একে-অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে না-জেনে টাকা লেনদেনের পথ খুলে দিয়েছে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) অ্যাপ। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এনপিসিআই) তৈরি এই ব্যবস্থা তেমনই আয়ের নতুন রাস্তাও খুলে দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলির সামনে।
কোনও ব্যাঙ্কের ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহারের জন্য তার গ্রাহক হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে এক ব্যাঙ্কের গ্রাহক দ্বিতীয় একটি ব্যাঙ্কের অ্যাপ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও ব্যাঙ্কে টাকা পাঠাতে পারেন। আর এ ভাবে এক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অন্য ব্যাঙ্কের ঘরে টাকা যাওয়ার এই নকশাই হয়ে উঠছে ব্যাঙ্কগুলির নতুন আয়ের সূত্র।
কী ভাবে? এনপিসিআই সূত্রের খবর, ইউপিআই অ্যাপ মারফত এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে টাকা গেলে, তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে ‘ইন্টারচেঞ্জ ফি’ লেনদেন হয়। অনেকটা মোবাইল পরিষেবার ‘ইন্টার কানেকশন ইউসেজ চার্জ’-এর মতো। উল্লেখ্য, এক মোবাইল পরিষেবা সংস্থার গ্রাহক অন্য সংস্থার গ্রাহককে ফোন করলে, দ্বিতীয়টির পরিকাঠামোয় ফোন পৌঁছনোর জন্য প্রথম সংস্থাটি ওই চার্জ দেয়। ইউপিআই অ্যাপের ইন্টারচেঞ্জ ফি-র ধরন এর সঙ্গে হুবহু এক নয়। কিন্তু দু’য়ের মধ্যে কিছুটা মিল অবশ্যই আছে।
নতুন অ্যাপের হাত ধরে ব্যাঙ্কগুলির সামনে আয়ের রাস্তা কী ভাবে খুলছে, উদাহরণ দিলে তা বোঝা কিছুটা সহজ হবে। ধরা যাক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের (ইউবিআই) গ্রাহক অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ইউপিআই-অ্যাপ মারফত এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের গ্রাহককে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ইউবিআই হল রেমিটার ব্যাঙ্ক। আর এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক বেনিফিসিয়ারি। এনপিসিআই সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে ইউবিআইয়ের কাছ থেকে ইন্টারচেঞ্জ ফি (২৫ হাজার টাকার কম হলে এক টাকা আর ২৫ হাজারের বেশি হলে ৫ টাকা) পাবে এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক। ‘ইউপিআই সুইচিং ফি’ হিসেবে আবার এনপিসিআই-কে প্রতি লেনদেনের জন্য ৫০ পয়সা করে দেবে ইউবিআই। সূত্রের খবর, এর একটা অংশ পাবে এলাবাহাদ ব্যাঙ্কও। যদিও এনপিসিআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা স্বরজিৎ মণ্ডলের দাবি, প্রথম ছ’মাস ‘সুইচিং ফি’ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে নিজেদের ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহার করতে দিয়ে আয় করবে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কও। ইউবিআই লেনদেন পিছু ৫০ পয়সা দেবে তাদের। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের দাবি, এখনও পর্যন্ত তাদের অ্যাপ ‘অ্যাক্সিস-পে’ দিয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি লেনদেন হয়েছে। মোট অঙ্ক ৫.৪ কোটি টাকারও বেশি।
ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে বা রেস্তোরাঁর বিল মেটালেও আয় হয় ব্যাঙ্কগুলির। যেমন, রোস্তোরাঁটি হয়তো ইয়েস ব্যাঙ্কের অ্যাপ ব্যবহার করছে। আর ইউবিআইয়ের কোনও গ্রাহক ‘অ্যাক্সিস-পে’ মারফত বিল মেটাবেন। এ ক্ষেত্রে ইউবিআই ‘ইস্যুয়ার ব্যাঙ্ক’। আর ইয়েস ব্যাঙ্ক ‘অ্যাকুয়ারিং ব্যাঙ্ক’। এই লেনদেনে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের কাছে ফি বাবদ ৫০ পয়সা করে পাবে। লেনদেনের অঙ্ক দু’হাজার টাকা পর্যন্ত হলে, তার ০.৪০% ইয়েস ব্যাঙ্ক ইন্টারচেঞ্জ ফি হিসেবে ইউবিআই-কে দেবে। লেনদেন দু’হাজারের বেশি হলে, দেবে ০.৬৫%। সুইচিং-ফি হিসেবে ইউবিআই এনপিসিআই-কে ৫০ পয়সা করে দেবে।
কিন্তু তা হলে ইয়েস ব্যাঙ্কের লাভ কী? এনপিসিআইয়ের বক্তব্য, এ ধরনের লেনদেনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে (এ ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ) তারা এমনিতেই কমিশন পায়। তার উপর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিল মেটাতে যত সময় লাগত, অ্যাপ দিয়ে তার চেয়ে দ্রুত লেনদেন সম্পূর্ণ হওয়ায় তাদের সেই কমিশনের মোট অঙ্ক বাড়বে। সেই সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা সংস্থার সেখানে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলারও সম্ভাবনা। ওই অ্যাকাউন্ট বাড়লেও লাভ ব্যাঙ্কের।
এই সমস্ত খরচের কতটা গ্রাহককে বইতে হবে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে ভবিষ্যতে এটিএম বা এসএমএস পরিষেবার মতো ‘রেমিটার ব্যাঙ্ক’ কিছু চার্জ নিতে পারে। এনপিসিআইয়ের দাবি, চালু হলেও তার অঙ্ক খুব বেশি হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy