে শর্ত হল, তিনি অনাবাসী থাকার সময়ে ওই সম্পত্তি তাঁর হাতে আসতে হবে। অথবা কোনও অনাবাসী ভারতীয়ের থেকে তা উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে হবে।
কোনও ভারতীয় কি বিদেশে টাকা পাঠাতে বা সম্পত্তি কিনতে পারবেন?
লিবারালাইজ়ড রেমিট্যান্স স্কিমের (এলআরএস) আওতায় বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি কেনার জন্য প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২.৫০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো যায়। যদি কোনও পরিবারের একাধিক ব্যক্তি এক সঙ্গে ওই সীমার বেশি অর্থ দিয়ে বিদেশে সম্পত্তি কিনতে চান, তা হলে সেই সম্পত্তি এক সঙ্গে সকলের নামে নথিভুক্ত করতে হবে।
কাদের ক্ষেত্রে সীমা প্রযোজ্য নয়?
যদি সেই ব্যক্তি—
• বিদেশি নাগরিক হন।
• ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাইয়ের আগে সেই সম্পত্তি হাতে এসে থাকে এবং অনুমতি পাওয়ার পরে টানা তার দখল বজায় থাকে।
• যদি ওই সম্পত্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য লিজ় নেওয়া হয়।
কী ভাবে কোনও ভারতীয় বিদেশে সম্পত্তি হাতে পেতে পারেন?
• ফেমা-র ৬(৪) ধারায় কিনলে।
• উত্তরাধিকার সূত্রে বা উপহার হিসেবে পেলে (শর্ত হল, তা ফেমার ৬(৪) ধারা মেনে কেনা বা ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাইয়ে আগে হাতে আসা সম্পত্তি হয়ে থাকতে হবে)। অথবা সম্পদ অধিগ্রহণের সময়ে তখনকার আইন মেনে তা করা হলে।
• ভারতীয়ের রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি (আরএফসি) অ্যাকাউন্টের টাকায় সম্পত্তি কেনা হয়ে থাকলে।
• দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে বলা ব্যক্তি আত্মীয় হলে এবং তাঁর কাছ থেকে সম্পত্তি উপহার পেলে।
• এলআরএস প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে (সর্বোচ্চ বছরে ২.৫০ লক্ষ ডলার) সম্পত্তি কিনলে।
• কোনও আত্মীয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে। তবে সে ক্ষেত্রে ভারত থেকে টাকা বিদেশে গেলে চলবে না।
• বিদেশে অফিস থাকা কোনও সংস্থা ব্যবসা বা থাকার প্রয়োজনে সম্পত্তি কিনতে পারে।
অনাবাসীদের ভারতে লগ্নি
চাইলেই অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই) অথবা ভারতে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরা (ওসিআই) ভারতে সম্পত্তি কিনতে বা বেচতে পারেন না। সঙ্গে একটি তালিকা দিলাম (কেনাবেচায় বাধা নেই)। এটি থেকে বোঝা যাবে, কাদের কাছ থেকে কারা সেই সম্পদ কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন।
তালিকা থেকে বোঝা যাচ্ছে অনাবাসী ভারতীয়েরা এক মাত্র কৃষি জমি বাদে অন্যান্য জমি বা সম্পদ কেনা-বেচা করতে পারেন। আর কৃষি জমি এক মাত্র উপহার হিসেবে হাতে আসতে পারে। সেটি বিক্রিও করা যায় শুধু মাত্র ভারতীয় নাগরিককেই।
এ বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কয়েকটি প্রশ্ন মনে আসে। যেমন—
সম্পত্তি কেনার জন্য টাকা দেবেন
কী ভাবে?
• ভারতে অনাবাসী ভারতীয়দের স্থাবর সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
• চাইলে এনআরই, এনআরও অথবা এফসিএনআর (বি) অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা মেটানো যায়।
• ওই সম্পত্তির জন্য দেশেই কর দিতে হবে।
• ট্রাভেলার্স চেক অথবা বিদেশি মুদ্রায় সম্পত্তির দাম দেওয়া যায় না।
বিদেশিরা কি আদৌ ভারতে সম্পত্তি কিনতে পারেন?
• আগে থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, চিন, ইরান, নেপাল, ভুটান, ম্যাকাও, হংকং অথবা ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার (ডিপিআরকে) নাগরিকরা ভারতে সম্পত্তি কিনতে পারেন না। তাঁরা যে দেশেই বসবাস করুন না কেন, এই নিয়ম তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক মাত্র সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের লিজে সম্পত্তি ভাড়া নিতে পারেন।
• তবে ওসিআইদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
• ওই ১১টি দেশ ছাড়া ভারতে বসবাসকারী কোনও বিদেশি নাগরিক এ দেশে সম্পত্তি কিনতে পারেন।
• এর বাইরে সব সম্পত্তি কেনা বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিদেশিদের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আগাম অনুমোদন লাগবে।
দীর্ঘ মেয়াদি ভিসাধারীরা কি এখানে সম্পত্তি কিনতে পারেন?
• পাকিস্তান, বাংলাদেশ অথবা আফগানিস্তানের নাগরিক কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ (হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, পারসি, বৌদ্ধ, জৈন), যাঁদের কেন্দ্রের অনুমতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতে থাকার ভিসা রয়েছে, তাঁরা এখানে নিজে থাকার জন্য একটি মাত্র বসতবাড়ি কিনতে পারেন।
• পেশাদার হলে, এর সঙ্গে নিজের ব্যবসা চালানোর জন্য একটি স্থাবর সম্পত্তিও কিনতে পারেন তাঁরা।
এনআরআই অথবা ওসিআইয়ের স্বামী বা স্ত্রী (যিনি এনআরআই অথবা ওসিআই নন) কি ভারতে সম্পত্তি কিনতে পারেন?
হ্যাঁ। তাঁরা স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ ভাবে ভারতে একটি মাত্র সম্পত্তি কিনতে পারেন (কৃষি জমি/ ফার্ম হাউস/ বাগান বাদে)।
লেখক কর বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)