বছর দুয়েক আগে হঠাৎই এক চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গিয়েছিল। চিকিৎসা করিয়েও তেমন ফল হয়নি। কার্যত এক চোখের দৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই মাধ্যমিকে প্রথম কুড়ির তালিকায় রয়েছে বারুইপুরের সাগ্নিক দাস। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৭। মেধা তালিকার বিচারে রাজ্যে সপ্তদশ স্থানে আছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই ছাত্র।
বারুইপুরের শাসনের বাসিন্দা সাগ্নিক। বাবা শুভাশিস দাস সাগরের একটি স্কুলে বাংলার শিক্ষক। তিনি জানান, ছোট থেকেই সাগ্নিকের বাঁ চোখের মণিতে সমস্যা রয়েছে। তবে তার জন্য কখনও ততটা সমস্যা হয়নি। বরাবরই মনোযোগী ছাত্র সে। পঞ্চম শ্রেণিতে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হয় সাগ্নিক। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে আসল সমস্যার শুরু। হঠাৎই বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে তার। সেই সঙ্গে মাথা ঘোরা, মাথা যন্ত্রণার মতো নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। প্রাথমিক ভাবে কলকাতার এক চক্ষু হাসপাতালে দেখানো হয়। পরে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের পরামর্শে এবং সহায়তায় হায়দরাবাদের এক চক্ষু হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়।
শুভাশিস বলেন, “কলকাতা, হায়দরাবাদ দু’জায়গাতেই চিকিৎসকদের দেখানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাঁ চোখের সঙ্গে মস্তিস্কের যোগাযোগ ঠিক মতো হচ্ছে না। তার থেকেই সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসা চলছে। তবে খুব বেশি ফল হচ্ছে না। গত দু’বছরের অনেকটা সময় চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে। জানি না উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কী
হবে।’’ সাগ্নিকের পরিচিতদের কথায়, এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও যখন পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে, চোখের সমস্যা না থাকলে নিশ্চয়ই আরও ভাল ফল করতে পারত।
সাগ্নিক বলে, “সমস্যা হয়। একটা চোখে প্রায়ই ঝাপসা দেখি। অন্য চোখ দিয়েই মূলত পড়াশোনা করি। পড়ার সময়ে চোখের উপর চাপ পড়লে সমস্যা বাড়ে।”
ইতিমধ্যে নরেন্দ্রপুরেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে সাগ্নিক। তার ইচ্ছা ডাক্তারি পড়ার। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ বলেন, “ছেলেটির একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। বিভিন্ন চিকিৎসক দেখানো হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও মনের জোর ধরে রেখে ভাল ফল করেছে। আশা করি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এই প্রতিবন্ধকতা কোনও বাধা হবে না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)