Advertisement
E-Paper

ঋণ খেলাপের চাপে জেরবার ব্যাঙ্ক

ভারতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ যা দাঁড়িয়েছে, তা নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির মাপের থেকেও বেশি! পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন, তা আরও বেশি করে স্পষ্ট হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি মার্চ-ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করতে শুরু করার পর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:৪০

ভারতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ যা দাঁড়িয়েছে, তা নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির মাপের থেকেও বেশি! পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন, তা আরও বেশি করে স্পষ্ট হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি মার্চ-ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করতে শুরু করার পর। সময়ে শোধ না-হওয়া ধারের জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে গিয়ে বিপুল নিট লোকসানের মুখ দেখেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ইউকো ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (৮৯৮ কোটি টাকা), দেনা ব্যাঙ্ক (৩২৬ কোটি)। লাভ অনেক কমেছে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক অন্ধ্র ব্যাঙ্কেরও।

তবে তারই মধ্যে অবশ্য শুক্রবার কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর দাবি, তিন দিক থেকে সুরক্ষার অগ্নিবলয় তৈরি থাকার দরুন লেম্যান ব্রাদার্সের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ভারতে নেই। অর্থাৎ, ঋণ খেলাপের চাপে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে না এ দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। ২০০৮ সালে আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বে যার চোখরাঙানি দেখা গিয়েছিল সে দেশের ব্যাঙ্ক লেম্যান ব্রাদার্সের দেউলিয়া ঘোষণার পরে।

একই সঙ্গে রাজন মনে করেন, ধীরে হলেও ঘুরতে শুরু করেছে ভারতের অর্থনীতির চাকা। ভাল বর্ষা হলে তাতে গতি বাড়বে অনেকখানি। অনেকে বলছেন, সেটি হলে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা কিছুটা হাল্কা হতে শুরু করবে ব্যাঙ্কগুলির। কারণ, অর্থনীতির হাল ফিরলে চাহিদা চড়বে। বাড়বে বিক্রিবাটা। তাই তখন ব্যাঙ্কের ধারের টাকা শোধ করা সুবিধাজনক হবে সংস্থাগুলির পক্ষে।

তবে অনুৎপাদক সম্পদের পাহাড় টপকাতে যে সবার আগে ওই সমস্যাকে কার্পেটের নীচ থেকে বার করে আনতে হবে, তা ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজন। দাওয়াই দিয়েছেন ব্যাঙ্কগুলির হিসাবের খাতা থেকে (ব্যালান্স শিট) অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা দ্রুত কমানোর। বলেছেন, পিছিয়ে আসা চলবে না তার জন্য টাকার সংস্থান করা থেকে। তাতে লোকসান হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।

এমনকী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারি অংশীদারি কমানো প্রসঙ্গেও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার বলেন, আগে আর্থিক ভিত মজবুত হলে, তবে তাতে আগ্রহ দেখাবে বেসরকারি লগ্নিকারী।

শুক্রবার গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করেছে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। তাদের মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬,৭৫১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩,২৩০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক অব বরোদারই। তাদের মোট ধারের ৯.৯৯% অনুৎপাদক সম্পদ। ইউকো ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তা ১৫.৪৩%, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ১১.৯৫%, এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ৯.৭৬% আর দেনা ব্যাঙ্কের ৯.৯%। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের নিট মুনাফাও আলোচ্য ত্রৈমাসিকে কমে হয়েছে ৭০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা অবশ্য বেড়ে হয়েছে ৩,৩৭৪.২ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির লাফিয়ে বাড়তে থাকা অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে গত দু’বছরে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও রাজন। এ নিয়ে আলোচনায় বসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি। ২০১৫ সালের শেষে অনুৎপাদক সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩.৬১ লক্ষ কোটি।

রাজনের ইঙ্গিত। বৃহস্পতিবারই বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তোপ দেগেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজনের বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি সামলানো ওঁর কম্ম নয়। ওঁকে শিকাগোতেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। সেখানে শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী থাকার ইঙ্গিত দিলেন রাজন। সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কিছু না-বললেও তাঁর মন্তব্য, কিছু কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও অনেক বাকি। উল্লেখ্য, গভর্নর হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরেই।

Bank Debt raghuram rajan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy