Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নোট ভরার ম্যারাথনে খোঁড়াচ্ছে টাকার গাড়িও

কিছু দিন আগেও এটিএমে একবার টাকা ভরলে দিব্যি চলে যেত প্রায় গোটা দিন। কিন্তু পুরনো ৫০০, হাজারের নোট বাতিল ও তা যুঝতে টাকার নিয়ন্ত্রিত জোগানের নিয়ম সেই ছবিটাকে আমূল বদলে দিয়েছে আচমকাই।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৭
Share: Save:

কিছু দিন আগেও এটিএমে একবার টাকা ভরলে দিব্যি চলে যেত প্রায় গোটা দিন। কিন্তু পুরনো ৫০০, হাজারের নোট বাতিল ও তা যুঝতে টাকার নিয়ন্ত্রিত জোগানের নিয়ম সেই ছবিটাকে আমূল বদলে দিয়েছে আচমকাই। এখন রোজ দিনে-রাতে প্রতিটি এটিএমের সামনে চোখে পড়ছে টাকার জন্য হা-পিত্যেশ অপেক্ষার লম্বা লাইন। যার চাপ সামলাতে নাজেহাল ওই যন্ত্রে টাকা ভরার গাড়িগুলির।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এটিএম থেকে নগদ তোলার চাহিদা এই ক’দিনে এক ধাক্কায় বহু গুণ বাড়লেও, চালু পরিকাঠামো দিয়ে তা পূরণ করতে সমস্যায় পড়ছে ওই ব্যবসায় যুক্ত সংস্থাগুলি। কারণ, গাড়ি করে টাকা বয়ে নিয়ে গিয়ে এটিএমে ভরে দেওয়ার এই কাজে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেকখানি। ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে এ জন্য রাতারাতি বাড়তি পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলা প্রায় অসম্ভব।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক থেকে এটিএমে টাকা পৌঁছে দিতে শুধু ভাল ও মজবুত গাড়ি কিনলেই চলে না। নিশ্চিত করতে হয় সুরক্ষার বজ্র-আঁটুনি। গাড়িতে আটকাতে হয় মোটা জাল। তৈরি করতে হয় আলাদা গেট। ভেতরে সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় তৈরি করতে হয় টাকা রাখার ভল্ট। আর এই সব কিছুর জন্য গাড়িটিকে প্রায় ঢেলে সাজতে সময় লেগে যায় এক থেকে দেড় মাস।

পাশাপাশি, কড়া পাহারায় টাকা নিয়ে যাওয়া ও সুরক্ষিত ভাবে সেগুলি এটিএমে ভরার জন্য লাগে যোগ্য রক্ষীও। আচমকা যাঁদের বাড়তি জোগান সব সময়ে না-ও মিলতে পারে। কারণ, এই কাজে নতুন কাউকে হুট করে নিয়োগ করা ঝুঁকির। সে জন্য আগে তাঁর ঘরবাড়ি-সহ যাবতীয় ঠিকুজি-কোষ্ঠী খতিয়ে দেখতে হয় এটিএমে টাকা পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। রক্ষীর জন্য নতুন বন্দুকের লাইসেন্স নেওয়াও সময়সাপেক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির দাবি, তাই চাইলেই দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য এত তাড়াতাড়ি এই সমস্ত বন্দোবস্ত করে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পুরনো বড় নোট বাতিলের জেরে জরুরি ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির উপর বাজারে নগদের জোগান নিশ্চিত করার বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

তাদের এক কর্তা জানান, আগে বড় অঙ্কের নোটে ভরলে এটিএমে বেশি টাকা রাখা যেত। কিন্তু এখন শুধু ১০০ টাকা ভরতে হওয়ায় তার পরিমাণও ছাঁটতে হয়েছে। ফলে সেখানে টাকার চাহিদা বাড়লেও, তা পোষাতে পারছে না জোগান। এটিএমে ঢোকানোর পরে এক থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে কর্পূরের মতো উবে যাচ্ছে টাকা।

বস্তুত, ব্যাঙ্ক থেকে এটিএমে টাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবসায় যুক্ত দেশি-বিদেশি বহু সংস্থা রয়েছে এ রাজ্যেও। তাদের দাবি, জরুরি ছাড়া সব ছুটি বাতিল করে গত ক’দিন তাদের কর্মীরা কাজ করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক সময়ে রক্ষীর অভাবই কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরা অনেকেই নিজস্ব রক্ষীর পাশাপাশি বেসরকারি নিরপত্তার সংস্থার কাছ থেকেও লোক নেয়। কিন্তু পুরোটা তারাও মেটাতে পারছে না। আবার নিজেদের রক্ষী নিয়োগও সময়সাপেক্ষ। তাদের আর এক কর্তার দাবি, ‘‘এই সব কারণেই আপৎকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলানো সব সময়ে সম্ভব হচ্ছে না।’’

আবার একটি সংস্থার দাবি, তাদের সব গাড়ি সব সময়ে বেরোয় না। বসে থাকা গাড়ি ব্যবহার করেই এখন টাকা পৌঁছনোর চ্যালেঞ্জ উতরে দিচ্ছে তারা। কিন্তু অন্য একটি সংস্থার অভিযোগ, নোট-কাণ্ডের জেরে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তাদের নতুন কিছু গাড়ি আসতে সময় লাগছে। আর একটি সংস্থার এক কর্তার আবার দাবি, তাঁদের সব গাড়িই আসে মুম্বই থেকে। কেনার পরে সেগুলির শুধু মূল খোলটি রেখে প্রায় পুরোটাই নতুন করে সাজতে হয়। ফলে চাইলেও এখনই বাড়তি গাড়ি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brinks Arya Security Services ATM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE